Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪
মেলবোর্নে ঐতিহাসিক জয়ের পরে কোহলিকে হার্দিক: তোমার জন্য গুলিও খেতে পারতাম
ICC T20 World Cup

নিজেদের প্রতি বিশ্বাস বাড়িয়ে দিল এই জয়, মেলবোর্নে ঐতিহাসিক জয়ের পর বলছেন বিরাট

বিরাটের দিকে তাকিয়ে হার্দিক আরও বলেন, ‘‘আমি তো এই জায়গাতেই পৌঁছতে চেয়েছিলাম। আর সেটা করতে পেরে খুশি হয়েছি। এই দলটার সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তা কোনও দিন ভুলব না।’’  

তৃপ্ত: জয়ের পরে ভক্তদের অভিবাদন গ্রহণ বিরাট-হার্দিকের। বিসিসিআই

তৃপ্ত: জয়ের পরে ভক্তদের অভিবাদন গ্রহণ বিরাট-হার্দিকের। বিসিসিআই

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২২ ০৯:০৭
Share: Save:

ম্যাচ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অসাধারণ জয়ের রেশ যেন কাটছেই না ভারতীয় শিবিরে। যা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে বিরাট কোহলি এবং হার্দিক পাণ্ড্যের মধ্যে কথোপকথনে।

গণমাধ্যমে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের তুলে ধরা এক ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, কোহলির পাশে বসে তাঁর কাঁধে হাত রেখে আপ্লুত হার্দিক বলে চলেছেন, ‘‘কী ভাবে তুমি এটা করলে? একটু বলো!’’ জবাবে হাসিমুখে বিরাট বলেন, ‘‘প্রথমেই বলব আমাদের দারুণ জুটিটার কথা। হার্দিক যখন ব্যাট করতে নামে, তখন আমরা খুবই চাপের মধ্যে ছিলাম। আমি নিজেও চাপটা খুবই টের পাচ্ছিলাম।’’

ভারতের জয়ের নায়ক আরও বলেন, ‘‘আমি এই ধরনের ম্যাচ আগেও খেলেছি। তাই জানতাম, এই ম্যাচের গুরুত্ব কতটা, সবাই কী প্রত্যাশা করে আছে আমাদের থেকে।’’ এর পরে হার্দিকের পা চাপড়ে বিরাট বলে ওঠেন, ‘‘ও কিন্তু ভয়ডরহীন ছিল। হার্দিক আমাকে সারাক্ষণ বলে চলে, জিততে হবে আমাদের। বড় জুটি গড়তে হবে। অনেক কিছুই হতে পারে ম্যাচে।’’ যোগ করেন, ‘‘আমার মনঃসংযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করেছিল হার্দিক। আমি একটা সময় বড় শট খেলতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু তখন চার উইকেট পড়ে গিয়েছিল। কখন যে আমরা একশো রানের জুটি গড়ে ফেলি, বুঝতেই পারিনি।’’

জুটি: পাকিস্তানকে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অভিযান শুরু করার পরে কোহলির সঙ্গে কথোপকথন হার্দিকের। বিসিসিআই

জুটি: পাকিস্তানকে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অভিযান শুরু করার পরে কোহলির সঙ্গে কথোপকথন হার্দিকের। বিসিসিআই

হাসিমুখে হার্দিকের দিকে তাকিয়ে বিরাট বলতে থাকেন, ‘‘আমরা জানতাম, মহম্মদ নওয়াজের এক ওভার স্পিন বাকি আছে। হার্দিক তো ঠিক করে নিয়েছিল, ওর ওভারে তিন-চারটে ছয় মারবে। তার পরে আমরা বুঝতে পারি, পাকিস্তান একেবারে শেষে ওকে বল দেবে। তার আগে ওরা ম্যাচটা শেষ করে দিতে চাইছে।’’ সেই পরিস্থিতিতে তাঁরা কী কৌশল নিয়েছিলেন, তা বুঝিয়ে দেন বিরাট। বলেন, ‘‘ওই সময় আমি হার্দিককে বলি, তা হলে তো হ্যারিস রউফকে আক্রমণ করতে হয়। সেটা করতে পারলে ওরা চাপে পড়ে যাবে। আর ম্যাচটা আমরা ধরে নিতে পারব। আর ঠিক সেটাই হল।’’

এর পরে বিরাটকে থামিয়ে হার্দিক বলে ওঠেন, ‘‘তোমাকে থামানোর জন্য দুঃখিত।’’ বিরাটের কাঁধে হাত রেখে হার্দিক বলে চলেন, ‘‘বিরাটের মারা ওই ছয় দু’টো অসাধারণ বললেও কম বলা হবে। ওই সময় একটা বল ফস্কালেই পাকিস্তান ম্যাচে অনেকটা এগিয়ে যেত।’’ শেষ আট বলে ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৮ রান। বিরাটের মারা ওই দু’টো ছয়ের পরে হিসেবটা এসে দাঁড়ায় ৬ বলে ১৬। যা তুলে ম্যাচ জিতে নেয় ভারত।

হার্দিক আরও বলেছেন, ‘‘আমি নিজে অনেক ছয় মেরেছি। কিন্তু ওই দু’টো ছয় স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ওই দু’টো ছয়ের পরে আমরা দু’জনেই খুব তেতে যাই। আমি তো বিরাটকে গিয়ে বলি, এত ক্রিকেট খেলেছি। কিন্তু ওই দু’টো ছয় মিস্টার কোহলি ছাড়া আর কারও পক্ষে মারা সম্ভব হত না।’’ যোগ করেন, ‘‘এই ইনিংসটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে, কেন আমাদের প্রথম দিকে খুব লড়াই করতে হয়েছিল। এমন নয় যে, আমরা শুরু থেকেই দাপট দেখিয়ে এসেছিলাম। সে রকম হয়নি। প্রথম দিকে আমাদের যথেষ্ট লড়াই করতে হয়েছিল। যে কারণে এটা আরও স্মরণীয়।’’ পাশ থেকে মাথা নাড়িয়ে সায় দেয় বিরাট।

এর পরে বিরাট বলেন, ‘‘তোমাকে একটা প্রশ্ন করতে চাই। তুমি যখন ব্যাট করতে নামলে আমাদের চার উইকেট পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তুমি খুব ইতিবাচক ছিলে। আমরা যখন রান করতে পারছিলাম না, তখনও তুমি আমাকে উৎসাহ দিয়ে গিয়েছ। ডাগ আউটে বসে তুমি কী ভাবছিলে? সত্যি করে বলবে?’’

বিরাটের প্রশ্নে হার্দিক বলেছেন, ‘‘আমাদের ড্রেসিংরুমে একটা চাপের পরিবেশ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সেটা আমি টের পাচ্ছিলাম। আর এটা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। এত বড় একটা ম্যাচ, সবাই এত প্রত্যাশা করে আছে। কিন্তু আমি যেন কিছু টের পাচ্ছিলাম না। মাঠে যখন আসি, তখন মনটা খুশি খুশি ছিল।’’

এর পরে হার্দিক জানান, ম্যাচের আগে কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে তাঁর কী কথোপকথন হয়েছে। ‘‘রাহুল স্যর আমাকে বলেছিলেন, ‘হার্দিক, আমি জানি তুমি অনেক দারুণ ইনিংস খেলছ। আজ মাথাটা ঠান্ডা রেখো।’ তখন আমি বলি, রাহুল স্যর, আমি এখানে আসতে পেরেই খুব খুশি হয়েছি। কিছু মাস আগেও আমি অন্য পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম। খেলার ফল যাই হোক না কেন, আমি এখানে উপস্থিত থাকতে পেরেই খুশি। বিশ্বের সেরা ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলতে পেরেই দারুণ লাগছে।’’

বিরাটের দিকে তাকিয়ে হার্দিক আরও বলেন, ‘‘আমি তো এই জায়গাতেই পৌঁছতে চেয়েছিলাম। আর সেটা করতে পেরে খুশি হয়েছি। এই দলটার সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তা কোনও দিন ভুলব না।’’

বিরাটের উদ্দেশে হার্দিক এও বলেন, ‘‘ওই সময় আমি তোমার হয়ে বুক পেতে বুলেটের আঘাত সহ্য করতেও রাজি ছিলাম। আমার লক্ষ্য খুব সহজ ছিল। তোমার কাজটা সহজ করে দেওয়ার জন্য যা যা করা দরকার, তা করব। কিন্তু তোমাকে আউট হতে দেব না।’’ যোগ করেন, ‘‘তুমি অতীতে কত বার এই ভাবে ম্যাচ বার করেছ। তোমার চেয়ে চাপ সামলাতে ভাল আর কেউ পারে না।’’

বিরাট বলেন, ‘‘আমার কাছে এই রাতটা অন্যতম স্মরণীয় রাত হয়ে থাকবে। এত বছর ধরে খেলে চলেছি। শেষ বার এ রকম আবেগের ছোঁয়া পেয়েছিলাম, ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে, মোহালিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে।’’

সাক্ষাৎপর্বের শেষে বিরাট বলে যান, ‘‘তবে যতই আবেগে ভেসে যাই না কেন, আমরা জানি এটা সবে প্রথম ম্যাচ। তবে এই ম্যাচটা কেন স্মরণীয় হয়ে থাকবে? কারণ কঠিন পরিস্থিতি থেকে দু’টো পয়েন্ট পেয়ে প্রতিযোগিতা শুরু করলাম আমরা। যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’’ হার্দিকের দিকে তাকিয়ে শেষ করেন, ‘‘এই জয় আমাদের নিজেদের প্রতি বিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা এ বার হাসিমুখে বিশ্বকাপটা উপভোগ করতে পারব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

ICC T20 World Cup Virat Kohli Hardik Pandya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE