তামিম ইকবাল (বাঁ দিকে) ও শাকিব আল হাসান। —ফাইল চিত্র
ভারতে এক দিনের বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ ক্রিকেটে নাটক চলছে। বিশ্বকাপের দলে জায়গা না পেয়ে সরাসরি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে দায়ী করেছেন তামিম ইকবাল। কয়েক মাস আগে পর্যন্ত দলের অধিনায়ক থাকা তামিম মেনে নিতে পারছেন না যে দল থেকে বাদ পড়েছেন তিনি। পাল্টা তামিমকে ‘শিশু’ বলে খোঁচা মেরেছেন বর্তমান অধিনায়ক শাকিব আল হাসান। ঠিক কী হয়েছিল দলের অন্দরে? পুরো ঘটনার নেপথ্য কারণ কী?
কী ভাবে শুরু বিতর্ক
পুরো বিতর্কের শুরু বাংলাদেশের দল ঘোষণার সময়। দল থেকে বাদ দেওয়া হয় তামিমকে। বাংলাদেশের কিছু সংবাদমাধ্যম দাবি করে, তামিম নাকি বলেছিলেন তিনি পাঁচটি ম্যাচের বেশি খেলতে পারবেন না। পাল্টা ম্যানেজমেন্ট নাকি তামিমকে মিডল অর্ডারে খেলতে বলেছিলেন। তাতে রাজি হননি তামিম। সেই কারণেই তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
মুখ খোলেন তামিম
বিতর্ক নিয়ে মুখ খোলেন তামিম। ১২ মিনিট ১০ সেকেন্ডের একটি ভিডিয়োতে তিনি নিজের সব কথা জানান। তামিম বলেন, ‘‘সবাই জানেন, আমি অবসর নিয়ে ফেলেছিলাম। তার কারণ ছিল। কিন্তু তার পর প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে ফিরে আসি। এর পরের দু’মাস আমি প্রচণ্ড পরিশ্রম করি নিজেকে ফিট করার জন্য। আমি নিশ্চিত, ফিজিয়ো থেকে শুরু করে বাকি যাঁরা এই প্রক্রিয়াটার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, সবাই একমত হবেন, এমন কোনো সেশন বা এক্সারসাইজ ছিল না, যেটা তাঁরা চেয়েছেন কিন্তু আমি করিনি।’’
ফিজিয়োর সঙ্গে তাঁর কী কথা হয়েছিল সেটাও জানান তামিম। বাংলাদেশের প্রাক্তন অধিনায়ক বলেন, ‘‘এত দিন পর যখন খেলতে নেমেছি, চোট থেকে সেরে উঠেছি, স্বাভাবিক ভাবেই ব্যথা, অস্বস্তি থাকবেই। প্রথম ম্যাচের পরও ব্যথা অনুভব করেছি। যখন খেলা শেষ হল, ফিজিয়োকে বললাম যে, আমি কেমন বোধ করছি। ঠিক ওই মুহূর্তে তিন জন নির্বাচক আমাদের ড্রেসিংরুমে আসেন। এখানে একটা ব্যাপার পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই, আমি কোনও সময় কাউকে বলিনি যে, বিশ্বকাপে পাঁচটা ম্যাচের বেশি খেলতে পারব না। আমি নিশ্চিত, গত কাল নান্নু ভাইও (বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন) এটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন। আমি জানি না এটা সংবাদমাধ্যমে কী ভাবে খাওয়ানো হয়েছে, কে করেছে। এটা মিথ্যা কথা, ভুল কথা। আমি নির্বাচকদের যেটা বলেছিলাম সেটা হল, আমার শরীর এখন এ রকমই থাকবে। মাঝেমাঝে ব্যথা থাকবে। ফলে দল যখন নির্বাচন করবেন, এটা মাথায় রেখে করবেন।’’
