Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Ashes 2023

অ্যাশেজ়ে দিনের শেষবেলায় নাটক! শতরান করে আউট হয়েও বাঁচলেন খোয়াজা, লড়ছে অস্ট্রেলিয়া

দ্বিতীয় দিনের শুরুটা ভাল না হলেও অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসকে সামলালেন উসমান খোয়াজা ও ট্রাভিস হেড। দিনের শেষে ১২৬ রানে অপরাজিত রয়েছেন খোয়াজা।

Usman Khawaja

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শতরান করে উল্লাস অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার উসমান খোয়াজার। ছবি: পিটিআই

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২৩ ২২:৫৭
Share: Save:

দ্বিতীয় নতুন বল নিয়ে প্রথম ওভারেই উসমান খোয়াজার রক্ষণ ভাঙেন স্টুয়ার্ট ব্রড। ইংরেজ পেসারের বল গিয়ে লাগে উইকেটে। ১১২ রান করে তখন খেলছিলেন খোয়াজা। আউট হওয়ার পরে হতাশ খোয়াজা যখন সাজঘরে ফিরছেন তখনই আম্পায়ার জানান, নো বল করেছেন ব্রড। ফলে বেঁচে যান খোয়াজা। সেই ভুলের খেসারত দিতে হল ইংল্যান্ডকে। দিনের শেষ পর্যন্ত আর কোনও ভুল করলেন না খোয়াজা। দ্বিতীয় দিনের শেষে তাঁর ব্যাটে ভর করে অস্ট্রেলিয়ার রান ৫ উইকেটে ৩১১। ইংল্যান্ডের থেকে এখনও ৮২ রানে পিছিয়ে থাকলেও লড়াই করছে অস্ট্রেলিয়া। প্রথম সেশনে টপ অর্ডারকে হারিয়েও খেলা থেকে হারিয়ে যায়নি তারা।

ইংল্যান্ডের বাজ়বলের পাল্টা দিলেন খোয়াজা। সেই ধ্রুপদী টেস্ট ক্রিকেট। কোনও তাড়াহুড়ো নেই। প্রতিটি বল দেখে সেই অনুযায়ী শট খেলা। ধৈর্যের পরীক্ষা দেওয়া। অফ স্টাম্পের বাইরের একের পর এক বল ছেড়ে বোলারদের বাধ্য করা গায়ে বল করতে। তার পর নিজের পছন্দের জায়গায় শট মারা। সব কিছুই দেখালেন খোয়াজা। তাঁর পাশাপাশি আবার বাজ়বল খেলতে দেখা গেল ট্রাভিস হেডকে। তিনি চাপের মধ্যে পাল্টা আক্রমণ করলেন। ফলে খোয়াজাও কিছুটা সময় পেলেন নিজেকে গুছিয়ে নিতে। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের মেরুদণ্ড খোয়াজা হলেও দলকে আত্মবিশ্বাস দিয়ে গেল হেডের ৫০ রানের ইনিংস।

দ্বিতীয় দিনের শুরু থেকে বার্মিংহ্যামের আকাশে ছিল মেঘ। আবহাওয়া সুইং বোলিংয়ের উপযুক্ত ছিল। তাকে কাজে লাগান ইংল্যান্ডের পেসাররা। শুরু থেকেই গুড লেংথে বল করছিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড, ওলি রবিনসন, জেমস অ্যান্ডারসনরা। ফলে অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও খোয়াজা স্বচ্ছন্দে খেলতে পারছিলেন না।

অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম ধাক্কা দেন ব্রড। ওয়ার্নারকে বোল্ড করেন তিনি। তবে ওয়ার্নারকে আউট করার ক্ষেত্রে ব্রডের কৃতিত্ব খুব একটা বেশি নয়। টেস্ট ক্রিকেটের অনুপযুক্ত শট খেলে আউট হন ওয়ার্নার। রান করতে না পারার চাপের অফ স্টাম্পের অনেকটা বাইরের বল মারতে যান তিনি। বল ব্যাটে লেগে উইকেটে লাগে। পরের বলেই মার্নাশ লাবুশেনকে আউট করেন ব্রড। সে ক্ষেত্রে অবশ্য পুরো কৃতিত্ব ব্রডেরই। প্রথম বলেই লাবুশেনকে ব্যাট ছোঁয়াতে বাধ্য করেন তিনি। বল ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষক জনি বোয়ারস্টোর দস্তানায় যায়। শূন্য রানে ফেরেন টেস্ট ক্রমতালিকায় বিশ্বের সেরা ব্যাটার।

পর পর দু’বলে ২ উইকেট পড়ার পরে খোয়াজার সঙ্গে জুটি বাঁধেন স্টিভ স্মিথ। ধীরে ধীরে দলের রানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন তাঁরা। প্রথম সেশনেই সাত বোলারকে ব্যবহার করেন অধিনায়ক বেন স্টোকস। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির ঠিক আগেই স্মিথকে ফেরান স্টোকস। তাঁর বল গুড লেংথে পড়ে ভিতরের দিকে ঢুকে স্মিথের প্যাডে গিয়ে লাগে। আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দেন। স্মিথ রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি।

প্রথম সেশনে ইংল্যান্ডের পেসাররা দাপট দেখালেও দ্বিতীয় সেশনে ম্যাচে ফেরে অস্ট্রেলিয়া। ৩ উইকেট পড়ার পরে দলের ইনিংসকে ধরার দায়িত্ব ছিল খোয়াজা ও হেডের উপর। দ্বিতীয় সেশনে সেই কাজটাই করলেন তাঁরা। অযথা তাড়াহুড়ো না করে ঠান্ডা মাথায় খেললেন। বল অনুযায়ী শট মারলেন। তার ফল পেল অস্ট্রেলিয়া। খোয়াজা নিজের পরিচিত ছন্দে খেলছিলেন। সময় নিয়ে, ধৈর্য ধরে রান করছিলেন তিনি। অন্য দিকে হেডও নিজের পরিচিত ছন্দে খেলছিলেন। কয়েক দিন আগেই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে শতরান করেছেন তিনি। তাই তাঁর ব্যাটিংয়ে আত্মবিশ্বাস দেখা যাচ্ছিল। ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণের নীতিতে খেললেন তিনি। যেমনটা করেছিলেন ভারতের বিরুদ্ধে। দ্রুত রান করছিলেন হেড। ইনিংসকে ধরে রাখার কাজ করছিলেন খোয়াজা। ১০৬ বলে নিজের অর্ধশতরান পূরণ করেন তিনি।

অন্য দিকে মাত্র ৬২ বলে ৫০ রান করেন হেড। ৮টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন তিনি। কিন্তু তার পরেই ছন্দপতন। মইন আলির বল উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে উইকেট দিয়ে আসেন তিনি। সেই ওভারেই নিজের দ্বিতীয় উইকেট পেতে পারতেন মইন। ব্যাট করতে নেমেই উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে শট মারতে যান ক্যামেরন গ্রিন। বলের লাইন মিস করেন তিনি। উইকেটরক্ষক জনি বেয়ারস্টোর কাছে সুযোগ ছিল স্টাম্প আউট করার। কিন্তু তিনি বল ধরতে পারেননি। ফলে বেঁচে যান গ্রিন।

দুই ব্যাটারের মধ্যে ৭২ রানের জুটি হয়। চা বিরতির পরে মইনের বলে ৩৮ রানের মাথায় বোল্ড হন গ্রিন। খোয়াজা অবশ্য নিজের খেলা চালিয়ে যান। স্টোকসকে চার মেরে ১৯৯ বলে নিজের ১৫তম টেস্ট শতরান করেন তিনি। ইংল্যান্ডের মাটিতে এটি তাঁর প্রথম শতরান। ২০১৫ সালের পরে আবার অস্ট্রেলিয়ার কোনও ওপেনার অস্ট্রেলিয়ায় টেস্টে শতরান করলেন।

অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের সুবিধা করেন দিলেন ইংল্যান্ডের ফিল্ডাররা। ২৬ রানের মাথায় জো রুটের বলে অ্যালেক্স ক্যারের ক্যাচ ছাড়েন বেয়ারস্টো। সেই ভুলের খেসারতও দিতে হয় ইংল্যান্ডকে। অর্ধশতরান করেন ক্য়ারে। ১১২ রানের মাথায় ব্রডের নো বলে বেঁচে যান খোয়াজা। দিনের শেষে ক্রিজে দুই ব্যাটারই। খোয়াজা ১২৬ ও ক্যারে ৫২ রানে অপরাজিত রয়েছেন। এই দু’জনের ব্যাটেই প্রথম ইনিংসে লিড নেওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন প্যাট কামিন্সরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE