মনোজ তিওয়ারি। —ফাইল চিত্র।
আর একটি মাত্র ম্যাচ। তার পরেই ক্রিকেট কেরিয়ার শেষ মনোজ তিওয়ারির। শুক্রবার থেকে ইডেনে বিহারের বিরুদ্ধে রঞ্জি ম্যাচ খেলতে নামবে বাংলা। আর সেটাই মনোজের শেষ ম্যাচ। এ বারের রঞ্জিতে বাংলারও শেষ ম্যাচ সেটি। এমন অবস্থায় মনোজ যদিও চাইছেন না তাঁর শেষ ম্যাচ নিয়ে দল কোনও আবেগ দেখাক। ম্যাচ জেতাটাই মূল লক্ষ্য তাঁর। এর মাঝেই ২০ শতাংশ ম্যাচ ফি কাটা গিয়েছে মনোজের। মুখ খুললেন রাজনীতি নিয়েও।
রঞ্জি ট্রফি শুরু হতে তখন মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। এমন একটা সময় ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মনোজ তিওয়ারির নাম জড়িয়ে পড়েছিল হাওড়ার ক্রিসমাস কার্নিভ্যাল বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে। এক পক্ষের দাবি, মন্ত্রীর অনুগামীরা জটলা পাকিয়ে গন্ডগোলের পরিবেশ তৈরি করেছিলেন। যার জেরে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। পাল্টা মনোজ দাবি করেছেন, বেআইনি ভাবে পার্কিং থেকে টাকা তোলা হচ্ছিল বলেই তিনি কার্নিভ্যালে গিয়েছিলেন। বেআইনি পার্কিং নিয়ে তাঁর আপত্তি ছিল। দাবি, পাল্টা দাবির রাজনীতিতে মনোজ যখন জর্জরিত, ঠিক সেই সময়েই বাংলা নামছিল রঞ্জি খেলতে।
রঞ্জিতে ১০ হাজার রান করা মনোজ যদিও মনে করেন না সেই ঘটনার প্রভাব জীবনের শেষ ক্রিকেট মরসুমে তাঁর খেলায় পড়েছে। আনন্দবাজার অনলাইনকে মনোজ বললেন, “আমি রাজনীতির সঙ্গে ক্রিকেটকে কখনও মেশাই না। হাওড়ার ঘটনাটা নিয়ে আলোচনা বেশি হয়েছে। কিন্তু আমাকে তো সারা জীবনই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লড়াই করতে হয়েছে। রাজনীতির জায়গায় রাজনীতিকে রেখেই তো ক্রিকেট খেলেছি। ক্রিকেট খেলতে নেমে আমি রাজনীতির কথা ভাবি না। আজ পর্যন্ত কখনও রাজনীতির জন্য আমার ক্রিকেটের ক্ষতি হয়নি। মাঠে নেমে গেলে আর অন্য কোনও বিষয় মাথায় থাকে না।”
কেরল ম্যাচের সময় মনোজের একটি টুইট ঘিরে চাঞ্চল্য তৈরি হয়। রঞ্জি ট্রফি তুলে দেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। সেই কারণে মনোজের ২০ শতাংশ ম্যাচ ফি কেটে নেওয়া হয়েছে। প্রতি ম্যাচে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা করে পান প্রথম একাদশে থাকা ক্রিকেটারেরা। মনোজের ২৮ হাজার টাকা কাটা গিয়েছে। রঞ্জি ট্রফি নিয়ে তাঁর করা পোস্ট সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে বাংলার অধিনায়ক কিছু বলতে চাননি। শেষ ম্যাচের আগে বিতর্ক তৈরি করতে চাইছেন না বাংলার বহু যুদ্ধের নায়ক।
এ বারের রঞ্জি শুরুর আগেই মনোজ জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, এটাই তাঁর শেষ রঞ্জি। বাংলার হয়ে রঞ্জি জেতার শেষ চেষ্টা করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাংলা গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে। শেষ ম্যাচ জিতলেও কোনও লাভ হবে না। মনোজ যদিও চাইছেন শেষ ম্যাচ থেকে ৭ পয়েন্ট নিয়ে মাথা উঁচু করে মাঠ ছাড়তে। মনোজ বললেন, “আমি চাই না আমার শেষ ম্যাচ নিয়ে কোনও আবেগ তৈরি হোক। নিজেও ভাবছি না এটা। আশা করি দলও ভাববে না। আমাদের লক্ষ্য শেষ ম্যাচ থেকে ৭ পয়েন্ট তুলে নেওয়া। মাথা উঁচু করে এ বারের রঞ্জি শেষ করতে চাই।”
যে রঞ্জি জেতার জন্য মরিয়া ছিলেন মনোজ, সে বারেই বাংলা পেল না অভিমন্যু ঈশ্বরণ, মুকেশ কুমার, আকাশ দীপ এবং শাহবাজ় আহমেদকে। মনোজ বললেন, “এই চার ক্রিকেটার বাংলার শেষ দুটো রঞ্জিতে বড় ভূমিকা নিয়েছিল। ওরাই বাংলাকে সেমিফাইনাল, ফাইনালে তুলেছিল। কিন্তু এ বারে প্রথম থেকেই ওদের না পাওয়াটা বড় ধাক্কা হয়ে যায়। বাংলাকে একটা বদলের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। বেশ কিছু ক্রিকেটারের অভিষেক হয়। নতুনদের মানিয়ে নিতে একটু সময় তো লাগবেই।”
এ বারের রঞ্জিতে বাংলার গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যাওয়া প্রসঙ্গে মনোজ বললেন, “চার জন ক্রিকেটারকে বাদ দিয়েও আমরা লড়াই করার জন্য তৈরি ছিলাম। কিন্তু আবহাওয়া আমাদের বিরুদ্ধে গেল। উত্তরপ্রদেশের বিরুদ্ধে আমরা জেতার মতো জায়গায় ছিলাম। কিন্তু খেলাই হল না পুরো ম্যাচ। ছত্তীসগঢ়ের বিরুদ্ধেও সময় নষ্ট হল। সেই ম্যাচেও পুরো খেলা হয়নি। পর পর দু’ম্যাচে এমন হওয়ায় আমরা অনেকগুলো পয়েন্ট হারাই। সেটা একটা বড় ফ্যাক্টর। তবে মুম্বই এবং কেরলের বিরুদ্ধে আমরা খেলতে পারিনি। নিজেদের দোষে হেরেছি। আসলে পর পর সব কিছু খারাপ হলে কোথাও নতুনদের মনঃসংযোগটা নড়ে যায়। আমাদের দলে এই মরসুমে এত জন নতুন ক্রিকেটার খেলেছে যে, হয়তো সেটা একটা সমস্যা হয়েছে।”
২০ বছর আগে বাংলার হয়ে অভিষেক হয়েছিল মনোজের। তিনি জায়গা করে নিয়েছিলেন ভারতীয় দলেও। দেশের হয়ে ১২টি এক দিনের ম্যাচ এবং তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন মনোজ। বাংলাকে বহু ম্যাচ জেতানোর নায়ক তিনি। দেশের হয়ে একটি শতরান করেছিলেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩০টি শতরান আছে তাঁর। এ বারের রঞ্জিতেও শতরান করেছেন। সেই মনোজ বিশ্বাস করেন আগামী দিনে বাংলার এই ক্রিকেটারেরাই ট্রফি জেতাবে। তিনি বলেন, “বাংলার হয়ে বেশ কয়েক জন ক্রিকেটারের অভিষেক হয়েছে এ বারের রঞ্জিতে। সকলে এক সঙ্গে ভাল খেলবে এমনটা তো সম্ভব নয়। ওদের এখনও অনেকটা শেখা বাকি। সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে ওরা যাচ্ছে। আশা করি আগামী বছর ওরা ভাল খেলে বাংলাকে সাফল্য এনে দেবে।”
শুক্রবার বিহারের বিরুদ্ধে বাংলার শেষ ম্যাচ। মনোজ তাঁর কেরিয়ারের শেষ ম্যাচে নামবেন অধিনায়ক হিসাবে। সঙ্গে থাকবেন অভিমন্যু ঈশ্বরণ, সুদীপ ঘরামি, অনুষ্টুপ মজুমদারেরা। ভারতীয় দলে থাকা মুকেশ কুমারকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এই ম্যাচ খেলার জন্য। দলে রয়েছেন মহম্মদ কাইফ এবং সূরজ সিন্ধু জয়সওয়ালও। তাঁরাই বাংলার পেস আক্রমণ সামলাবেন। খেলবেন অলরাউন্ডার শাহবাজ় আহমেদ। দুর্বল বিহারের বিরুদ্ধে পুরো শক্তি নিয়েই নামতে চলেছেন মনোজ। আত্মবিশ্বাসী অধিনায়ক বললেন, “আমি চাইব দল খেলায় মনোযোগ দিক। আমার শেষ ম্যাচ নিয়ে ভাবার দরকার নেই। জানি আবেগ থাকবে। কিন্তু সেটার প্রভাব ম্যাচে পড়া উচিত নয়। আগে জিতব তার পর বাকি সব কিছু।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy