২০০৫ সালে দেওধর ট্রফিতে পশ্চিমাঞ্চলের হয়ে খেলার সুযোগ পান রোহিত। অভিষেকেই ১৪৩ রান করেন তিনি। ২০০৬ সালে ভারত এ দলে সুযোগ পান। সেই বছরই রঞ্জিতে মুম্বইয়ের হয়ে খেলার সুযোগ পান এই ডান হাতি ব্যাটার। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল খেলার কারণে ২০০৭ সালে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুযোগ পান রোহিত।
৩৫-এ পা দিলেন রোহিত শর্মা ফাইল চিত্র
স্কুলের মাইনে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। কিন্তু ছোট থেকে ক্রিকেট ভালই খেলতেন। তাঁর ব্যাটিং প্রতিভা দেখে তাঁকে বৃত্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুল দলে অবশ্য প্রথমে ব্যাট করতে নামতেন আট নম্বরে। ব্যাটারের থেকে অফ স্পিনার হিসাবে বেশি পরিচিতি ছিল তাঁর। কিন্তু এক ম্যাচে ওপেনার অসুস্থ থাকায় শুরুতে ব্যাট করতে নামেন তিনি। সেই ম্যাচে করেছিলেন শতরান। তার পরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন তাঁর নামের পাশে সব ধরনের ক্রিকেট মিলিয়ে ৪১টি শতরান। শনিবার ৩৫ বছর হল ভারতীয় দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মার।
১৯৮৭ সালের ৩০ এপ্রিল মহারাষ্ট্রের নাগপুরের এক দরিদ্র পরিবারে রোহিতের জন্ম। বাবা গুরুনাথ শর্মা একটি পরিবহণ সংস্থায় কাজ করতেন। আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় রোহিত ছোটবেলার বেশির ভাগটা কাটিয়েছেন মামাবাড়িতে। সেখান থেকেই স্বামী বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভর্তি হন রোহিত। স্কুল দলের কোচ ছিলেন দীনেশ লাড। প্রাথমিক ভাবে রোহিত ছিলেন স্পিনার। কিন্তু তাঁর ব্যাটিং প্রতিভা দেখে তাঁকে সে দিকে বেশি মন দিতে বলেন কোচ। আর্থিক কারণে স্কুলের মাইনে দিতে পারছিল না রোহিতের পরিবার। কিন্তু তাঁর ব্যাটিং প্রতিভা দেখে তাঁকে বৃত্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। টানা চার বছর স্কুল থেকে বৃত্তি পান তিনি।
স্কুল ক্রিকেটের পরে ২০০৫ সালে দেওধর ট্রফিতে পশ্চিমাঞ্চলের হয়ে খেলার সুযোগ পান রোহিত। অভিষেকেই ১৪৩ রান করেন তিনি। ২০০৬ সালে ভারত এ দলে সুযোগ পান। সেই বছরই রঞ্জিতে মুম্বইয়ের হয়ে খেলার সুযোগ পান এই ডান হাতি ব্যাটার। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল খেলার কারণে ২০০৭ সালে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুযোগ পান রোহিত। তবে ভারতীয় দলে তাঁর পরিচিতি হয় সে বছর টি২০ বিশ্বকাপে। যুবরাজ সিংহের চোট থাকায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে সুযোগ পান তিনি। ৫০ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলেন। প্রতিযোগিতার ফাইনালেও ভাল খেলেছিলেন রোহিত।
টি২০ বিশ্বকাপে ভাল খেলার সুবাদে ভারতের এক দিনের দলে নিয়মিত সুযোগ পেতে থাকেন রোহিত। কিন্তু শুরুর দিকে একের পর এক ম্যাচে ব্যর্থ হন। বিশেষজ্ঞরা রোহিতের প্রতিভার প্রশংসা করলেও মাঠে তা দেখা যাচ্ছিল না। ফলে ২০১১ সালের বিশ্বকাপের আগে দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। তাতে হতাশ হননি রোহিত। ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফর্ম করছিলেন। ফলে বিশ্বকাপের পরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দলে সুযোগ পান রোহিত। সেই সিরিজে ভাল খেলেন তিনি।
এই সময়ই ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনির একটি সিদ্ধান্ত বদলে দেয় রোহিতের ক্রিকেট জীবন। সেই সময় ভারতীয় দলে ওপেনারের সমস্যা দেখা দেওয়ায় রোহিতকে দিয়ে ওপেন করতে পাঠান ধোনি। তার পর থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তাঁর সঙ্গে শিখর ধবনের জুটি সফল হয়। ধীরে ধীরে ভারতের টি২০ দলেরও ওপেনার হন রোহিত। টেস্ট দলে জায়গা পাকা করতে বেশ কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হয় রোহিতকে। গত কয়েক বছর ধরে ভারতের টেস্ট দলেও ওপেনারের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মতো আইপিএলেও সফল রোহিত। প্রথমে খেলতেন ডেকান চার্জার্সে। সেখানে সাফল্য পাওয়ার পরে ২০১১ সালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স কেনে রোহিতকে। ২০১৩ সালে সেই দলের অধিনায়ক হন। তার পর থেকে পাঁচ বার আইপিএল জিতেছেন রোহিত। সব থেকে সফল অধিনায়ক তিনি। নেতৃত্বের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও দলের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ যোগদান দিয়েছেন তিনি।
ব্যাট হাতে ক্রমেই নিজের জাত চিনিয়েছেন রোহিত। তিনি বিশ্বের এক মাত্র ক্রিকেটার যাঁর এক দিনের ম্যাচে তিনটি দ্বিশতরান রয়েছে (সর্বোচ্চ ২৬৪)। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পাশাপাশি আইপিএলেও শতরান করেছেন তিনি। ২০১৯ সালের এক দিনের বিশ্বকাপে পাঁচটি শতরান করেন রোহিত। বিশ্বকাপে শতরানের সংখ্যায় সচিন তেন্ডুলকরকে ছুঁয়েছেন (দু’জনেরই ৬টি শতরান) তিনি।
৪৫ টেস্টে ৪৬.১৩ গড়ে ৩১৩৭ রান করেছেন রোহিত। আটটি শতরান রয়েছে। সর্বোচ্চ ২১২ রান। এক দিনের ক্রিকেটে ২৩০ ম্যাচে ৯২৮৩ রান করেছেন রোহিত। শতরান ২৯টি। গড় ৪৮.৬০। সর্বোচ্চ ২৬৪। টি২০-তে ১২৫ ম্যাচে ৩৩১৩ রান রয়েছে রোহিতের। ৩২.১৭ গড়ে রান করেছেন তিনি। রয়েছে চারটি শতরান। সর্বোচ্চ ১১৮। আইপিএলে ২২১টি ম্যাচে ৫৭৬৪ রান করেছেন রোহিত। সেখানেও একটি শতরান রয়েছে তাঁর। সর্বোচ্চ ১০৯।
ওপেনারের পাশাপাশি নতুন দায়িত্ব এসেছে রোহিতের কাঁধে। গত বছর টি২০ বিশ্বকাপের পরেই ভারতের ছোট ফরম্যাটের নেতৃত্ব ছাড়েন বিরাট কোহলী। অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় রোহিতকে। তার পরে এক দিনের ক্রিকেটের অধিনায়ক করা হয় রোহিতকে। মাস খানেক পরে সাদা বলের ক্রিকেটের নেতৃত্বও যায় রোহিতের কাঁধে। নেতৃত্ব পাওয়ার পরে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে সফল রোহিত। তবে সামনেই কঠিন পরীক্ষা তাঁর। অক্টোবর মাসে অস্ট্রেলিয়ায় টি২০ বিশ্বকাপ। রোহিতের পূর্বসুরি বিরাট দেশকে কোনও আইসিসি ট্রফি দিতে পারেননি। তাই অধিনায়ক হিসাবে দেশকে বিশ্বকাপ এনে দেওয়া রোহিতের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy