এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দুবাইয়ে দু’টি ম্যাচ হয়েছে। দু’টিতেই প্রথমে ব্যাট করা দল ২৫০ রানও পেরোতে পারেনি। সেখানে পাকিস্তানে অনায়াসে ৩০০ পার হচ্ছে প্রায় প্রতি ম্যাচে। দুবাইয়ের মাঠটির থেকে পাকিস্তানের তিনটি মাঠের পিচের চরিত্র আলাদা বলেই কি এমনটা দেখা গিয়েছে? উত্তর খুঁজল আনন্দবাজার অনলাইন।
দুই মাঠে রানের তফাত
এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দুবাইয়ে এখনও পর্যন্ত দু’টি ম্যাচ হয়েছে। ভারত খেলেছে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। দু’টি ম্যাচেই প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ (২২৮) এবং পাকিস্তান (২৪১) আড়াইশো রানের গণ্ডি পার করতে পারেনি। অন্য দিকে, পাকিস্তানের মাটিতে ইতিমধ্যে করাচি, লাহোর এবং রাওয়ালপিন্ডিতে অন্তত একটি করে ম্যাচ হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে করাচি এবং লাহোরে প্রথমে ব্যাট করে ৩০০ রান পার করেছে সব দল। রাওয়ালপিন্ডিতে অবশ্য বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করে ২৩৬ রানের বেশি করতে পারেনি। লাহোরে ইংল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করে ৩৫১ রান করেছিল। অস্ট্রেলিয়া সেই রান তাড়া করে ম্যাচ জিতে নেয়।
আরও পড়ুন:
দুবাইয়ের পিচ
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলছে ভারত। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য আইসিসির পিচ প্রস্তুতকারকেরা এখানে পিচ তৈরি করছেন। মুম্বই ক্রিকেট সংস্থার প্রধান পিচপ্রস্তুতকারক নাদিম মেমন জানালেন, সেখানকার পিচে ভারী রোলার ব্যবহার করা হচ্ছে। আনন্দবাজার অনলাইনকে মেমন বললেন, “ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে রোহিত শর্মারা ব্যাট করতে নামার আগে অনেক ক্ষণ রোলার ব্যবহার করা হয়। পিচগুলো ব্যাটারদের কথা ভেবে তৈরি করা হচ্ছে। তবে এই পিচগুলো একটু মন্থর। যে কারণে পেসারেরা গায়ের জোরে বল করলেও ব্যাটারদের খেলতে অসুবিধা হচ্ছে না। বরং স্পিনারদের খেলতে একটু সমস্যা হচ্ছে। কারণ বল থমকে আসছে ব্যাটে।”
পাকিস্তানের পিচ
পাকিস্তানে খেলা হচ্ছে করাচি, লাহোর এবং রাওয়ালপিন্ডিতে। কলকাতার ইডেনের পিচ প্রস্তুতকারক সুজন মুখোপাধ্যায়ের মতে, সেখানকার পিচগুলিও ব্যাটারদের কথা ভেবেই বানানো হয়েছে। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বললেন, “পাকিস্তানের সব পিচই পাটা। বোলারদের জন্য ওখানে প্রায় কিছুই নেই। দুবাই এবং পাকিস্তানের পিচগুলোর মধ্যে বিশেষ তফাত নেই। শুধু দুবাইয়ের পিচ একটু মন্থর। দুটো জায়গাতেই ব্যাটারেরা বেশি সুবিধা পাচ্ছে।” এক ধাপ এগিয়ে মেমন বললেন, “পেসারদের জন্য প্রায় কিছু নেই পিচগুলোতে। ওরা যেন বোলিং মেশিন। কিছু করার নেই ওদের। সিমেন্টের পিচে বল করার মতো অবস্থা হচ্ছে পেসারদের।”

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
শিশির-সমস্যা?
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরুর আগে থেকে শিশিরের কারণে পরে ব্যাট করা দল বেশি সুবিধা পাবে বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু দুবাই এবং পাকিস্তানে হওয়া ম্যাচগুলিতে এখনও পর্যন্ত শিশির বিশেষ সমস্যা তৈরি করছে বলে দেখা যাচ্ছে না। এখনও পর্যন্ত হওয়া চারটি ম্যাচের মধ্যে যদিও পরে ব্যাট করা দল জিতেছে। কিন্তু শিশির তাদের বাড়তি সুবিধা করে দিয়েছে বলে মনে করছেন না মেমন। তিনি বললেন, “দুবাইয়ে শিশির পড়ছে। কিন্তু সেটা যে সময় পড়তে শুরু করছে তখন বেশির ভাগ ম্যাচ শেষের মুখে। রাত ৮.৩০টা-৯টা নাগাদ শিশির পড়ছে। তখন ম্যাচ প্রায় শেষ। ফলে শিশির তেমন ভাবে দেখা যাচ্ছে না।” বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জিতে শুভমন গিল বলেছিলেন, “এখানে শিশির নেই। তাই টস কোনও প্রভাব ফেলবে না। বরং যে দল পরে ব্যাট করছে, তাদের বেশি সমস্যা হবে।” পাকিস্তানের ম্যাচগুলিতেও শিশির বিশেষ সমস্যা তৈরি করছে বলে দেখা যাচ্ছে না।
কেন পাকিস্তানের পিচে বেশি রান?
পাকিস্তানের তিনটি মাঠ এবং দুবাইয়ের মাঠের চরিত্র প্রায় সমান হলেও কেন রান কম হচ্ছে দুবাইয়ে? সুজন বললেন, “দুবাইয়ের পিচ যথেষ্ট ব্যাটিং উপযোগী। প্রথমে ব্যাট করে কম রান হওয়ার কারণ নেই। ব্যাটারেরা সে ভাবে খেলতে পারেনি বলে রান ওঠেনি।” মেমন অন্য একটি দিকের কথা বললেন। তাঁর মতে, “পাকিস্তানের পিচগুলির চেয়ে দুবাইয়ের পিচ একটু বেশি মন্থর। বল থমকে ব্যাটে আসছে। যে কারণে এই পিচে ব্যাটারদের খেলতে একটু সমস্যা হচ্ছে। পাকিস্তানের পিচগুলোয় তুলনায় ঠিকমতো বল ব্যাটে আসছে। তাই ব্যাটারদের শট খেলতে সমস্যা হচ্ছে না। দুবাইয়ে মন্থর পিচ হওয়ায় বল থমকে আসছে ব্যাটে। যে কারণে ক্রিজ়ে থিতু হতে একটু সময় নিচ্ছেন ব্যাটারেরা। তাই হয়তো রান কম হচ্ছে।”

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
এমন পিচই হওয়া উচিত?
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যে ধরনের পিচে খেলা হচ্ছে তাতে ব্যাটারেরা বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন বলেই মত ভারতের দুই পিচ প্রস্তুতকারকের। সুজন বললেন, “পিচে একটু ঘাস প্রয়োজন ছিল। তাতে শুরুতে পেসারেরা সুবিধা পেত। বল একটু সুইং করত। লড়াইটা সমানে সমানে হত।” অন্য দিকে, মেমন বললেন, “এই ধরনের পিচ আসলে পেসারদের কাছে নরক। কিছু করার নেই ওদের। ব্যাটারদের কথা ভেবেই পিচ বানানো হয়েছে। এমন একপেশে হলে আগামী দিনে ক্রিকেট খেলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন বোলারেরা।”