উত্থান: রাজকীয় আত্মপ্রকাশ তিতাসের। ছবি সংগৃহীত।
অ্যাথলিট থেকে ফুটবলার। সাঁতারু থেকে ক্রিকেটার। ছোটবেলা থেকে এ ভাবেই যাত্রা শুরু হয়েছিল মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালের সেরা তিতাস সাধুর। ১৩ বছর বয়স থেকে ক্রিকেট খেলা শুরু তাঁর। নেট বোলার হিসেবে এসেছিলেন বাংলা মহিলা দলের অনুশীলনে। যাঁকে দেখেই ঝুলন গোস্বামী নির্বাচকদের বলেছিলেন, ‘‘মেয়েটির উপরে নজর রাখুন।’’
ঝুলনের চোখ নিরাশ করেনি কাউকে। ভারতের হয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালে চার ওভারে মাত্র ছ’রান দিয়ে তিতাস তুলে নেন দুই উইকেট। একাই ভেঙে দেন ইংল্যান্ডের ব্যাটিং মেরুদণ্ড। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরের দিন পোচেস্ট্রুম থেকে আনন্দবাজারকে ফোনে সাক্ষাৎকার দিলেন বাংলার নতুন তারা।
প্রশ্ন: ভারতে মেয়েদের ক্রিকেটে প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপ জিতলেন। ফাইনালে সেরা আপনি। কী মনে হচ্ছে, এক দিনে জীবন রাতারাতি বদলে গেল?
তিতাস: দক্ষিণ আফ্রিকাতেই আমাদের নিয়ে যা উন্মাদনা হচ্ছে, জানি না ভারতে পৌঁছলে কী হবে! তবে এত দিনের পরিশ্রম সফল হল। বাবা দীর্ঘদিন আমার জন্য পরিশ্রম করেছেন। তাঁর মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি। বন্ধুরা আমাকে নিয়ে গর্বিত। এই অভাবনীয় প্রাপ্তির আনন্দ বোধহয় আর কিছুতেই নেই।
প্র. ফাইনালের আগের দিন টোকিয়ো অলিম্পিক্সে সোনাজয়ী নীরজ চোপড়া আপনাদের উদ্বুদ্ধ করতে এসেছিলেন ড্রেসিংরুমে। কী কথা হল?
তিতাস: নীরজ ভাইয়ার মতো ব্যক্তিত্বকে সামনে থেকে দেখার পরেই আমরা উদ্বুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। উনি আমাদের বলেছিলেন ফাইনাল ম্যাচ নিঃসন্দেহে আমাদের জীবনের সব চেয়ে বড় পরীক্ষা কিন্তু সেটা ভেবে যেন চাপে না পড়ে যাই। অবশ্যই যেন সেটা উপভোগ করি। আমরা তাই করেছি। নীরজ ভাইয়া অলিম্পিক্সে কী ভাবে নিজেকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, সেই কাহিনিও শুনিয়েছেন সকলকে।
প্র. কী বললেন?
তিতাস: বলছিলেন, টোকিয়ো অলিম্পিক্সে পদক জয়ের দিনে মনে করেছিলেন, তাঁর চেয়ে ভাল কেউ জ্যাভলিন ছুড়তে পারবেন না। সেই কথাটা আমার খুবই পছন্দ হয়েছে। ফাইনালের আগে মনে হচ্ছিল, এই মঞ্চ আমার। নতুন বল হাতে পেয়ে বেশি কিছু চিন্তাই করিনি। শুধু ঠিক জায়গায় বল রেখেছি। গতি ও সুইংই বাকি কাজটা করে দিয়েছে।
প্র. অ্যাথলেটিক্স থেকে ফুটবল, সেখান থেকে সাঁতার। ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন কবে থেকে দেখতে শুরু করেছিলেন?
তিতাস: আমাদের পারিবারিক ক্লাব আছে চুঁচুড়ায়। জেলা স্তরে ক্লাব ক্রিকেট খেলে। সেই দলের খেলা দেখতে যেতাম। ক্রিকেটারদের জল দিতাম। ওদের সঙ্গে অনুশীলনও শুরু করেছিলাম ১৩ বছর বয়সে। ছোটবেলায় জোরে বল করতাম। বাবা বুঝতে পেরেছিলেন, ক্রিকেটের প্রতি আমার আগ্রহ বাড়ছে। সেই আগ্রহটা আর কমতে দেননি। নিয়মিত অনুশীলন শুরু করি। গতি বাড়ানোর জন্য বিশেষ প্রস্তুতিও নিতে শুরু করি। এ ভাবেই পেস বোলার হয়ে ওঠা।
প্র. আপনার বাবা বলেছিলেন, জেলা স্তরের ক্লাব ক্রিকেটে আপনি নাকি ছেলেদের পরিচয়ে খেলেছেন?
তিতাস: (হাসি) হ্যাঁ। আমি মেয়ে বলে জেলা স্তরের ক্লাব ক্রিকেটে খেলতে দিচ্ছিল না। তাই পুরুষের নামে খেলেছিলাম। সফলও হয়েছি। অনূর্ধ্ব-১৫ স্তরে ছেলেদের দলের হয়ে প্রচুর প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। সেখানেও সফল। এখন বুঝি, সেই প্রতিযোগিতাগুলো আমাকে এই উচ্চচায় তুলে আনতে কতটা সাহায্য করেছে।
প্র. বাংলার অনুশীলনে নেট বোলার হিসেবে গিয়েই কি আপনার জীবনের পথ পাল্টে গেল?
তিতাস: বলতে পারেন। ঝুলনদি (গোস্বামী) ছিলেন সেই অনুশীলনে। আমার বোলিং দেখে খুশি হয়েছিলেন। সেই সময় বাংলা দলের কোচ ছিলেন শিবশঙ্কর পাল। ঝুলনদি নিজে গিয়ে কথা বলেছিলেন ওঁর সঙ্গে। তার পরে দু’টি ফ্রেন্ডলি ম্যাচে আমাকে নেওয়া হয়। সেখানেও উইকেট পাই। বলতে পারেন, বাংলার হয়ে সেই প্রস্তুতি ম্যাচ থেকেই ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে।
প্র. ঝুলনদির সঙ্গে আগে কথা হয়েছে?
তিতাস: অবশ্যই। আমাকে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন উনি। কী ভাবে গতি বাড়ানো যায়, লাইন এবং লেংথ কী রকম থাকা উচিত। বিশ্বকাপ জেতার পরে আমাকে মোবাইলে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন। সব সময়ই তাঁর থেকে কিছু না কিছু শেখা যায়।
প্র. ভারতীয় বোর্ড আপনাদের জন্য পুরস্কারমূল্য ঘোষণা করেছেন। রাহুল দ্রাবিড়-সহ ভারতের সিনিয়র দলের সদস্যেরা অভিনন্দন জানিয়েছেন। এই অনুভূতি কেমন?
তিতাস: আমরা সবাই অবাক হয়ে গেছি ভারতীয় দলের অভিনন্দনবার্তা দেখে। আমদাবাদে আমাদের ডাকা হয়েছে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য। আজই এখান থেকে মুম্বই উড়ে যাব। ১ ফেব্রুয়ারি আমদাবাদে যাচ্ছি ভারত-নিউ জ়িল্যান্ডের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে। ২ ফেব্রুয়ারি কলকাতা ফিরব।
প্র. অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতা হয়ে গিয়েছে। এ বার তিতাসের লক্ষ্য কী?
তিতাস: অবশ্যই ভারতের সিনিয়র দলে নিয়মিত খেলা। তার জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নেব। ঝুলনদি বলেছেন, অনুশীলনের মান উন্নত করতে। তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী নিশ্চয়ই পরিশ্রমের মাত্রা বাড়াব। আশা করি, ভারতীয় দলের হয়েও একদিন বিশ্বকাপ জিতব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy