জ্ঞান হওয়ার পরেই ছেলেটি বুঝতে পেরেছিল, বাকিদের থেকে সে আলাদা। কারণ, তার দুটো হাতই নেই। সেই কারণে, ছোট থেকে বাকিরা যা করতে পারত, উত্তরপ্রদেশের শিবম কুমার তা পারত না। তাতে অবশ্য দমে যায়নি সে। তুলে নেয় ক্রিকেট ব্যাট। ধীরে ধীরে সেই ব্যাটই হয়ে উঠেছে তার হাতিয়ার। এখন হাত ছাড়াই অবলীলায় চার, ছক্কা মারতে পারেন উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর জেলার বাসিন্দা শিবম। তাঁর প্রিয় ক্রিকেটার রোহিত শর্মা। ভারতের বিশেষ ভাবে সক্ষমদের দলে এক দিন তিনি খেলবেন, সেই স্বপ্নই দেখেন ২৪ বছরের শিবম।
ছ’বছর বয়স থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা তৈরি হয়েছিল শিবমের। টেলিভিশনের পর্দায় ভারতীয় দল খেলতে নামলেই বসে পড়তেন তিনি। প্রথম প্রথম ব্যাট চালাতে সমস্যা হত। ধীরে ধীরে তা রপ্ত করেন। বাঁ বগলে ব্যাট ধরেন শিবম। অর্থাৎ, শট মারতে গেলে গোটা দেহের শক্তি ব্যবহার করতে হয়। সে ভাবেই ব্যাট করেন শিবম।
প্রথমে বাড়িতেই খেলতেন শিবম। কিন্তু একা একা খেলতে ভাল লাগত না। মাঝে মাঝে মাঠে গিয়ে বাকিদের খেলা দেখতেন তিনি। এক দিন বন্ধুদের সঙ্গে খেলার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন তিনি। তা শুনে বন্ধুরা অবাক হয়েছিল। অনেকে হেসেছিল। কিন্তু দমার পাত্র ছিলেন না শিবম। তিনি ব্যাট করেন। তাঁর ব্যাটিং দেখে সকলে অবাক হয়ে যান। তার পর থেকে মাঠে সকলের সঙ্গেই খেলেন তিনি।
ধীরে ধীরে দলের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার হয়ে ওঠেন শিবম। একটি ম্যাচে শেষ ওভারে ২৮ রান দরকার ছিল। শিবম ২৩ রান করেছিলেন। দল হারলেও প্রত্যেকে তাঁর ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করেছিল। পুত্রের খেলার প্রতি এত ভালবাসা দেখে তাঁর বাবা-মা তাঁকে নতুন কিট কিনে দেন। উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জেলায় স্থানীয় প্রতিযোগিতা খেলতে যান শিবম। রান করেন। ভাল ক্যাচও ধরেন তিনি।
আরও পড়ুন:
রোহিতের ভক্ত তিনি। ভারতীয় দলের খেলা থাকলে রোহিতকে দেখার জন্যই বসে থাকেন শিবম। রোহিত যে ভাবে ছক্কা মারেন তা অনুশীলন করেন। কিন্তু এখনও পুল মারতে সমস্যা হয় তাঁর। শিবমের ইচ্ছা, এক দিন রোহিতের সঙ্গে তাঁর দেখা হবে। ভারতের বিশেষ ভাবে সক্ষমদের যে দল রয়েছে সেই দলে খেলতে চান শিবম। দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে চান তিনি।
সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রত্যয়ী শোনায় শিবমকে। তিনি বলেন, “আমি কোনও দিন মনে করিনি আমার দু’হাত নেই। ছোট থেকে ক্রিকেট ভালবাসি। তা নিয়েই এগোতে চাই। কোনও প্রতিবন্ধকতা আমাকে আটকাতে পারেনি। আগামী দিনেও পারবে না। এক দিন ভারতের হয়ে খেলবই।”
জম্মু-কাশ্মীরের প্যারাক্রিকেটার আমির হুসেন লোনের কথা সকলেই জানেন। সচিন তেন্ডুলকরও তাঁর প্রতিভা দেখে অবাক হয়েছিলেন। একটি ম্যাচে তাঁর সঙ্গে খেলেছিলেন সচিন। হাত ছাড়াই যে ভাবে গলার সাহায্যে তিনি ব্যাট করেছিলেন, বা ফিল্ডিং করেছিলেন তা দেখে সকলে মুগ্ধ হয়েছিলেন। আমিরের মতোই ক্রিকেট নিয়ে এগিয়ে যেতে চান শিবম। সেই লক্ষ্যেই নিজেকে তৈরি করছেন সাহারানপুরের ছেলে।