Advertisement
E-Paper

Axar Patel: বাবার টাকা নিয়ে অক্ষর নিজের দল গড়েছিলেন স্কুলে

ছেলে অক্ষর পটেল সে ভাবে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন না। বিকেলের দিকে টেনিস বলের ক্রিকেট খেলতে যেতেন বন্ধুদের সঙ্গে।

মধ্যমণি: সিরিজ় জিতে কোহালিদের সঙ্গে উৎসব অক্ষরের।

মধ্যমণি: সিরিজ় জিতে কোহালিদের সঙ্গে উৎসব অক্ষরের। ছবি— পিটিআই।

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:৫২
Share
Save

ছোটবেলা থেকেই বন্ধু অন্তপ্রাণ। পাড়ার ক্রিকেট হোক অথবা স্কুল, নিজেই ব্যাট-বল কিনে নিয়ে যেতেন। নাদিয়াদের বাসুরিওয়ালা পাবলিক হাইস্কুলে পড়ার সময় তাঁর মা চাইতেন ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হোক। কিন্তু বাবা রাজেশভাই পটেল বরাবরই ক্রিকেটপ্রেমী। তাঁর স্বপ্ন ছিল, ছেলে যেন ক্রিকেটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন পূরণ করতে না পারলেও রাজ্য স্তরে যেন পরিচিত হতে পারে।

ছেলে অক্ষর পটেল সে ভাবে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন না। বিকেলের দিকে টেনিস বলের ক্রিকেট খেলতে যেতেন বন্ধুদের সঙ্গে। ব্যাট হাতে তাঁর স্ট্রোক নেওয়ার ভঙ্গি দেখে বন্ধুরা নাম রেখেছিলেন ‘নাদিয়াদের জয়সূর্য’। বোলিংয়ের জন্য তখনও পরিচিত ছিলেন না আজকের ভারতীয় ক্রিকেট দলের তারকা। ব্যাটিংয়ের জন্যই বিভিন্ন জায়গা থেকে খেলার জন্য ডাক পড়ত।

অক্ষরের লক্ষ্য যদিও ছিল লাল বলের ক্রিকেট খেলার। তাঁর বাবা এক দিন প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘বড় হয়ে তুই কী হতে চাস?’’ অক্ষর বলেছিলেন, ‘‘ক্রিকেটার হলে ভাল লাগবে।’’ তার পর থেকেই বাবা তাঁকে স্থানীয় এক ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেন। আন্তঃ-স্কুল প্রতিযোগিতার সময় অক্ষর লক্ষ্য করেন, তাঁর স্কুল সেখানে নাম দেয়নি। স্কুল জানিয়ে দিয়েছিল, প্রতিযোগিতার প্রবেশ মূল্য তারা বহন করবে না। মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল অক্ষরের। বন্ধুদের নিয়ে দল গড়ে প্রত্যেকের থেকে কিছু টাকা নিয়ে প্রবেশ মূল্য দেওয়ার উপায়ও নেই। কারণ, বন্ধুদের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না। বাবাকে গিয়ে বিষয়টি জানান অক্ষর। তাঁর থেকে টাকা নিয়ে প্রতিযোগিতার প্রবেশ মূল্য দেন। বন্ধুদের নিয়ে একটি দলও গড়া হয়। সেই দলের অধিনায়ক হন তিনিই। ব্যাটে-বলে দাপট দেখিয়ে দলকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন অক্ষর। সেই দিন থেকে তাঁর বাবা ও খুড়তুতো দাদা সনশিপ পটেল ধরেই নিয়েছিলেন, এই প্রতিভা নষ্ট হওয়ার নয়।

অক্ষরের ছোটবেলার কোচ অমরীশ পটেল বলছিলেন, ‘‘শুরুতে ব্যাটিং ছাড়া কিছুই করতে চাইত না। বাঁ-হাতে মিডিয়াম পেস বল করতে পারত, তবে সে রকম গতি ছিল না।’’ বয়সভিত্তিক স্তরের একটি ম্যাচে কোচের পরামর্শে স্পিন বোলিং শুরু করেন অক্ষর। বাঁ-হাতে পেস বল করার অভ্যাস থেকেই জোরের উপরে স্পিন করানোর চেষ্টা করতেন। তাঁর এই চেষ্টাই এখন আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে। জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে এম বেঙ্কটরামনের প্রশিক্ষণে কয়েক দিন ফ্লাইট দিয়ে বল করার চেষ্টা করার পরে অক্ষর বোঝেন, এ ধরনের বোলিং তাঁর জন্য নয়। ব্যাটারের রান আটকে উইকেট নেওয়ার পথেই হাঁটেন। বাকি স্পিনারদের চেয়ে অক্ষরের বলে তাই গতি বেশি।

অক্ষরের দাদা সনশিপের কথায়, ‘‘গুজরাতে ক্লাব এবং জেলা স্তরে ওয়ান ডে ও টি-টোয়েন্টি ছাড়া কোনও রকম প্রতিযোগিতা হয় না। মাঠ ছোট। ম্যাটিং উইকেটে খেলা হয়। বলে ফ্লাইট দিলে ব্যাটার সহজেই রান করে। তাই অক্ষরও নিজের বোলিংয়ের ধরন পাল্টায়নি। বল হাতে খুব বেশি রান দিয়ে দিলে ওকে হয়তো দলেই নেওয়া হত না।’’ ক্লাব স্তরে বল ও ব্যাট হাতে নজর কাড়ার পরে ১৮ বছর বয়সে রাজ্য স্তরে অভিষেক হয় অক্ষরের। দ্বিতীয় ম্যাচেই দিল্লির বিরুদ্ধে ৫৫ রানে ছয় উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে যোগ দেন অক্ষর। একটিও ম্যাচ না খেললেও হরভজন সিংহের কাছে মূল্যবান পরামর্শ পেয়ে ফিরে আসেন। ২০১৪ সালে কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের (বর্তমানে পঞ্জাব কিংস) হয়ে এক মরসুমে ১৭ উইকেট নেন অক্ষর। দরজা খুলে যায় ভারতীয় দলের। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অভিষেক হওয়ার পরে সাত বছর অপেক্ষা করতে হয় লাল বলের ক্রিকেটে সুযোগ পাওয়ার জন্য। টেস্ট জীবনে পা রাখতেই অক্ষর যেন হ্যারি পটারের ‘জাদুদণ্ড’ হাতে পেয়ে গিয়েছিলেন। যা ঘোরাতেই উইকেটের বৃষ্টি শুরু হয় তাঁর জীবনে। মাত্র পাঁচ টেস্ট খেলে তাঁর উইকেটসংখ্যা ৩৬। ইনিংসে পাঁচবার পাঁচ উইকেট দখলের কীর্তিও রয়েছে। নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতেও তাঁর দাপট অবাক করেছে স্বয়ং রাহুল দ্রাবিড়কে।

প্রাক্তন বাঁ-হাতি স্পিনার বেঙ্কটপতি রাজু বলছিলেন, ‘‘অক্ষরের সবচেয়ে বড় সুবিধে ওর উচ্চতা। ব্যাট হাতেও ওর চমক দেখার পরে আমি নিশ্চিত, ও লম্বা রেসের ঘোড়া।’’

Axar Patel Team India

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}