তামিম জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র হয়েছে তা ঢাকার জন্য তাঁর চোটের কথা বলা হয়েছে। এর পিছনে বোর্ডের প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের অনেকেরই অভ্যাস আছে, একটা জিনিসকে ঢাকার জন্য আর একটা জিনিস ঠিক করা। তাই বলা হচ্ছে, আমি পাঁচটা ম্যাচ খেলতে চেয়েছি। এমন কোনও কথাই হয়নি। সে দিন সিলেক্টর, ফিজিয়ো, ট্রেনার— সবাই ছিলেন। তখন খুব খারাপ তিন-চারটে মাস কাটিয়ে আমি সবে ক্রিকেটে ফিরেছিলাম। আমার জন্য খুব কঠিন ছিল ওই তিন-চার মাস। গোটা ব্যাপারটাই যদি আমাকে অন্য ভাবে বলা হত তা হলে হয়তো বিষয়টা মেনে নিতাম। কিন্তু হঠাৎ করে কেউ যদি ফোন করে বলেন, খেলানো হবে না বা খেলালেও নীচে ব্যাটিং করাবে, জানি না এটা কতটা ঠিক। ঠিক এটাই হয়েছিল। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার বলার নেই।’’
পাল্টা দেন শাকিব
তামিম মুখ খোলার পরে পাল্টা দেন শাকিব। তিনি বলেন, ‘‘যিনি ওকে এই কথা বলেছেন তিনি নিশ্চয়ই দলের কথা ভেবে বলেছেন। ম্যাচের আগে অনেক রকম কম্বিনেশন মাথায় রাখতে হয়। তাই কেউ এ কথা বলে থাকলেও সেটা কি ভুল? এমন প্রস্তাব দেওয়া অন্যায়? দল আগে না ক্রিকেটার আগে?”
তামিমকে ঘুরিয়ে স্বার্থপর বলেছেন শাকিব। পাশাপাশি রোহিত শর্মার উদাহরণ টেনে বলেছেন, “রোহিত শর্মা শুরুতে সাত নম্বরে ব্যাট। সেখান থেকে ওপেনার হয়ে এখন ১০ হাজার রানও করে ফেলেছে। তাই কখনও তামিমকে যদি তিন বা চারে খেলতেও হয়, সেটা কি বিরাট সমস্যা? পুরোপুরি বাচ্চাদের মতো আচরণ। যেন ব্যাট আমার, আমিই খেলব। বাকি কেউ খেলতে পারবে না। একজন ক্রিকেটারকে দলের স্বার্থে যে কোনও জায়গায় ব্যাট করতে হতে পারে। দল আগে। আপনি আগে ১০০ করেছেন না ২০০ সেটা কেউ মাথায় রাখবে না। ব্যক্তিগত কীর্তি নিয়ে কী করবেন?”
শাকিবের সংযোজন, “তামিম মোটেই দলের কথা ভাবেনি। মানুষ এত বোঝে না। দলের জন্যে ওকে নীচে ব্যাট করা প্রস্তাব দেওয়া হলে তাতে খারাপটা কোথায়? দলকে আগে রাখলে এই জিনিস মেনে নেওয়াই যায়। যদি আপনি নিজেকে টিমম্যান না ভাবেন, তা হলে অন্য কথা। ও মনে হয় ব্যক্তিগত রেকর্ড, সাফল্য, খ্যাতি এবং নামের কথা ভেবে খেলছে।”
বোর্ডের সমালোচনা মাশরাফে মোর্তাজার
এই পুরো ঘটনায় বোর্ডের সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশের আর এক প্রাক্তন অধিনায়ক মাশরাফে মোর্তাজা। তিনি বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়া ঠিক নয়। শাকিবের উচিত ছিল তামিমের সঙ্গে কথা বলে ওকে বোঝানো। নিজেদের পরিকল্পনার কথা জানানো। অধিনায়ক, কোচ বা বোর্ডের শীর্ষ কর্তা ছাড়া অন্য কারও অধিকার নেই তামিমকে ফোন করে ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে পরামর্শ দেওয়ার। পুরো বিষয়ে বোর্ডের গাফিলতি রয়েছে। বিষয়টা আরও ভাল ভাবে মোকাবিলা করা যেত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy