ঋদ্ধিমান সাহা। ছবি সংগৃহীত।
ঋদ্ধিমান সাহার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করবেন বলে জানালেন সাংবাদিক বোরিয়া মজুমদার। শনিবার বোর্ডের তৈরি করে দেওয়া তিন সদস্যের কমিটির কাছে তাঁকে হুমকি দেওয়া সাংবাদিকের নাম জানিয়েছেন ঋদ্ধি। যদিও সেই সাংবাদিকের নাম প্রকাশ্যে আনেননি ঋদ্ধি, কিন্তু তার পরেই একটি ভিডিয়ো টুইট করেন বোরিয়া। সেখানেই মানহানির মামলা করার কথা বলেছেন তিনি।
এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তাঁকে হুমকি দেওয়ার কথা ১৯ ফেব্রুয়ারি ঋদ্ধিমান টুইট করে জানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রকাশ্যে তাঁর নাম আনেননি। শুধু বলেন, শনিবার রাতে বোর্ডকে তিনি সব তথ্য দিয়েছেন। এর পরেই টুইট করে বোরিয়া বলেন, “ঋদ্ধিমান যে স্ক্রিনশট সামনে এনেছে, সেগুলি মিথ্যা, বিকৃত। আমার দেওয়া স্ক্রিনশট দেখুন। ঋদ্ধির স্ক্রিনশটে তারিখ মুছে দেওয়া হয়েছে। বহু বছর ধরে সাংবাদিকতা করছি। একাধিক ক্রিকেটারের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। এত বছরে তাদের অনেকেই আমার বন্ধু হয়ে গিয়েছে। ঋদ্ধিমানও তাদের এক জন। ওর অনেক সাক্ষাৎকার নিয়েছি, ওর কলম লিখেছি। কিন্তু আমি বিরক্ত, কারণ ঋদ্ধিমান আমার বার্তা বিকৃত করেছে, সেটা নিজের মতো করে তৈরি করে সকলের সামনে এনেছে।”
বোরিয়া ভিডিয়োতে ঋদ্ধিমানের পোস্ট করা স্ক্রিনশটের পাশাপাশি নিজের স্ক্রিনশটও সামনে আনেন। সেই দু'টি স্ক্রিনশট পাশাপাশি রেখে তিনি অভিযোগ করেন, “ঋদ্ধি ইচ্ছাকৃত ভাবে বার্তা পাঠানোর তারিখ মুছে দিয়েছেন এবং একটি মিসড কল মাঝখানে জুড়ে দিয়েছেন। উনি বোঝাতে চেয়েছেন যে এটা একই দিনের বার্তা। প্রথমত মিসড কলের সময় সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা আর তার আগে পাঠানো বার্তার সময় রাত ১০টা ১৯ মিনিট। দ্বিতীয়ত হোয়াটসঅ্যাপে আলাদা দিনে বার্তা পাঠালে তবেই মাঝে তারিখ আসে। আমার স্ক্রিনশট দেখলেই বোঝা যাবে ঋদ্ধি কী ভাবে মানুষকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।”
There are always two sides to a story. @Wriddhipops has doctored, tampered screenshots of my WhatsApp chats which have damaged my reputation and credibility. I have requested the @BCCI for a fair hearing. My lawyers are serving @Wriddhipops a defamation notice. Let truth prevail. pic.twitter.com/XBsiFVpskl
— Boria Majumdar (@BoriaMajumdar) March 5, 2022
ঋদ্ধি কেন এমন করেছেন তাও বলেছেন বোরিয়া। তিনি বলেন, “১ ফেব্রুয়ারি ঋদ্ধিমানের ম্যানেজার আমার বাড়ি এসেছিলেন। এক সঙ্গে কাজ করার সম্ভাবনা তৈরি হয়। ১০ ফেব্রুয়ারি আমি ঋদ্ধিমানের সঙ্গে কথা বলি একটি সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য। ১৩ ফেব্রুয়ারি আইপিএল-এর নিলামে যখন ঋদ্ধিমান ১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকায় বিক্রি হন, তখন আমার সহকর্মী দেবাশিস সেন ঋদ্ধির সঙ্গে যোগাযোগ করে সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য। সেই সময় ঋদ্ধি জানান পরের দিন কালীঘাট ক্লাবে কথা বলবেন। তখন আমি কথা বলি এবং জানাই, আমার পক্ষে পরের দিন কালীঘাট ক্লাবে যাওয়া সম্ভব হবে না। তাই জুমের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার নেওয়ার কথা জানাই। সেই সঙ্গে আমি কথা দিয়েছিলাম, পরের দিন কালীঘাট ক্লাবে বাকি সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার দেওয়ার পরেই আমি এই জুমের সাক্ষাৎকার সামনে আনব।”
বোরিয়া জানিয়েছেন, এর পরেই ঋদ্ধি রাজি হন সাক্ষাৎকার দিতে এবং বলেন ১৫ মিনিট পর বাড়ি ফিরে যোগাযোগ করবেন। বোরিয়া বলেন, “রাত ৮টার সময় ঋদ্ধি সাক্ষাৎকার দেবেন বলে জানান। জুমের সেই সাক্ষাৎকার রেকর্ড করার কথা ছিল। মনে রাখা দরকার, এই মানুষটিকে আমি ১২ বছর ধরে চিনি এবং আমরা বন্ধু। ঋদ্ধি বলেছিলেন বলে রাত ৮টা থেকে আমরা ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। সাত-আট বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ঋদ্ধি ফোন ধরেননি। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে আমরা যোগাযোগ করার চেষ্টা চালিয়ে যাই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে আমার বন্ধু ঋদ্ধিমানকে শেষ বার্তাটা পাঠাই। ওটা আগের বার্তাগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।”
টুইটে ঋদ্ধি লিখেছিলেন সেই সাংবাদিক তাঁকে হুমকি দিয়েছেন। বোরিয়া বলেন, “ঋদ্ধিমান বলেছেন আমি ওঁকে হুমকি দিয়েছি, কিন্তু আমি তা করিনি। যদি ঋদ্ধি সেই দিন এতটাই রেগে গিয়ে থাকতেন, তাহলে ১৩ ফেব্রুয়ারিই এই স্ক্রিনশট সামনে আনতে পারতেন। ওই দিন ঋদ্ধির আনন্দের দিন ছিল। প্রায় ২ কোটি টাকার দর উঠেছিল তাঁর। এই স্ক্রিনশট ১৩, ১৪, ১৫ ফেব্রুয়ারি সামনে আনা যেত। কিন্তু তিনি ১৯ তারিখ অবধি অপেক্ষা করেন। ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়েন। বার্তা বিকৃত করেন। তার পর সেগুলি সামনে আনেন রাত ১০টা ১২ মিনিটে। মানুষের সহানুভূতি পাওয়ার জন্য এমনটা করেছেন তিনি। আমি জানাতে চাই যে, ১৩ ফেব্রুয়ারির পর আমি কোনও ভাবে ঋদ্ধিমান সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করিনি। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আছে, যেটা আমি এখানে বলছি না। কিন্তু বোর্ডের কমিটির সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেলে তাদের কাছে আমি জানাবো। আমার আবেদন রইল, বিসিসিআই-এর কমিটির কাছে যাতে আমাকেও কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়।”
বোরিয়া জানিয়েছেন, ঋদ্ধির জন্যে তাঁর পরিবারকে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। তিনি বলেন, “ঋদ্ধিমান যা করেছেন, তার জন্য আমার আট বছরের মেয়ে, ৭২ বছরের মা, স্ত্রী এবং আমাকে ট্রোলড হতে হয়েছে। তাদের অত্যন্ত খারাপ ভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। এটা নেওয়া আমার পক্ষে কঠিন ছিল। আমি আঘাত পেয়েছিলাম। কিন্তু ঋদ্ধিমান যখন আমার নাম সকলের সামনে এনেছেন, তখন চুপ করে থাকার মানে নেই। আমার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এটা ঋদ্ধিমানের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার উপযুক্ত। খুব তাড়াতাড়ি আমরা ঋদ্ধিমানের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করব। নেটমাধ্যমে সেই নোটিসের ছবি আমি দেব। বিসিসিআই-এর তদন্ত কমিটির উপর আমার বিশ্বাস আছে। তার কাছে আবেদন করছি আমাকে কথা বলতে দেওয়ার জন্য। নেটমাধ্যম ব্যবহারকারীদের বলছি, এই গল্পের অন্য একটা দিক আছে। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, কাউকে ট্রোল করার আগে সেটাও জানুন। এই ঘটনায় আমি কোনও অন্যায় করিনি। আমি ঋদ্ধিমানকে হুমকি দিইনি। আমি ১৯ ফেব্রুয়ারি ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করিনি। স্ক্রিনশট বিকৃত করায় সেটাই মনে হয়েছে। ঋদ্ধিমান যদি স্ক্রিনশট বিকৃত না করতেন তাহলে আমার দিকে অভিযোগ তোলা যেত। ঋদ্ধি বলুন যে উনি স্ক্রিনশট বিকৃত করেননি। আমার গোটা কেরিয়ারে আমি কখনও কাউকে হুমকি দিইনি। খেলোয়াড়দের কথা আমি গর্বের সঙ্গে তুলে ধরেছি। সেই জন্যই শেষ ২০ বছর ধরে তাঁরা আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। আমি ঋদ্ধিমানের সামনে দাঁড়িয়ে বিসিসিআই-এর সঙ্গে কথা বলতে চাই এই বিষয়ে। মানহানির মামলা করার নোটিস আমি টুইটারে পোস্ট করব।”
শনিবার বোর্ডের কমিটির সঙ্গে বৈঠকের পর ঋদ্ধি বলেন, "যা হয়েছে আমি সব বলেছি বিসিসিআই-কে। ওদের থেকেই আপনারা জানতে পারবেন।"
বোর্ডের সহ-সভাপতি রাজীব শুক্ল শনিবার জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের সঙ্গে কথোপকথন নিয়ে যাবতীয় তথ্য বোর্ডের কমিটিকে জানিয়েছেন ঋদ্ধি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy