ক্রিকেট জীবনে সাফল্যের সঙ্গে বার বার বিতর্ক সঙ্গী হয়েছে সাইমন্ডসের। তার মধ্যে অন্যতম 'মাঙ্কি গেট' বিতর্ক। যেখানে ভারতীয় স্পিনার হরভজন সিংহের সঙ্গে গণ্ডগোলে জড়িয়ে পড়েন সাইমন্ডস। ২০০৮ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সিরিজে দলের বৈঠক ছেড়ে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন সাইমন্ডস।
৪৬ বছর বয়সে প্রয়াত অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস। ফাইল চিত্র
মাত্র ৪৬ বছর বয়সে গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ক্রিকেটার অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস। পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয় সময় রাত ১১টা নাগাদ সাইমন্ডসের গাড়ি অ্যালিস রিভার ব্রিজ থেকে বাঁদিকে যাওয়ার সময় উল্টে যায়। ক্রিকেট জীবনে যে ভাবে বার বার সবাইকে চমকে দিয়েছেন, ঠিক তেমনই সাইমন্ডসের মৃত্যুও হল হঠাৎ করে। কারও কিছু বুঝে ওঠার আগেই চলে গেলেন। ক্রিকেট কেরিয়ারে বিতর্ক কখনও পিছু ছাড়েনি তাঁর। এক দিকে যেমন ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বকাপ-সহ অনেক ট্রফি জিততে সাহায্য করেছেন, তেমন বার বার তাঁর নাম জড়িয়েছে বিতর্কে। কখনও মত্ত অবস্থায় মাঠে নেমেছেন, কখনও দলের বৈঠকের সময় মাছ ধরতে চলে গিয়েছেন। উশৃঙ্খলতার জন্য নির্বাচকদের কোপে পড়েছেন বার বার। বহু দিন দলে সুযোগ না পেয়ে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন সাইমন্ডস।
১৯৯৮ সালের ১০ নভেম্বর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এক দিনের ক্রিকেটে অভিষেক হয় সাইমন্ডসের। টেস্টে অবশ্য সুযোগ পান অনেক পরে। ২০০৪ সালের ৮ মার্চ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক হয় তাঁর। ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টি২০ ক্রিকেটেও অভিষেক হয় সাইমন্ডসের। ১৯৮টি এক দিনের ম্যাচে ৫০৮৮ রান করেছেন সাইমন্ডস। রয়েছে ছ’টি শতরান। টেস্ট অবশ্য অনেক কম খেলেছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২৬টি টেস্টে দু’টি শতরান-সহ ১৪৬২ রান করেছেন তিনি। জাতীয় দলে তাঁকে আদর করে ‘রয়’ নামে ডাকা হত। বল হাতেও সমান দক্ষ ছিলেন সাইমন্ডস। এক দিনের ক্রিকেটে ১৩৩ ও টেস্টে ২৪টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। কখনও ডান হাতি মিডিয়াম পেস তো কখনও অফ স্পিন করতেন এই ঝাঁকড়া চুলের ক্রিকেটার।
আক্রমণাত্মক ক্রিকেটার ছিলেন সাইমন্ডস। অস্ট্রেলিয়ার মিডল অর্ডারের অন্যতম বড় ভরসা ছিলেন। একার দক্ষতায় ম্যাচের ছবি বদলে দিতে পারতেন। তেমনই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেটও তুলে নিতেন। ফিল্ডার হিসাবেও দুরন্ত ছিলেন তিনি। সাইমন্ডসের ফিল্ডিংয়ের প্রশংসা করেছেন জন্টি রোডসও। এক দিনের ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার স্বর্ণযুগের অন্যতম বড় হাতিয়ার ছিলেন সাইমন্ডস। ২০০৩ ও ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভাল ছন্দে ছিলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়াকে সেই দু’বার বিশ্বকাপ জিততে সাহায্য করেন সাইমন্ডস।
আইপিএলও খেলেছেন সাইমন্ডস। ২০০৮ সালে প্রথম মরসুমে তাঁকে কেনে ডেকান চার্জার্স। সেই বছর রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে একটি শতরানও করেন সাইমন্ডস। পরের দু’বছর ডেকানের হয়েই খেলেন তিনি। ২০০৯ সালে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয় তাঁর দল। ২০১১ সালের নিলামে সাইমন্ডসকে কেনে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। কিন্তু খুব একটা ভাল খেলতে পারেননি তিনি। তাই পরের বছর তাঁকে ছেড়ে দেয় মুম্বই। তার পর আর আইপিএলে সাইমন্ডসকে কোনও ফ্যাঞ্চাইজি কেনেনি।
ক্রিকেট জীবনে সাফল্যের সঙ্গে বার বার বিতর্ক সঙ্গী হয়েছে সাইমন্ডসের। তার মধ্যে অন্যতম 'মাঙ্কি গেট' বিতর্ক। যেখানে ভারতীয় স্পিনার হরভজন সিংহের সঙ্গে গণ্ডগোলে জড়িয়ে পড়েন সাইমন্ডস। হস্তক্ষেপ করতে হয় আইসিসিকে। ২০০৮ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সিরিজে দলের বৈঠক ছেড়ে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন সাইমন্ডস। মত্ত অবস্থায় মাঠে নেমেছেন তিনি। তাঁর মদ্যপানের স্বভাবের খেসারত সাইমন্ডসকে বহু বার দিতে হয়েছে। দল থেকে বাদ পড়েছেন। খেলার প্রতি ও অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
টেস্ট কেরিয়ার মাত্র চার বছরেই শেষ হয়ে যায় সাইমন্ডসের। ২০০৮ সালের পরে আর দলে সুযোগ পাননি তিনি। ২০০৯ সালের পর এক দিনের দলেও ব্রাত্য হয়ে ওঠেন সাইমন্ডস। সে বছরই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে শেষ টি২০ ম্যাচও খেলে ফেলেন। তার পরেও দলে ফেরার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু তত ক্ষণে দল থেকে তাঁর জায়গা পাকাপাকি ভাবে বাদ হয়ে গিয়েছে। তাই ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন সাইমন্ডস। তার পর ধারাভাষ্যকার হিসেবে মাইক হাতে তুলে নেন তিনি। যোগ দিয়েছিলেন ভারতের রিয়ালিটি শো ‘বিগ বসে’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy