আইপিএল ও দেশের জার্সিতে রোহিত শর্মা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জয়, না কি ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে আইপিএল— কোন প্রতিযোগিতা বেশি কঠিন? এক দিনের বিশ্বকাপ রয়েছে এই বছর। চার বছর অন্তর হওয়া এই প্রতিযোগিতা এ বার ভারতে হবে। সেই প্রতিযোগিতার দিকে তাকিয়ে থাকবে গোটা বিশ্ব। বিভিন্ন দেশ ঝাঁপাবে সেরাটা দেওয়ার জন্য। বিশ্বকাপ জিততে মরিয়া হয়ে উঠবে সেই সব দেশ। অন্য দিকে, প্রতি বছর হওয়া আইপিএলে বিভিন্ন দেশের ক্রিকেটাররা খেলেন। সেখানে দেশের হয়ে খেলার আবেগ না থাকলেও রয়েছে দু’মাস ধরে নিজেকে কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলে দেওয়ার সুযোগ।
দেশ বনাম আইপিএল লড়াই চলছে গত কয়েক বছর ধরে। কোনটা বেশি কঠিন? অনেকেই মনে করেন, আইপিএল অনেক বেশি কঠিন। দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জেতার থেকে দলকে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন করানো শক্ত। এ ক্ষেত্রে প্রথম যুক্তি, প্রতিযোগিতার মান আইপিএলে অনেক উন্নত। কারণ, সেখানে খুব দুর্বল দল বলে কিছু নেই। যে দশটি দল খেলে, তাদের মধ্যে তফাত উনিশ-বিশ। কিন্তু বিশ্বকাপে এমন দু-তিনটি দল থাকে, যারা বিশ্বকাপ বলেই খেলার সুযোগ পায়। তাদের নীচের সারির প্রতিযোগিতা থেকে যোগ্যতা অর্জন করে উঠে আসতে হয়। সেই কারণেই বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, আফগানিস্তানের মতো দলগুলিকে পাওয়া যায়। গত এক দিনের বিশ্বকাপে আফগানিস্তান একটি ম্যাচও জিততে পারেনি। ফুটবলের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। অনেকেই মনে করেন, ইংল্যান্ড, স্পেন, ইটালির মতো দেশের ঘরোয়া লিগ অনেক বেশি কঠিন। বিশ্বকাপে তিন-চারটে ‘ছোট’ দল থাকলেও ঘরোয়া লিগে তা থাকে না।
দ্বিতীয় যুক্তি, আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে অনেক বেশি ম্যাচ খেলতে হয়। প্রায় দু’মাস ধরে চলা প্রতিযোগিতায় ১৭টি ম্যাচ খেলে এ বার চেন্নাই সুপার কিংস চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। একমত সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আইপিএল জেতা কিন্তু খুব সোজা নয়। যথেষ্ট কঠিন একটা প্রতিযোগিতা। বিশ্বকাপ জেতার থেকেও কঠিন আইপিএল জয়। প্লে-অফে উঠতে ১৪টা ম্যাচ খেলতে হয়। বিশ্বকাপে চার-পাঁচটা ম্যাচ খেললেই সেমিফাইনালে পৌঁছে যাওয়া যায়। আইপিএলে চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে ১৭টি ম্যাচ খেলতে হয়।”
রবিবার বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে হেরে যায় ভারত। রোহিত শর্মার দল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২০৯ রানে হারে। এর পরেই রোহিতের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়। কিন্তু আইপিএলে সাফল্যের কারণেই অধিনায়ক রোহিতকে অনেক নম্বর দিচ্ছেন সৌরভ। এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “রোহিতের উপর আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এবং ও পাঁচ বার আইপিএল জিতেছে।’’
অনেকে আবার এই তুলনায় যেতে চান না। তাই তাঁরা মানতে পারছেন না যে, বিশ্বকাপের থেকে আইপিএল কঠিন। যেমন অরুণ লাল। বাংলার রঞ্জীজয়ী প্রাক্তন ক্রিকেটার আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “বিশ্বকাপ অনেক বেশি কঠিন। আইপিএলে ২০০ ম্যাচ জিতে নিলেও বিশ্বকাপের চার-পাঁচটা ম্যাচ জেতা কঠিন হয়ে যায়। দুটোর তুলনা করাই যায় না। সেই জন্যই তো ওটা বিশ্বকাপ। আইপিএলে কোনও দেশ খেলে না, ফ্র্যাঞ্চাইজির দল খেলে। আইপিএল একটা ঘরোয়া প্রতিযোগিতা। তাই তুলনা করা সম্ভব নয়।”
২০০৮ সাল থেকে শুরু হয়েছে আইপিএল। লিগ পর্বে ১৪টি ম্যাচ খেলতে হয়। তার পর প্লে-অফ। ১৯৭৫ সাল থেকে শুরু হওয়া এক দিনের বিশ্বকাপ হয় চার বছর অন্তর। পরে ২০০৭ সাল থেকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও শুরু হয়েছে। সেটি হয় দু’বছর অন্তর। টেস্ট ক্রিকেটকে আকর্ষণীয় করতে ২০১৯ সাল থেকে শুরু হয় বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। দু’বছর ধরে একাধিক টেস্ট সিরিজ় খেলা হয়। লিগ পর্ব চলে। সেখানে শীর্ষে থাকা দুই দলের মধ্যে ফাইনাল খেলা হয়। দু’বছর অন্তর একটি করে ফাইনাল হয়।
অনেক ক্রিকেটার আইপিএলের থেকে অনেক বেশি প্রাধান্য দেন দেশের হয়ে খেলাকে। অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক যেমন বলেন, “আইপিএল খেলা নয়, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোও আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে নামলে নিজের সেরাটাই দিতে চাই। তার জন্যে সঠিক ভাবে প্রস্তুত হওয়া আমার কাজ। আবার আইপিএল খেলতে আমার কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু ছোটবেলা থেকে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সেরা ক্রিকেট খেলা আমার লক্ষ্য। যে ফরম্যাটেই খেলি না কেন।”
শুধু স্টার্ক নন, অনেক ক্রিকেটারই আছেন যাঁরা আইপিএলের আগে দেশকে গুরুত্ব দেন। আইপিএলের মাঝে দেশের খেলা থাকলে চলে যান। কখনও আইপিএলের পরে থাকা কোনও খেলাকে গুরুত্ব দিতে আইপিএল থেকে বিরতি নেন। যেমন বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে অস্ট্রেলিয়া দলে খেলা বেশির ভাগ ক্রিকেটারই আইপিএলে অংশ নেননি। প্যাট কামিন্স নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। স্টার্ক, মার্নাস লাবুশানে, নাথান লায়ন, স্টিভ স্মিথের মতো ক্রিকেটারেরাও আইপিএলে ছিলেন না। আইপিএল খেলেছিলেন শুধু ডেভিড ওয়ার্নার এবং ক্যামেরন গ্রিন। ইংল্যান্ডের অনেক ক্রিকেটারই আইপিএল খেলতে চান না। তাঁরা দেশের হয়ে খেলাকেই বেশি গুরুত্ব দেন। টেস্ট অধিনায়ক বেন স্টোকস যেমন চেন্নাই সুপার কিংস দলে থাকলেও মাত্র দু’টি ম্যাচ খেলেছিলেন। তার পর থেকে চোটের কারণে বিশ্রাম নেন তিনি। অ্যাশেজের আগে যদিও সুস্থ হয়ে গিয়েছেন স্টোকস। পাঁচ দিনের পাঁচ ম্যাচের খাটুনির আগে বিশ্রাম প্রয়োজন ছিল তাঁর। আইপিএলের মাঝে সেটাই নিয়ে নিলেন বলে মত অনেকের।
দর্শকদের বিচারে কোন প্রতিযোগিতা এগিয়ে? এ বারের আইপিএল দেখানো হয় জিয়োসিনেমাতে। বিনামূল্যে আইপিএল দেখা গিয়েছিল। সেই প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলেছিল ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস এবং হার্দিক পাণ্ড্যের গুজরাত টাইটান্স। জিয়োসিনেমার তথ্য অনুযায়ী তিন কোটি ২০ লক্ষ দর্শক সেই ফাইনাল দেখেছিলেন। ২০১৯ সালে হটস্টারে দেখা গিয়েছিল ভারত বনাম নিউ জ়িল্যান্ড এক দিনের বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল। সেই ম্যাচ দেখেছিলেন দু’কোটি ৫৩ লক্ষ দর্শক। সেই রেকর্ড ভেঙে যায় এ বারের আইপিএলের ফাইনালে। কিন্তু একটা বিষয় অবশ্যই মনে রাখা দরকার যে, হটস্টারে ভারতের ম্যাচ দেখতে খরচ করতে হয়েছিল। জিয়োসিনেমাতে এ বারে আইপিএল দেখা গিয়েছিল বিনামূল্যে। সেই কারণে এ বারের বিশ্বকাপের আগে হটস্টার জানিয়ে দিয়েছে যে খেলা দেখতে কোনও খরচ করতে হবে না। ২০২৩ সালে ভারতের ম্যাচের সময় তাই আইপিএলের রেকর্ড ভেঙে গেলে অবাক হওয়ার থাকবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy