Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Ebadot Hossain

Ebadot Hossain: স্যালুটের নায়ককেই ক্রিকেটবিশ্বের স্যালুট

দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৬ রানে ছয় উইকেট নিয়ে তিনিই নিউজ়িল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের নায়ক।

অভিনব: উইকেট পেয়ে উৎসব ইবাদতের।

অভিনব: উইকেট পেয়ে উৎসব ইবাদতের।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:০৭
Share: Save:

ক্রিকেটবিশ্ব তাঁকে চেনে উইকেট নিয়ে স্যালুট করার জন্য। ইডেনে বিরাট কোহলিকে আউট করার পরেও যা দেখা গিয়েছিল। সেই ইবাদত হোসেনকেই এখন স্যালুট করছে ক্রিকেট দুনিয়া।

দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৬ রানে ছয় উইকেট নিয়ে তিনিই নিউজ়িল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের নায়ক। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভালে টেস্টের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন নিউজ়িল্যান্ডকে হারানো নিশ্চয়ই টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সেরা রূপকথা হিসেবে থেকে যাবে। কিন্তু কে বিশ্বাস করবে, যিনি এই ইতিহাস সৃষ্টির নেপথ্যে, সেই ইবাদতের এর আগে টেস্টে বোলিং গড় ছিল আশির উপরে। কমপক্ষে দশটি টেস্ট উইকেট থাকা বোলারদের মধ্যে যা সব চেয়ে খারাপ।

পঞ্চম দিন সকালে মাত্র ৫৬ মিনিটের মধ্যে কেন উইলিয়ামসহীন নিউজ়িল্যান্ডকে শেষ করে দেয় বাংলাদেশ। ইবাদত একাই নেন ৪৬ রানে ছয় উইকেট। তার পর বাংলাদেশের জেতার জন্য প্রয়োজন ছিল ৪০ রান। আট উইকেটে জিতে যায় তারা।

তাঁর স্যালুটের নেপথ্যে কোন কাহিনি? ইবাদত বাংলাদেশ সেনাবহিনীর কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। তখন ভলিবল খেলতেন। সেখান থেকেই সেনার মতো স্যালুটের ভঙ্গি এসেছে। বে ওভালে জেতার পরে তিনি নিজেই বলেছেন, ‘‘আমি সেনাবাহিনীর সদস্য। তাই স্যালুট দিতে জানি। ভলিবল থেকে ক্রিকেটে আসাটা লম্বা গল্প। সব সময় চেষ্টা করেছি সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে।’’

ম্যাচের পরে অভিনব নিজস্বী নিতে দেখা গেল বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। প্রত্যেকে স্যালুট করছেন আর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন ইবাদত। স্যালুটের নায়ককেই স্যালুট।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন নায়ক কী বলবেন এই ঐতিহাসিক জয় নিয়ে? ইবাদত জানাচ্ছেন, ধৈর্য ধরেই এই সাফল্য এসেছে। ‘‘গত দু’বছর ধরে বোলিং কোচ ওটিস গিবসনের সঙ্গে বোলিং নিয়ে পরিশ্রম করেছি। দেশে নিষ্প্রাণ পিচ হয়। ফাস্ট বোলারদের জন্য পরিবেশ তেমন থাকে না। বিদেশে কী ভাবে বল করতে হয়, রিভার্সের শিল্প এখনও শিখে চলেছি। আমাকে ধৈর্য ধরতে হয়েছে সফল হওয়ার জন্য।’’

সব বড় শিকারগুলো তাঁরই নেওয়া। পঞ্চম দিন সকালে রস টেলরকে ফেরানো যার মধ্যে সেরা। নায়কের বার্তা, ‘‘এই জয় যদি তরুণ প্রজন্মের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকে, তা হলেই খুশি হব।’’ শুধু সেনাবাহিনীর কায়দায় স্যালুট করাই নয়, কথাবার্তাতেও যেন সেই ছাপ। বললেন, ‘‘আমাদের আগের ভাইয়েরা, দলগুলি ২১ বছরে নিউজ়িল্যান্ডে জিততে পারেনি। কিন্তু আমরা এখানে আসার পরে বলেছিলাম, নিউজ়িল্যান্ডের মাঠে আমাদের জিততেই হবে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নদের হারিয়েছি আমরা। পরবর্তী প্রজন্মেরা যখন নিউজ়িল্যান্ড সফর করবে, তখন যেন এই জয় ওদের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।’’ ইবাদত নিশ্চিত থাকতে পারেন। তাঁর এই বোলিং উদাহরণ হয়ে থাকবে বাংলাদেশের তরুণদের সামনে।

ঐতিহাসিক জয়ের পরে ড্রেসিংরুমে উৎসবে মেতে ওঠেন বাংলাদেশের ক্রিকেটারেরা। সেই উৎসবের ভিডিয়ো প্রকাশ করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। ‘আমরা করব জয়’ বাংলা গানে ক্রিকেটারদের চোখেমুখে শুধু জয়ের আনন্দই ধরা পড়ছিল না, দেখা যাচ্ছিল নতুন শপথও। বাংলাদেশের প্রশংসা করে অনেকেই বলতে থাকেন, ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অঘটন ঘটিয়ে টেস্টের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারিয়েছে মোমিনুল হকের দল। বলা হচ্ছিল, নিউজ়িল্যান্ড পায়নি কেন উইলিয়ামসনকে। তা হলে এটাও বলতে হবে যে, বাংলাদেশের দলে ছিলেন না শাকিব-আল-হাসান বা তামিম ইকবাল। প্রথমে ব্যাট করে নিউজ়িল্যান্ড তুলেছিল ৩২৮। লিটন দাস (৮৬) ও অধিনায়ক মোমিনুল হকের (৮৮) দাপটে দুরন্ত জবাব দিয়ে বাংলাদেশ তোলে ৪৫৮। এর পর দ্বিতীয় ইনিংসে ইবাদতের আগুনে বোলিং মাত্র ১৬৯ রানেই শেষ করে দেয় নিউজ়িল্যান্ডকে। জয়ের জন্য ৪০ রান তুলতে খুব সমস্যায় পড়েননি মুশফিকুর রহিমরা।

ঘরের মাঠে সতেরোটি টেস্টে অপরাজিত নিউজ়িল্যান্ড। সেই অশ্বমেধের ঘোড়া থামিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক মোমিনুল হক বলছেন, ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের সম্ভাবনায় মঙ্গলবার রাতে ঘুমোতেই পারেননি।

অন্য বিষয়গুলি:

Ebadot Hossain Bangladesh New Zealand
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE