স্টোকস এবং ম্যাকালাম ফুটছেন উত্তেজনায় ছবি টুইটার
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম দল হিসাবে টানা তিনটি ম্যাচে প্রায় ৩০০-র কাছাকাছি রান তাড়া করে জেতা। তা-ও আবার টেস্ট ক্রিকেটের মতো ঠুকঠুক করে নয়। টি-টোয়েন্টি বা এক দিনের ক্রিকেটের মতো আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে। নিল ওয়াগনারের মতো জোরে বোলারকে রিভার্স সুইপ করে জো রুটের মারা ছয়। ছন্দে থাকা ট্রেন্ট বোল্টকে আক্রমণ করে জনি বেয়ারস্টোর মারা একের পর এক ওভার বাউন্ডারি। গত এক মাসে ইংল্যান্ডের টেস্ট দলে এমন সব বদল এসেছে, যা অনেকে বিশ্বাসই করতে পারছেন না। ইংরেজ সমর্থকরা চোখ কচলে দেখছেন, যা ঘটছে সব সত্যি তো!
বিশ্বাস না হলেও এটাই সত্যি! আসলে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বদলে গিয়েছে। বদলে দিয়েছেন দু’জন। ব্রেন্ডন ম্যাকালাম এবং বেন স্টোকস। কোচ এবং অধিনায়ক এক বিন্দুতে থাকলে যে কোনও দলেই সাফল্য আসে। ইংল্যান্ডেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। মাত্র কয়েকটি দিনের মধ্যে গোটা দলের মানসিকতায় এমন বদল ঘটিয়ে দিয়েছেন এঁরা দু’জনে, যে ইংরেজদের দেখলেই এখন ঠকঠক কাঁপুনি শুরু হয়ে গিয়েছে। নিউজিল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর এ বার সামনে রোহিত শর্মার ভারত।
ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে ইদানীং একটা কথা বেশ প্রচলিত হয়েছে, ‘বাজবল’। এক শব্দে এর মানে বোঝা যাবে না। ‘বাজ’ ম্যাকালামের ডাকনাম, যিনি আগ্রাসী ক্রিকেট পছন্দ করেন। তাই বাজবলের অর্থ হচ্ছে আগ্রাসী, হার-না-মানা, ভয়ডরহীন ক্রিকেট। দায়িত্ব নিয়েই সে কথা দলের প্রত্যেকের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন ম্যাকালাম। ফলও পাওয়া যাচ্ছে হাতেনাতে। নীচের কয়েকটি উদাহরণের দিকে চোখ বোলালেই ব্যাপারটা বোঝা যাবে:
উদাহরণ ১: লর্ডসে ঠিক এক বছর আগে নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস ডিক্লেয়ার করে ইংল্যান্ডের সামনে ২৭৩ রানের লক্ষ্যমাত্রা রেখেছিল। হাতে ছিল ৭৫ ওভার। রুট এবং কোচ ক্রিস সিলভারউড ঝুঁকি নেওয়ার রাস্তাতেই যাননি। টেস্টের শেষ দিনের খেলা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন অধিকাংশ দর্শক। ট্রেন্ট ব্রিজে এ বারের সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। প্রতিপক্ষ সেই নিউজিল্যান্ড। এ বার ৭২ ওভারে লক্ষ্য ২৯৯। ৭২ তো দূর, ৫০ ওভারেই উঠে গেল সেই রান। তাণ্ডব চালালেন বেয়ারস্টো।
There was only ever one way this series was going to end!
— England Cricket (@englandcricket) June 29, 2022
#ENGvNZ @lv_cricket #BestLovedMoments pic.twitter.com/NC35k2bLmS
উদাহরণ ২: ট্রেন্ট বোল্টের দুরন্ত সুইংয়ে প্রথম ইনিংসে নড়ে গিয়েছিলেন রুট, পোপরা। ২১ রানে চলে যায় চার উইকেট। সেখান থেকে জেমি ওভার্টন এবং বেয়ারস্টোর দাপটে ইংল্যান্ড পৌঁছে যায় ভাল জায়গায়। ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে থাকা সত্ত্বেও খুইয়ে বসে নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় টেস্টের পর আবার শতরান করেন বেয়ারস্টো। এ বারও টি-টোয়েন্টির ধাঁচে। নিউজিল্যান্ডের সাজানো বাগান তছনছ হয়ে গেল তাঁর ব্যাটিংয়ে। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৫ ওভারে ২৯৬ তাড়া করে জয়। সেখানেই ওয়াগনারকে রিভার্স সুইপ করে মারা রুটের ছক্কা।
আরও কিছু সংখ্যা দিলে বিষয়টি বোঝা যেতে পারে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিনটি টেস্টে ইংল্যান্ডে প্রতি ওভারে গড়ে ৪.৫ রান করেছে। লিডসে তৃতীয় টেস্টে ২২২.৫ ওভারে নিউজিল্যান্ড তুলেছে ৬৫৫ রান। ওভার পিছু রানের সংখ্যা ২.৯৪। টেস্টের নিরিখে এই পরিসংখ্যান বেশ ভাল। কিন্তু ইংল্যান্ডের দিকে তাকালে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। তারা ৬৫৬ রান করতে নিয়েছে মাত্র ১২১.২ ওভার। অর্থাৎ প্রতি ওভারে রান ৫.৪১। এক দিনের ক্রিকেট না টেস্ট, গুলিয়ে যেতে বাধ্য। সিরিজে কোনও ব্যাটারের স্ট্রাইক রেট ৫০-এর নীচে যায়নি। রুটের মতো টেস্টের আদর্শ ক্রিকেটারও ৭৪.১৫ স্ট্রাইক রেট রেখে রান করেছেন।
ব্যাপারটা অতি আগ্রাসন হয়ে যাচ্ছে না? এই ফর্মুলা টিকবে তো? কোচ ম্যাকালাম বলেছেন, “আশা করি এই মনোভাব আমরা আগামী দিনেও দেখাতে পারব। একমাত্র তা হলেই বুঝতে পারব কোথায় গিয়ে আমাদের থামতে হবে। যেখানে গিয়ে মনে হবে আর এগোনো যাবে না, সেখানে গিয়ে থেমে যাব। সাদা বলের ক্রিকেট খেলতে গিয়ে আমরা দেখেছি কত দূর পর্যন্ত যাওয়া যায়। টেস্টেও সেটা দেখতে চাই। জয়ের জন্য নতুন নতুন পন্থা আনতে হবে।”
ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে স্বপ্নের জুন মাস কেটেছে। ভোলবদলের জুন মাস। এই ইংল্যান্ডের সাহসিকতা অন্য মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে। এই দল কঠিনতম পরিস্থিতিতে পড়লেও পিছিয়ে আসে না। বিপক্ষের আগ্রাসনের সামনে ভয়ে গুটিয়ে যায় না। বড় লক্ষ্যের সামনে পড়লে হতাশাজনক ড্রয়ের দিকে এগোয় না। বিপক্ষ আগ্রাসন দেখালে চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস রাখে।
দলের ভোলবদলের পিছনে যে কোনও রকেট বিজ্ঞান নেই, এটা স্বীকার করেছেন অধিনায়ক স্টোকস। সিরিজ জয়ের পর বলেছেন, “সত্যিই ভাবতে পারছি না এত তাড়াতাড়ি সব কী করে বদলাল। দায়িত্ব নেওয়ার সময় মোটেই ফলের কথা ভাবিনি। চেয়েছিলাম টেস্ট প্রতি দলের যে মানসিকতা রয়েছে সেটা বদলাতে। আমার ভাবনা ছিল, মজা করে খেলো। দেশের হয়ে খেলতে নেমেছ, এটা ভেবেই গর্ব বোধ করো। তা হলে ফলাফল আপনিই ভাল হবে। এত দ্রুত সেটা হবে ভাবতে পারিনি। আমি খুব অল্প কাজই করতে পেরেছি। যাবতীয় ধন্যবাদ প্রাপ্য ব্রেন্ডনের (ম্যাকালাম)। ও এসেই গোটা দলের ভোল বদলে দিয়েছে।”
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের টেস্টের সম্প্রচারকারী চ্যানেল সম্প্রতি একটি বিজ্ঞাপন বার বার প্রচার করছে, যার ক্যাচলাইন হল, ‘আব হোগি পুরি ধুলাই’। ধোলাই তো হবে। তবে কে কাকে ধোলাই করবে, সেটাই এখনও স্পষ্ট নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy