জীবনে অনেক ওঠা-পড়া দেখেছেন আজহার। আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে
৯৯টি টেস্ট খেলে শেষ ক্রিকেট জীবন। শততম টেস্ট থেকে এক ম্যাচ দূরে ছিলেন। কিন্তু ম্যাচ গড়াপেটার কলঙ্কে হঠাৎ ক্রিকেট জীবনে যবনিকা পতন। মহম্মদ আজহারউদ্দিন হতে পারতেন অনেক কিছু। কিন্তু তাঁর জীবনের কলঙ্ক যেন সব কিছুই কেমন ঘেঁটে দিল।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবন শুরু ইডেনের মাঠে শতরান করে। কলকাতার মাঠ তাঁকে কখনও খালি হাতে ফেরায়নি। ইডেনে সাতটি টেস্ট খেলেছিলেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক। সেই সাত ম্যাচে পাঁচটি ইনিংসে শতরান করেন আজহার। অভিষেক ম্যাচে শতরানের পর পরের দু’টি টেস্টেও শতরান ছিল। অভিষেকে টানা তিনটি টেস্টে শতরান। নিজামের শহরের ছেলেটি ভারতীয় ক্রিকেট শাসন করতে পারতেন। তাঁর নেতৃত্ব পাল্টে দিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেটকে। কিন্তু পরবর্তী প্রজন্ম আজহারের কব্জির মোচড়ে বোলারদের ধ্বংস করার থেকে মনে রেখে দিল কলঙ্ককেই।
সাল ২০০০। ভারতীয় ক্রিকেটের মুখ পুড়ল। ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে হ্যান্সি ক্রোনিয়ের সঙ্গে ম্যাচ গড়াপেটা কাণ্ডে নাম জড়িয়ে গেল মহম্মদ আজহারউদ্দিন, অজয় জাডেজাদের। তৎকালীন ভারত অধিনায়ক আজহারউদ্দিনকে ক্রিকেট থেকেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করল আইসিসি এবং বিসিসিআই। ৯৯টি টেস্টে ২২টি শতরান-সহ ৬২১৫ রান নিয়েই থেমে গেল আজহারের ক্রিকেট জীবন। সর্বোচ্চ ১৯৯ রান। দ্বিশতরান থেকে ১ রান কম।
১৯৮৭ সালে প্রথম বিয়ে করেন আজহার। নাউরিনকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। দুই পুত্র সন্তানের জন্ম দেন তাঁরা। আয়াজুদ্দিন এবং আসাদউদ্দিন। কিন্তু সেই বিয়ে ভেঙে যায় ১৯৯৬ সালে। আজহার বিয়ে করেন অভিনেত্রী সঙ্গীতা বীজলানিকে। কিন্তু ২০১০ সালে শোনা যায় ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় জ্বলা গাট্টার সঙ্গে প্রেম করছেন আজহার। বিবাহ বিচ্ছেদ হয় সঙ্গীতার সঙ্গেও।
জীবনে অনেক ওঠা-পড়া দেখেছেন আজহার। তবে সব চেয়ে মর্মান্তিক ছিল বোধ হয় নিজের ছেলের মৃত্যু। ২০১১ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান আয়াজুদ্দিন। তরুণ ক্রিকেটার এক সময় হয়তো বাবার মতো ভারতীয় দলে খেলতে পারতেন। কিন্তু তার আগেই শেষ হয়ে গেল তাঁর জীবন। আসাদউদ্দিনও ক্রিকেট খেলেন। গোয়ার হয়ে ২০১৮ সালে দু’টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচও খেলেন। ২০১৯ সালে তিনি বিয়ে করেন টেনিস তারকা সানিয়া মির্জার বোন আনম মির্জাকে।
ক্রিকেট মাঠ থেকে সরে যাওয়ার পর রাজনৈতিক ময়দানেও নামেন আজহার। কংগ্রেসের হয়ে ২০০৯ সালে উত্তর প্রদেশের মোরাদাবাদ থেকে জিতে সংসদে যান তিনি। ১৯৮৬ সালে অর্জুন পুরস্কার এবং ১৯৮৮ সালে পদ্মশ্রী পান আজহার। সেই আজহারের কলঙ্ক মুক্তি ঘটে ২০১২ সালে। ক্রিকেট জগতে তাঁকে যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল তা তুলে নেওয়া হয় ২০১২ সালের ৮ নভেম্বর। তখন আজহারের বয়স ৪৯। ক্রিকেট খেলার থেকে বেশ কিছুটা দূরে। ২০১৯ সালে হায়দরাবাদ ক্রিকেট সংস্থার প্রধান হিসেবে যোগ দেন আজহার। এখনও সেই পদেই রয়েছেন তিনি।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের আগে আজহারই ছিলেন ভারতের সব চেয়ে সফল অধিনায়ক। ১৪টি টেস্ট জিতেছিলেন অধিনায়ক হিসেবে। ৪৭টি টেস্ট এবং ১৭৪টি এক দিনের ম্যাচে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আজহার। তার মধ্যে ৯০টি এক দিনের ম্যাচে জিতেছিল ভারত। পরবর্তী সময় সেই রেকর্ড ভেঙে দেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। নিজে ৩৩৪টি এক দিনের ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। ৭টি শতরান-সহ তাঁর সংগ্রহ ৯৩৭৮ রান।
ক্রিকেটার আজহার, অধিনায়ক আজহার, ম্যাচ গড়াপেটায় অভিযুক্ত আজহার, একাধিক সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়া আজহার, সাংসদ আজহার, এক আজহারের মধ্যে একাধিক মুখ। ভারতীয় ক্রিকেট তাঁর হাত ধরে উন্নতি করেছে আবার ধাক্কাও খেয়েছে। জীবনে ফের সুযোগ পেয়েছেন তিনি। ৫৯ বছর বয়সে হায়দরাবাদ ক্রিকেট সংস্থার প্রধান হয়ে তরুণ ক্রিকেটারদের তুলে আনার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ভারতীয় ক্রিকেটের পিছনে এখনও অবদান রেখে চলেছেন আজহার।
এমন এক চরিত্রকে যে বলিউড লুফে নেবে তা তো জানাই ছিল। ২০১৬ সালে নির্দেশক টনি ডি’সুজা তৈরি করেন ‘আজহার’ নামক একটি ছবি। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়কের চরিত্রে ইমরান হাসমি। ‘বিতর্ক’ পিছু ছাড়েনি সেখানেও। ম্যাচ গড়াপেটা কাণ্ডটাই যে দেখানো হয়নি। ওই পর্বটা ভুলে থাকার চেষ্টা? থাক তবে ভুলেই থাকা যাক। নতুন ভাবেই শুরু হোক আজহারের যাত্রা।
শুভ জন্মদিন, আজহার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy