—প্রতীকী চিত্র।
স্থানীয় ক্রিকেটে গড়াপেটার অভিযোগ নিয়ে ডামাডোল অব্যাহত। বুধবার সিএবি এ নিয়ে সভা ডাকলেও কর্তাদের মনোভাব বা কথাবার্তা থেকে মনে হয়নি, এমন তোলপাড় ফেলা অভিযোগ নিয়ে তাঁরা খুব কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছেন। উল্টে সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় দাবিতে অনড় থেকে বলেন, অন্য রাজ্য থেকে বাংলায় যে কোনও রকম ক্রিকেট খেলতে এলে বোর্ডের ‘নো অবজ়েকশন’ চিঠি লাগবে। তাঁর এই মন্তব্যে বিভ্রান্তি আরও বেড়েছে।
প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে সভা করেও স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়রা যে কোনও দৃষ্টান্তমূলক সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি, তাতেও রাজ্য সংস্থার ভাবমূর্তি মোটেও উজ্জ্বল হচ্ছে না। বল ঠেলে দেওয়া হয়েছে অ্যাপেক্স কাউন্সিলের কোর্টে। কিন্তু টাউন ও মহমেডান স্পোর্টিং, যাদের ম্যাচে গড়াপেটা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, তাদের কি শাস্তি দেওয়া হবে? সে রকম কোনও ইঙ্গিত বা প্রতিশ্রুতি মেলেনি। মহমেডান কর্তারা সভায় এসে নাকি স্বীকার করেছেন, ভুল করে একের পর এক দৃষ্টিকটূ ভাবে আউট হয়ে গিয়েছেন। এর জন্য মহমেডান কর্তাদের লাগবে কেন? আম্পায়ারের রিপোর্টেই তো পরিষ্কার লেখা ছিল, অক্রিকেটীয় শট খেলে মহমেডানের ব্যাটসম্যানেরা আউট হয়েছে। তার পরেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে এত গড়িমসি কেন?
টাউন ও মহমেডানের মধ্যে যে ম্যাচে গড়াপেটার অভিযোগ উঠেছে, তাতে টাউন ‘প্রোটেস্ট’ করে যে, মহমেডানের খেলোয়াড় হর্ষিত সাইনি হরিয়ানা থেকে এসে খেলেছেন বোর্ডের ‘নো অবজ়েকশন’ না নিয়ে। সূত্রের খবর, টাউনের অভিযোগের এই কথা শোনার পরেই না কি মহমেডানের ব্যাটসম্যানেরা মনোবল হারিয়ে দৃষ্টিকটূ ভাবে একের পর এক উইকেট বিসর্জন দিতে থাকেন। সেই সব কদর্য ভঙ্গিতে আউটের ভঙ্গির ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে। সিএবি এ দিনের বৈঠকে সেই ভিডিয়ো চালিয়ে দেখেছে। তার পরে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া দূরে থাক, ক্লাব দু’টিকে স্থানীয় লিগে খেলা চালিয়ে যেতেও দিচ্ছে। এখনও পর্যন্ত কোনও বিশেষ তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়নি অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য। টাউনের প্রধান কর্তা সিএবি-র যুগ্ম-সচিব দেবব্রত দাস। তিনি নিজে অস্বীকার করতে থাকলেও এই কলঙ্কিত ম্যাচে তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাঁর ক্লাব যে নিয়মটি দেখিয়ে ‘প্রোটেস্ট’ করেছে, তার অস্তিত্ব নিয়েই জোরালো প্রশ্ন উঠেছে। সিএবি পদাধিকারীকে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে কি না, তা নিয়েও ময়দানের একাংশ সরব।
ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চললেও ঢাকনা উপুড় করে দিচ্ছে কাস্টমসের একটি চিঠি। একই ‘প্রোটেস্ট’ হয়েছে তাদের এক খেলোয়াড় অধিরাজ জোহরির বিরুদ্ধে যে, অন্য রাজ্য থেকে এলেও ‘নো অবজ়েকশন’ নিয়ে আসেনি। কাস্টমস সিএবি-তে চিঠি জমা দিয়ে বলেছে, এই ‘নো অবজ়েকশন’ নেওয়ার প্রথাটাই তো নেই। দু’তিন বছর আগে সিএবি থেকে বোর্ডের কাছে এই প্রথা নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। বোর্ড থেকে তখন পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়, অন্য রাজ্য থেকে এসে ক্লাব ক্রিকেট খেলতে হলে ‘নো অবজ়েকশন’-এর দরকার নেই। সেই মতো সিএবি-র নিয়মের বইতেও সংশোধনও করা হয়েছিল। এখানকার স্থানীয় ক্রিকেটেও বোর্ডের থেকে এমন চিঠি আর লাগত না। তা হলে নতুন করে ‘নো অবজ়েকশন’ আনার এই নিয়ম কী করে বইতে ঢুকে পড়ল? আশ্চর্যজনক ভাবে, কাস্টমসের চিঠি নিয়ে সিএবি কর্তাদের মুখে কুলুপ। কেউ সাংবাদিকদের জানাননি এমন চিঠির কথা। তবে গড়াপেটার অভিযোগ নিয়ে তুলোধনা হতে থাকা রাজ্য ক্রিকেট সংস্থা যে কাস্টমসের চিঠিতে আরও চাপে পড়ে গিয়েছে, সন্দেহ নেই।
প্রসঙ্গত, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের জেনারেল ম্যানেজার অ্যাবে কুরুভিলা কয়েক দিন আগেই আনন্দবাজারকে স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, যদি কেউ এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতে চায়, একমাত্র সে ক্ষেত্রেই ‘নো অবজ়েকশন’ সার্টিফিকেট দরকার হয়। অন্য রাজ্যের ক্লাব ক্রিকেটে খেলতে এমন চিঠির প্রয়োজন নেই। হনুমা বিহারীর উদাহরণ দিয়ে বলে দেন, হায়দরাবাদের হয়ে রঞ্জি খেললেও হনুমা তামিলনাড়ুতে ক্লাব ক্রিকেট খেলেন। তাঁর কোনও ‘নো অবজ়েকশন’ লাগেনি। স্নেহাশিস এ দিন দাবি করেন, বাংলায় খেলতে এলে নাকি এই চিঠি জরুরি। কুরুভিলার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “উনি বলেছেন ক্লাব ক্রিকেটের কথা। সেখানে ‘নো অবজ়েকশন’ লাগে না। কিন্তু এখানে তো রাজ্য থেকে রাজ্যে ট্রান্সফার হচ্ছে। সেক্ষেত্রে এই চিঠি লাগবেই।” কিন্তু হর্ষিত তো বাইরের রাজ্য থেকে এসে ক্লাব ক্রিকেটই খেলছেন। তা হলে তো কুরুভিলার কথাই ঠিক।
পাল্টা প্রশ্ন উঠছে, বোর্ডে কী এক-এক রাজ্যের জন্য এক-এক রকম নিয়ম আছে? কুরুভিলা বোঝাতে পারলেন না? না কি স্নেহাশিসরা বুঝেও বুঝতে পারছেন না?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy