রোহিত শর্মার (মাঝে) শততম টেস্টের স্মারক তুলে দিচ্ছেন ব্রায়ান লারা (ডান দিকে)। সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি কিশোর শ্যালো। ছবি: টুইটার
মাঠের পাশাপাশি মাঠের বাইরেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ক্রিকেটের হাঁড়ির হাল বেরিয়ে এল। নিজের চেয়ার নিজেকেই সরিয়ে নিয়ে যেতে হল দেশের প্রাক্তন অধিনায়ক ব্রায়ান লারাকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ক্রিকেটারের চেয়ার সরানোর মতো কোনও লোক পাওয়া গেল না। এতটাই কি আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে ক্যারিবীয় ক্রিকেট যে সেখানে মাঠে পর্যাপ্ত কর্মীই নেই? প্রশ্ন উঠছে।
ভারত এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের মধ্যে ১০০তম টেস্ট উপলক্ষ্যে ম্যাচ শুরুর আগে একটি অনুষ্ঠান হয়। সেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের অধিনায়ক ক্রেগ ব্রেথওয়েট ও ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে বিশেষ সম্মান দেওয় হয়। ত্রিনিদাদ লারার ঘরের মাঠ। তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ় দলের মেন্টরও। সেই কারণে, তিনি মাঠে ছিলেন। লারার হাত থেকে সম্মান পান রোহিত।
সব শেষে দু’দলের ক্রিকেটারদের নিয়ে একটি গ্রুপ ফোটো তোলা হয়। সেখানে মধ্যমণি ছিলেন লারা। ছবি তোলা শেষে যখন ক্রিকেটারেরা উঠছেন তখন দেখা গেল সবাই নিজের নিজের চেয়ার নিয়ে যাচ্ছেন। লারাকেও একই কাজ করতে দেখা যায়। তার পরেই প্রশ্ন উঠেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ক্রিকেটের আর্থিক অবস্থা নিয়ে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের প্রাক্তন অধিনায়ক লারা সেই দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটার। দেশের হয়ে টেস্টে সব থেকে বেশি রান (১১,৯১২) তাঁর। এক দিনের ক্রিকেটেও ক্রিস গেলের পরে দ্বিতীয় স্থানে (১০,৩৪৮ রান) রয়েছেন তিনি। লারাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের এক মাত্র ব্যাটার যাঁর দুই ফরম্যাটেই ১০ হাজারের বেশি রান রয়েছে। শুধু তাই নয়, টেস্টে এক ইনিংসে ৪০০ রান করা একমাত্র ক্রিকেটার লারা। ২০০৪ সালে অ্যান্টিগায় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অপরাজিত ৪০০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। ত্রিনিদাদে টেস্ট শুরু হওয়ার আগে অনুশীলনের সময় লারাকে দেখে কথা বলার জন্য এগিয়ে গিয়েছেন বিরাট কোহলি। ভারতেও লারার অসংখ্য অনুরাগী। আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের কোচ তিনি। এ হেন লারাকেও নিজের চেয়ার তুলে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই দৃশ্যই ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ক্রিকেটের ভিতরের ছবিটা দেখিয়ে দিচ্ছে।
গত কয়েক বছর ধরে ক্রমশ অবনতি হয়েছে ক্যারিবীয় ক্রিকেটের। সরাসরি বোর্ডের সঙ্গে সংঘাতে গিয়েছেন ক্রিস গেল, ডোয়েন ব্র্যাভোদের মতো ক্রিকেটারেরা। দেশের হয়ে খেলার থেকে বিভিন্ন দেশের লিগে খেলায় বেশি আগ্রহ ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের ক্রিকেটারদের। তাই ভারতের বিরুদ্ধে এই সিরিজ়েও দেশের প্রথম সারির ক্রিকেটারেরা নেই। তার ফল ভুগতে হচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়কে। তাদের খেলার মান এতটাই নেমেছে যে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে ইনিংস ও ১৪১ রানে হারতে হয়েছে।
১৯৭৫ সালে এক দিনের বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর থেকে এই প্রথম বার যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়। যোগ্যতা অর্জন পর্বে জ়িম্বাবোয়ে, নেদারল্যান্ডসের মতো দুর্বল দলের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে দু’বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। অথচ ২০১৬ সালেও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন গেলরা। কিন্তু তার পরে গত কয়েক বছরে ক্যারিবীয় দলের খেলার মান ক্রমশ নেমেছে। দেশের প্রথম সারির অনেক ক্রিকেটার এখন দেশের হয়ে খেলতে চান না। ফলে দেশের জার্সিতে যাঁরা মাঠে নামছেন তাঁরা দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারির ক্রিকেটার। তার ফলে খেসারত দিতে হচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও ক্রিকেটীয় সংস্কৃতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ে। দর্শকদের যে ভিড় চোখে পড়ত সেটাও ধীরে ধীরে কমেছে। সে দেশের এই পরিস্থিতিতেই সেখানে খেলতে গিয়েছে ভারত। ২০১৯ সালের পরে আবার। তাই ভারতের হাত ধরেই ক্রিকেটকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে তারা। স্বপ্নপূরণের কথা ভাবছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়। ভারতের বিরুদ্ধে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ় খেলা মানেই ক্রিকেট বিশ্বের নজর সে দিকে থাকে। সেখানে ভাল খেলতে পারলেন নজরে পড়া যায়। এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ক্রিকেটের যা অবস্থা তাতে নতুন তারকা তাদের প্রয়োজন। আর তারকা হয়ে ওঠার মঞ্চ এর থেকে ভাল আর কী হতে পারে! কিন্তু সেখানে মাঠে ও মাঠের বাইরে যে ছবি ধরা পড়ছে তাতে ক্যারিবীয় ক্রিকেটের অসম্মান আরও বাড়ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy