Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Debrup Dasgupta

Debrup Dasgupta: কলকাতায় ক্রিকেট-পাঠ, নেদারল্যান্ডসের জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়ছেন বঙ্গসন্তান দেবরূপ

নেদারল্যান্ডসের বয়সভিত্তিক দলে খেলেছেন। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের যোগ্যতাঅর্জন পর্বেও। এ বার জাতীয় দলে ঢুকতে চান বাঙালি দেবরূপ।

দেবরূপ দাশগুপ্ত।

দেবরূপ দাশগুপ্ত। নিজস্ব চিত্র

অভীক রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২২ ১৩:৫৪
Share: Save:

কলকাতায় জন্ম তাঁর। প্রথম ছ’বছর কাটিয়েছেন এই শহরেই। মাঝে ছিলেন আরও দু’বছর। পেয়েছেন মূল্যবান ক্রিকেটশিক্ষা। বাঙালি দেবরূপ দাশগুপ্ত কড়া নাড়ছেন নেদারল্যান্ডসের জাতীয় ক্রিকেট দলে। সে দেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্ব খেলেছেন। এ বার লক্ষ্য সিনিয়র জাতীয় দলেও নিজের জায়গা পাকা করা।

কিছু দিন আগে আনন্দবাজার অনলাইনে গোবরডাঙার রোমিয়ো নাথের খবর প্রকাশ্যে এসেছিল। তুরস্কের জাতীয় দলে খেলেন রোমিয়ো। এ বার আরও এক বাঙালির সঙ্গে ইউরোপের প্রথম সারির ক্রিকেট দলের যোগাযোগ মিলল। পরিবারের সঙ্গে দেবরূপ এখন থাকেন আমস্টারডামে। সেখানে এক দিকে যেমন পড়াশুনো করছেন, তেমনই চুটিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন ক্রিকেট খেলাও। মাঝে বেশ কিছু দিন ক্রিকেট থেকে দূরে থাকলেও এখন তিনি পুরোদমে প্রস্তুতিতে নেমে পড়েছেন।

দেবরূপদের আদি বাড়ি কলকাতার টালিগঞ্জে। প্রথম ছ’বছর তিনি কাটিয়েছেন কলকাতায়। তখন সে ভাবে ক্রিকেট খেলা বুঝতেন না। এর পর বাবার চাকরিসূত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ চলে যাওয়া। সেখানেই ক্রিকেটে হাতেখড়ি। প্রথম দিকে ফুটবলও খেলতেন ভালই। ধীরে ধীরে ক্রিকেটকে ভালবেসে ফেলেন। শুরুতে বোলার হিসাবে খেলতেন। এখন ব্যাটিংও জোরালো করে তুলেছেন। জোহানেসবার্গের স্থানীয় একটি ক্রিকেট ক্লাবে খেলা শিখতেন নিয়মিত।

অনুশীলনে দেবরূপ

অনুশীলনে দেবরূপ নিজস্ব চিত্র

চার বছর জোহানেসবার্গে কাটিয়ে কলকাতায় ফিরে আসা। তবে ক্রিকেট থামেনি। কলকাতা ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হয়ে যান। সপ্তাহান্তে বিবেকানন্দ পার্কে চলত ক্রিকেট-সাধনা। কলকাতায় কাটানো ওই দু’টি বছর ক্রিকেটে তাঁকে আরও দক্ষ করে তোলে। সঙ্গে ছিল বাবা-মায়ের উৎসাহ। কলকাতার দু’টি বেসরকারি স্কুলে সেই সময় পড়াশুনো করেছেন। ২০১৬-য় বাবার চাকরিসূত্রেই আমস্টারডামে চলে যাওয়া।

সেখানে গিয়ে নিজের প্রতিভা দেখানোর আরও ভাল সুযোগ পান। ভর্তি হয়ে যান আমস্টারডামের ভিআরএ ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে। সাহায্য পেয়েছেন পিটার বরেনের, যিনি দীর্ঘ দিন নেদারল্যান্ডসের জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন। দেবরূপের খেলার টেকনিক এবং ছোটখাটো ভুলত্রুটি শুধরে দেন বরেনই। এর পরেই অনূর্ধ্ব-১২ জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে যান দেবরূপ। অনূর্ধ্ব-১৬ পর্যন্ত নেদারল্যান্ডসের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে খেলেছেন। অধিনায়কও ছিলেন। সেখানে খেলতে খেলতেই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের দলে সুযোগ পান।

বয়সভিত্তিক দলে খেলার সময় দেবরূপ

বয়সভিত্তিক দলে খেলার সময় দেবরূপ নিজস্ব চিত্র

স্পেনের আলমেরিয়াতে গত বছর যোগ্যতা অর্জন পর্ব হয়েছিল। সেখানে জার্সি এবং স্কটল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিরুদ্ধে হেরে যায় দেবরূপের দল। তবে শক্তিশালী আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে দেয় তারা। যদিও বিশ্বকাপের শিকে ছেঁড়েনি। প্রথম দু’টি ম্যাচ হারায় বিদায় নিতে হয়। তা সত্ত্বেও লাভ হয় দেবরূপের। নেদারল্যান্ডসের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনের মতো ম্যাচে খেলা অনেকটাই অভিজ্ঞ করে তুলেছে তাঁকে।

বৃহস্পতিবার সন্ধেয় আমস্টারডাম থেকে ফোনে আনন্দবাজার অনলাইনকে দেবরূপ বললেন, “অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের মতো ম্যাচে খেলার অনুভূতি সত্যিই আলাদা। গ্রুপের তিনটে ম্যাচেই আমি খেলেছি। আয়ারল্যান্ডের মতো দলকে হারানো সহজ ছিল না। সেটা করে দেখাই আমরা।” ২০ বছরের দেবরূপের কাছে এখন আর বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে খেলার সুযোগ নেই। তাই পাখির চোখ জাতীয় দলই।

রটারডামের ইরাসমাস বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক অর্থনীতি এবং বাণিজ্য অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করছেন দেবরূপ। তাঁর ফাকেই চলছে ক্রিকেট খেলা। পড়াশোনার কারণে মাঝে ক্রিকেট থেকে কিছু দিন বিরতি নিতে হয়েছিল তাঁকে। এখন আবার ক্রিকেটে মনোনিবেশ করেছেন। বললেন, “যে হেতু এখানে ক্রিকেট প্রধান খেলাগুলির মধ্যে নয়, তাই শুধু ক্রিকেট খেলে কেরিয়ার গড়া সম্ভব নয়। তাই অল্পস্বল্প পড়াশোনাও করতে হয় সবাইকে।” দেবরূপের সামনে সুযোগ ছিল ইংল্যান্ডে গিয়ে পড়াশোনা এবং ক্রিকেট খেলার। তবে ব্রেক্সিটের পর ইংল্যান্ডে পড়াশোনার খরচ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে বলে যেতে পারেননি। আপাতত তাঁর লক্ষ্য, স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করতে যাতে ইংল্যান্ডে যাওয়া যায়। বললেন, “ওখানে ছোটখাটো অনেক ক্লাব রয়েছে। পরিকাঠামোও খুবই ভাল। ফলে ইংল্যান্ডে গেলে ক্রিকেট খেলার সুযোগ অনেক বেশি। কাউন্টি ক্রিকেটেও খেলতে পারি।”

বোলিং করছেন দেবরূপ

বোলিং করছেন দেবরূপ নিজস্ব চিত্র

ইউরোপের ছোটখাটো দেশের ক্রিকেট দলে যে জিনিস দেখা যায়, নেদারল্যান্ডসও তার ব্যতিক্রম নয়। সে দেশের ক্রিকেট দলেও রয়েছে এশিয়া মহাদেশের ক্রিকেটারদের আধিক্য। বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং অবশ্যই ভারতের ক্রিকেটারদের সংখ্যা তুলনায় বেশি। যদিও সেই পরিস্থিতি ক্রমশ বদলাচ্ছে বলে জানালেন দেবরূপ। তাঁর কথায়, “এখন নেদারল্যান্ডসে ধীরে ধীরে ক্রিকেট জনপ্রিয় হচ্ছে। সেই কারণে এখানকার বিভিন্ন ক্লাব থেকেও অনেক দেশীয় ক্রিকেটার উঠে আসছে। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার অনেকে এখানে বহু বছর ধরে রয়েছে। তারাও নেদারল্যান্ডসের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার লড়াইয়ে রয়েছে। ফলে আমার কাছে কাজটা মোটেই সহজ নয়।”

কলকাতার ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে বছর দুয়েক কাটানোর সুবাদে দেবরূপ মেনে নিয়েছেন, দু’দেশের পরিকাঠামোর অনেক তফাত। বলেছেন, “কলকাতার ছোট ছোট অনেক ক্লাব পরিকাঠামোর দিক থেকে এগিয়ে। সবচেয়ে বড় পার্থক্য হল কোচেদের। কলকাতার কোচেদের প্রশিক্ষণ অনেক উন্নত। টেকনিকের ব্যাপারে ওঁরা অনেক ভাল বোঝেন। এখানকার কোচেদের প্রশিক্ষণ অতটা উন্নত নয়। জাতীয় স্তরে সেরা কোচেদের প্রশিক্ষণ পাওয়া যায়। তবে ক্লাবস্তরের কোচিং এখনও খুব ভাল নয়।” জানিয়েছেন, কোচিংয়ের মান ভাল না হলেও ক্রিকেট সম্পর্কে যথেষ্ট উৎসাহ রয়েছে সে দেশে। শুধু আমস্টারডামেই পাঁচ-ছ’টি ক্লাব রয়েছে। গোটা দেশে সংখ্যাটা ভালই। নেদারল্যান্ডসের ঘরোয়া ক্রিকেটও বেশ জনপ্রিয়। ‘টপক্লাসে’ বলে একটি ঘরোয়া লিগ হয়, যেখানে অংশ নেয় বিভিন্ন ক্লাব।

জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে দেবরূপের সামনে একটি সমস্যা হল, সেখানকার ক্রিকেট সংস্থার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। বাকি দেশগুলির মতো নেদারল্যান্ডস ক্রিকেটেও অল্পবিস্তর স্বজনপোষণ রয়েছে। তবে প্রতিভা থাকলে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া কঠিন কাজ নয় বলেই জানালেন দেবরূপ।

ভারতীয় ক্রিকেট সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল। বিরাট কোহলীর অন্ধভক্ত দেবরূপ। প্রিয় তারকার ছন্দ খারাপ যাচ্ছে বলে একটু মন খারাপ। তবে বাকি ক্রিকেটপ্রেমীদের মতো তাঁরও আশা, দ্রুত ছন্দে ফিরবেন কোহলী। এ ছাড়া, তিনি পছন্দ করেন শুভমন গিলের খেলা। গুজরাত টাইটান্সকে আইপিএলে জেতাতে যে ভাবে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছেন শুভমন, তা ভাল লেগেছে। দেবরূপ জানালেন, নেদারল্যান্ডসে আইপিএল খুবই জনপ্রিয়। তিনি নিজে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে সমর্থন করেন। সুযোগ থাকলে প্রতিটি ম্যাচ দেখার চেষ্টা করেন।

কিন্তু এ দেশে, এ শহরে হয়তো তাঁর খেলা হবে না। কারণ, তিনি চান, নেদারল্যান্ডসেই ক্রিকেট খেলতে। দেশে ফিরে ক্রিকেট খেলার কোনও ইচ্ছে আপাতত তাঁর নেই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy