চলতি মরসুমে ঘরের মাঠে সমস্যায় কলকাতা নাইট রাইডার্স। ইডেন গার্ডেন্সে তিনটি ম্যাচের মধ্যে দু’টি হেরেছে তারা। মরসুমের পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে তিনটি হেরে পয়েন্ট তালিকায় ছ’নম্বরে রয়েছে কেকেআর। ইডেনে লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে অসহায় দেখিয়েছে কেকেআরের বোলিং আক্রমণকে। পাশাপাশি রান তাড়া করতে নেমে জয়ের পরিস্থিতি থেকে হারতে হয়েছে তাদের। এই হার অনেক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে কেকেআর ম্যানেজমেন্ট ও অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানের সামনে। তেমনই পাঁচটি প্রশ্ন তুলে ধরল আনন্দবাজার ডট কম।
১) নারাইনকে দিয়ে পুরো চার ওভার বল করানো হল না কেন?
ইডেনে কেকেআরের বোলারদের বিরুদ্ধে হাত খুলে খেলেছেন লখনউয়ের ব্যাটারেরা। ২৩৮ রান করেছে তারা। কেকেআরের বোলারদের মধ্যে সুনীল নারাইন তিন ওভার করেছেন। ৩৮ রান দিয়েছেন তিনি। উইকেট পাননি। কিন্তু যখন নিকোলাস পুরান একের পর এক বড় শট খেলছেন তখন নারাইনকে দিয়ে চার ওভার করানো কি উচিত ছিল না রাহানের?
কেকেআরের সবচেয়ে অভিজ্ঞ বোলার নারাইন। পাশাপাশি পুরানের সঙ্গে অনেক ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের ব্যাটারকে আটকে রাখার কিছু মন্ত্র নিশ্চয়ই তিনি জানেন। পুরান যে ভাবে শেষ দিকে হাত খুলে খেলেছেন তা কিছুটা হলেও আটকাতে পারতেন নারাইন। তাঁর বলের বাউন্স বেশি হয়। পুরান তখন প্রতিটি বলে চালাচ্ছিলেন। ব্যাটে-বলে ঠিকমতো না লাগলে আউট হওয়ারও সুযোগ থাকত। বাকিরা পুরানের সামনে কূল পাচ্ছিলেন না। কিন্তু নারাইনের এক ওভার রেখে দিলেন রাহানে। কী ভেবে তিনি সেই সিদ্ধান্ত নিলেন তা অজানা।
২) রাসেলকে এত পরে বল করতে দেওয়া হল কেন?
কেকেআরের পেসারেরা প্রথম থেকেই রান দিচ্ছিলেন। স্পেনসার জনসন, বৈভব অরোরা, হর্ষিত রানাদের বিরুদ্ধে কোনও সমস্যা হচ্ছিল না মিচেল মার্শ ও এডেন মার্করামের। সেই সময় দরকার ছিল বলে বৈচিত্র। একটা বাউন্সার, স্লোয়ার বা কাটার তাঁদের সমস্যায় ফেলতে পারত। সেটা কেকেআরের পেসারেরা করেননি। সেই সময় দরকার ছিল রাসেলের। রাহানে সেখানেও ভুল করলেন। ১৬তম ওভারে রাসেলকে বল দিলেন। প্রথম ওভারেই তিনি মার্শকে আউট করলেন। তবে তত ক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
রাসেলের প্রধান শক্তি তাঁর বৈচিত্র। বলের গতির হেরফের করেন। বাউন্সার ভাল দেন। তাঁর উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। আগে অনেক ম্যাচে তা দেখা গিয়েছে। এখন বয়সের ভারে পুরো চার ওভার বল করা তাঁর পক্ষে কঠিন। দু’ওভারই হয়তো তিনি করতেন। কিন্তু পাওয়ার প্লে-র পরেই রাসেলের হাতে বল তুলে দিতে পারতেন রাহানে। হয়তো ওপেনিং জুটি ভাঙতে পারতেন তিনি। সেই সময় মার্শ বা মার্করাম কেউ ফিরলে ২৩৮ রান করতে সমস্যা হত লখনউয়ের। ওপেনিং জুটির ৯৯ রান দলের কাজ অনেক সহজ করে দিল।
৩) ব্যর্থ জনসনকে আর কত দিন খেলানো হবে?
এ বার মিচেল স্টার্কের বদলি হিসাবে অস্ট্রেলিয়ার জনসনকে নিয়েছে কেকেআর। প্রথম ম্যাচ থেকে খেলছেন তিনি। মাঝে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে তাঁকে বাদ দিলেও লখনউয়ের বিরুদ্ধে আবার খেলানো হয়েছে। তিন ওভারে ৪৬ রান দিয়েছেন জনসন। তাঁর বোলিংয়ে পরিকল্পনার অভাব স্পষ্ট। এমনিতেই তাঁর গতি আহামরি কিছু নয়। বাউন্সার বা ইয়র্কার তেমন করতে পারেন না। বলের গতির হেরফের করেন না। ক্রমাগত শর্ট বল করে গেলেন। সেই বলে মার্শ ও মার্করাম আরাম করে বড় শট খেললেন। যেখানে দলে অনরিখ নোখিয়ার মতো অভিজ্ঞ পেসার রয়েছেন, সেখানে কেন জনসনকে একের পর এক ম্যাচ খেলানো হচ্ছে? প্রশ্ন উঠছে।
নাইট ম্যানেজমেন্ট হয়তো ভেবেছেন আগের মরসুমে স্টার্কের মতো এই মরসুমে জনসনও ধীরে ধীরে ফর্মে ফিরবেন। কিন্তু রাহানে বা চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতকে বুঝতে হবে, জনসন স্টার্ক নন। স্টার্কের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। তাঁর বলের গতি অনেক বেশি। বৈচিত্র অনেক বেশি। জনসন তো অস্ট্রেলিয়ার প্রথম দলেই জায়গা পান না। সেখানে কেকেআর কী ভাবে একের পর এক ম্যাচে তাঁর উপর ভরসা রাখছে? উত্তর অজানা।
আরও পড়ুন:
৪) কেন বাদ মইন আলি?
চলতি আইপিএলে দু’টি ম্যাচ খেলেছেন মইন। দু’টি ম্যাচই জিতেছে কেকেআর। ইডেনের উইকেটে দুপুরের খেলায় যে পেসারের থেকে স্পিনার বেশি সুবিধা পাবেন, সেটাও কি বুঝতে পারলেন না রাহানেরা। মইন খেললে একসঙ্গে জোড়া সুবিধা পেত কলকাতা। এক, নারাইন ও বরুণ চক্রবর্তীর পাশাপাশি তৃতীয় স্পিনার পেত তারা। মইন চার ওভার বল করলে পেসারদের উপর থেকে চাপ কমত। ইংল্যান্ডের পিচে বল করা মইন জানেন, যেখানে স্পিনারদের জন্য বিশেষ সুবিধা থাকে না সেখান থেকেও কী ভাবে সুবিধা আদায় করতে হয়। দুই, মইন ভাল ব্যাটারও। প্রয়োজনে বড় শট খেলার ক্ষমতা রাখেন। ইডেনে ভাল ব্যাট করেছেন নিকোলাস পুরান, নারাইন, বেঙ্কটেশ আয়ারের মতো বাঁহাতিরা। মইন থাকলে আরও এক জন ব্যাটার পেত কেকেআর। জনসন ব্যাট করতে পারেন না। শেষ দিকে এক ব্যাটারের অভাব টের পেল কেকেআর। রিঙ্কু সিংহ সঙ্গে এক জনকে পেলে খেলা জেতাতেও পারতেন।
টি-টোয়েন্টিতে বরাবর অলরাউন্ডারদের ভূমিকা অনেক বেশি। কেকেআরের সুযোগ রয়েছে দলে তিন বিদেশি অলরাউন্ডার খেলানোর। নারাইন ও রাসেলের পাশাপাশি মইন সেই কাজ করতে পারেন। জনসন পারেন না। মইন থাকলে দলের ভারসাম্যও ভাল থাকে। কিন্তু বিদেশি পেসারের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা সমস্যায় ফেলল দলকে।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
৫) রিঙ্কুকে কেন আট নম্বরে ব্যাট করতে পাঠানো হল?
২৩৮ রান তাড়া করতে হলে দলের সেরা ব্যাটারদের উপরে খেলতে হবে। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কেকেআর তা করল না। কুইন্টন ডি’কক, সুনীল নারাইন, রাহানে ও বেঙ্কটেশের পর পাঁচ নম্বরে নামলেন রমনদীপ সিংহ। ছ’নম্বরে অঙ্গকৃশ রঘুবংশী, সাতে আন্দ্রে রাসেল। তার পরে রিঙ্কু। রমনদীপ কয়েকটি ম্যাচে অল্প বলে ঝোড়ো ইনিংস ছাড়া খেলেনি। রঘুবংশী শুরু থেকে বড় শট মারার ব্যাটার নন। রাসেলের ব্যাটে মরচে ধরেছে। এই পরিস্থিতিতে কেকেআরকে ভরসা করতে হত রিঙ্কুর উপর। এই দলের হয়েই ভারতীয় ক্রিকেটে পরিচিত পেয়েছে রিঙ্কু। গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে তাঁর পাঁচ বলে পাঁচ ছক্কা মেরে ম্যাচ জেতানো ইনিংস এখনও সকলের স্মৃতিতে রয়েছে। বহু ম্যাচ তিনি কেকেআরকে জিতিয়েছেন। দেশের হয়েও মিডল অর্ডারে লম্বা ইনিংস খেলেছেন রিঙ্কু।
কিন্তু মঙ্গলবার রিঙ্কু যখন নামলেন তখন খেলা প্রায় হাতের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে। কাউকে সঙ্গে পেলেন না তিনি। শেষ পর্যন্ত ১৫ বলে ৩৮ রান করে অপরাজিত থাকলেন। চেষ্টা করে গেলেন। কিন্তু জেতাতে পারলেন না। রিঙ্কু যদি পাঁচ নম্বরে নামতেন তা হলে অন্তত আরও ১০টা বল বেশি খেলতে পারতেন। পাশাপাশি সঙ্গীও পেতেন। তা হলে হয়তো ম্যাচ জিতে যেত কেকেআর। রিঙ্কুকে ফিনিশার হিসাবে খেলাচ্ছে কলকাতা। কিন্তু ফিনিশারকে তো ঠিক জায়গায় নামাতে হবে। নইলে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মতো বিশ্বের সেরা ফিনিশারও কিছু করতে পারবেন না। কোন পরিকল্পনায় যে রিঙ্কুকে এত নীচে রাহানেরা নামালেন তা অবাক করছে। হয়তো রাহানের কাছেও এই প্রশ্নের উত্তর নেই।
তবে আইপিএলে এখনও অনেক সময় রয়েছে। সবে পাঁচটি ম্যাচ খেলেছে কেকেআর। আরও ন’টি ম্যাচ বাকি। এখনও প্লে-অফে যাওয়ার সম্পূর্ণ সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এ রকম ভুল বার বার করলে কিন্তু সুযোগ হাতের বাইরে বেরিয়ে যাবে। যত তাড়াতাড়ি রাহানেরা এই সব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে পারবেন তত মঙ্গল গত বারের চ্যাম্পিয়নদের।
- ১৮ বছরের খরা কাটিয়ে ট্রফি জিতেছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। প্রথম বার আইপিএল জেতার স্বাদ পেয়েছেন বিরাট কোহলি। ফাইনালে পঞ্জাব কিংসকে ছ’রানে হারিয়েছে বেঙ্গালুরু।
- ট্রফি জেতার পরের দিনই বেঙ্গালুরুতে ফেরেন বিরাট কোহলিরা। প্রিয় দলকে দেখার জন্য প্রচুর সমর্থক জড়ো হয়েছিলেন চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে। সেখানে হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১১ জনের। আহত ৫০-এরও বেশি। ঘটনাকে ঘিরে দায় ঠেলাঠেলি শুরু হয়েছে।
-
১১ মৃত্যুর জের, আইপিএল জয়ের উৎসবে কী কী করা যাবে না, শনিবার ঠিক করবে বোর্ড, আর কী কী নিয়ে আলোচনা?
-
‘লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় হবে’! বেঙ্গালুরুতে কোহলিদের উৎসবের আগে সতর্ক করেছিল পুলিশই, তবু কেন এড়ানো গেল না দুর্ঘটনা
-
আইপিএলের শেষ পর্বে ছিলেন না, ভারত-পাক সংঘাত, না কি ‘বিশেষ’ কারণে খেলতে আসেননি স্টার্ক?
-
‘ভিড়ের চাপে স্ত্রীয়ের হাত ছুটে যায়’, পদপিষ্টে প্রিয়জন হারিয়ে কথা বলার ভাষা নেই পরিবারের
-
অফিসে খোলা পড়ে ল্যাপটপ, আরসিবি-র অনুষ্ঠান দেখেই ফিরবেন বলেছিলেন, ফিরে এল তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী কামাক্ষীর দেহ