নীরজ যে সময়ের কথা বলেছিলেন, তখন বোর্ডের দায়িত্বে ছিলেন বিনোদ রাইয়ের নেতৃত্বাধীন কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স। — ফাইল চিত্র
দুর্নীতি নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে কোনও তাপ-উত্তাপই ছিল না। বোর্ডের এক শীর্ষকর্তার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও বোর্ডের বাকি কর্তারা নিরুত্তাপ ছিলেন। এমনকি চেষ্টা করা হয়েছিল তা ধামাচাপা দেওয়ারই। সম্প্রতি প্রাক্তন পুলিশ কর্তা নীরজ কুমারের লেখা বইয়ে এমনই বিস্ফোরক সব তথ্য উঠে এসেছে। বোর্ডের দুর্নীতি-বিরোধী শাখার প্রধান ছিলেন নীরজ। বোর্ডে কাটানো সেই সময় নিয়ে তিনি এমন কিছু কথা লিখেছেন, যা চমকে দিতে পারে অনেককেই।
দুর্নীতি আটকানোর প্রসঙ্গে নীরজ বলেছেন, “বোর্ডের কেউ জানতে চায়নি যে আমরা কী করছি, আমাদের সমস্যা কোথায়। অর্থ আমাদের সামনে একটা বাধা ছিল। কিন্তু বোর্ডের কেউ সে ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে এগিয়ে আসেনি। ২০১৩-র ম্যাচ গড়াপেটা এবং তার পরে দুর্নীতি রোধে আরও বেশি জোর দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু বোর্ড সে ব্যাপারে মাথাই ঘামায়নি। বড্ড তাড়াতাড়ি সবাই সব কিছু ভুলে গেল।’’
নীরজ যে সময়ের কথা বলেছিলেন, তখন বোর্ডের দায়িত্বে ছিলেন বিনোদ রাইয়ের নেতৃত্বাধীন কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স। বোর্ডের সিইও ছিলেন রাহুল জোহরি, যাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। দুর্নীতির ব্যাপারটি বোর্ডের নজরে এনেছিল ‘স্পোর্টসরাডার’ নামে বিশ্বব্যপী দুর্নীতি-বিরোধী একটি সংস্থাও। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। নীরজ লিখেছেন, “একটা সময় আমি বুঝতে পেরেছিলাম অকারণে সময় নষ্ট হচ্ছে। দেওয়াল লিখন পড়তে অসুবিধা হয়নি। দুর্নীতি নিয়ে বোর্ড পাত্তাই দিতে চায়নি।”
নীরজের দাবি, রাজস্থানে বেআইনি একটি লিগের ব্যাপারে বোর্ডকর্তাদের জানানো হয়েছিল। কিন্তু দুর্নীতি-বিরোধী সংস্থার কাজের তারিফ করা হয়নি। সেটি বন্ধ করার ব্যাপারেও গাফিলতি ছিল, কারণ আয়োজক ছিলেন রাজস্থান ক্রিকেট সংস্থার সহ-সভাপতি এবং রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি। আইপিএলেও দিল্লি ডেয়ারডেভিলস এবং গুজরাট লায়ন্সের (অধুনালুপ্ত) একটি ম্যাচে জুয়াড়িদের দাবি অনুযায়ী পিচে জল দিয়ে তা ধীরগতির করার চেষ্টা হয়েছিল।
নীরজ জানিয়েছেন, সিইও রাহুল জোহরির ‘যোগাযোগ’ ছিল অনেক দূর। তাই যৌন হেনস্থার মতো অভিযোগ করা হলেও কোনও সমস্যা হয়নি। তিনি লিখেছেন, “সিইও-র বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ যে ভাবে সামলেছিলেন বিনোদ রাই, তাতে দেশের বেশির ভাগ মানুষেরই আইএএসদের উপরে বিশ্বাস উঠে যাবে। কিন্তু তিনি কেন সেই কাজ করেছিলেন? শুনেছি জোহরি এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর খুব কাছের লোক ছিলেন। সেই মন্ত্রী নাক গলাতেন বোর্ডের কাজেও। তার জন্যেই কি জোহরিকে রক্ষা করা হয়েছে?”
জোহরির সঙ্গে সেই মন্ত্রীর এমনই সম্পর্ক ছিল, যে অনেকে তাঁদের ‘বাবা-ছেলের সম্পর্ক’ বলতেন। সেই বাবা কোনও ভাবেই ছেলের সম্পর্কে কিছু শুনতে চাইতেন না। সে যতই গুরুতর হোক না কেন। ২০১৮-র নভেম্বরে আবার সিইও-র দায়িত্বে পুনর্বহাল করা হয় জোহরিকে। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ‘মিথ্যা’, ‘ভিত্তিহীন’ এবং ‘সাজানো’ বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
দুর্নীতি-বিরোধী কমিটির কোনও রিপোর্টই পাত্তা দিতেন না বিনোদ। কোনও ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। নীরজ বার বার জানালেও লাভ হয়নি। পুরোপুরি উপেক্ষা করা হত। হরিয়ানার জেলা দলে নির্বাচনের বিনিময়ে যৌন সম্পর্কের প্রস্তাব দেওয়ার কথা বোর্ডকে জানানো হলেও কোনও উত্তর আসেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy