ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলছেন স্টিভ স্মিথ। ছবি: রয়টার্স
ইংল্যান্ডকে তাদের মতো করেই জবাব দিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম দিনই বাজ়বল (টেস্টে ইংল্যান্ডের আক্রমণাত্মক খেলার ধরন) খেললেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ব্যাটার স্টিভ স্মিথ ও মার্নাশ লাবুশেন। ওভারপ্রতি চার রানের বেশি তুললেন তাঁরা। পাল্টা আক্রমণের পথে গেলেন। আর তাতেই খেই হারাল ইংল্যান্ডের বোলিং। দ্বিতীয় সেশনেই কিছুটা চাপে পড়ে গিয়েছেন বেন স্টোকসরা।
মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পরেই ডেভিড ওয়ার্নারকে আউট করেন জশ টং। ইংল্যান্ডের পেসারের ভিতরের দিকে ঢুকে আসা বল বুঝতে না পেরে ৬৬ রান করে বোল্ড হন ওয়ার্নার। স্টাম্প ভেঙে দেন টং। কিন্তু সেই উইকেটের লাভ তুলতে পারলেন না ইংল্যান্ডের বোলারেরা। স্মিথ-লাবুশেন জুটিকে ভাঙতে পারলেন না স্টোকসরা। দ্রুত রান তুললেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ব্যাটার।
ওয়ার্নার আউট হওয়ার পরে লাবুশেনের সঙ্গে জুটি বাঁধেন স্মিথ। প্রথম থেকেই আত্মবিশ্বাসী ক্রিকেট খেলছিলেন তাঁরা। তাঁদের খানিকটা সুবিধা করে দেন ইংল্যান্ডের বোলারেরা। ব্যাটারদের পা লক্ষ্য করে বেশি বল করেন তাঁরা। ফলে মিড অন ও মিড উইকেট অঞ্চলে রান করতে সমস্যা হচ্ছিল না। মাঝেমধ্যে দু’একটি বল সমস্যায় ফেলছিল দুই ব্যাটারকে। স্মিথ ও লাবুশেনকে এক বার করে আউটও দিয়ে দেন আম্পায়ার। কিন্তু দু’বারই রিভিউ (আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে বিরুদ্ধে আবেদন) নিয়ে বেঁচে যান অসি ব্যাটাররা।
চা বিরতির আগে দলের সব বোলারকে ব্যবহার করেন স্মিথ। এমনকি বল করেন জো রুটও। কিন্তু দুই ব্যাটারকে আউট করতে পারেননি তাঁরা। চা বিরতিতে ইংল্যান্ডের রান ২ উইকেটে ১৯০। স্মিথ ৩৮ ও লাবুশেন ৪৫ রান করে ব্যাট করছেন। ১২৮ বলে ৯৪ রানের জুটি বেঁধেছেন তাঁরা।
আকাশে মেঘ থাকায় টসে জিতে বল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন স্টোকস। ইংল্যান্ডের অধিনায়কের সিদ্ধান্ত কাজেও লেগে যেত, যদি না অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনারের ক্যাচ পড়ত। ইংল্যান্ডকে এই ভুলের খেসারত দিতে হল। প্রথম বল থেকেই সুইং ছিল পিচে। তাই অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার খুব সাবধানে খেলা শুরু করেন। পঞ্চম ওভারের পঞ্চম বলে জেমস অ্যান্ডারসনের বল খোয়াজার ব্যাটের কানায় লেগে স্লিপে যায়। জো রুট ক্যাচ ধরার চেষ্টা করেও পারেননি। হাত আরও কিছুটা আগে নিয়ে যেতে পারলে ক্যাচ ধরতে পারতেন রুট। মাঝে বৃষ্টির জন্য খেলা কিছু ক্ষণ বন্ধ থাকে।
১৩ তম ওভারের শেষ বলে আবার ক্যাচের সুযোগ পায় ইংল্যান্ড। এ বার স্টুয়ার্ট ব্রডের বল ওয়ার্নারের ব্যাটে লেগে তৃতীয় স্লিপের কাছে যায়। ওলি পোপ হাত লাগালেও বল ধরতে পারেননি। বলের গতি বুঝতে পারেননি পোপ। তাই ক্যাচ ফস্কান তিনি। এই ক্যাচ পড়ার পরেই রানের গতি বাড়ান ওয়ার্নার। নিজের শট খেলা শুরু করেন তিনি। কভার এলাকায় বেশ কয়েকটি চার মারেন এই বাঁ হাতি ব্যাটার।
টংয়ের একটি বাউন্সারে ছক্কা মেরে নিজের অর্ধশতরান পূর্ণ করেন ওয়ার্নার। মাত্র ৬৬ বলে ৫০ করেন তিনি। দেখে মনে হচ্ছিল, প্রথম সেশনে কোনও উইকেট পড়বে না অস্ট্রেলিয়ার। কিন্তু মধ্যাহ্নভোজের বিরতির আগে শেষ ওভারের প্রথম বলেই বোল্ড হন খোয়াজা। টংয়ের বল অফ স্টাম্পের বাইরে পড়েছিল। বল বাইরে যাচ্ছে ভেবে ছেড়ে দেন তিনি। কিন্তু বল পিচে পড়ে ভিতরের দিকে ঢুকে এসে অফ স্টাম্পে লাগে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ঠিক একই কায়দায় আউট হয়েছিলেন ভারতের শুভমন গিল ও চেতেশ্বর পুজারা। খোয়াজা আউট হতেই বিরতি হয়ে যায়।
অ্যাশেজ সিরিজ়ে ১-০ এগিয়ে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। প্রথম টেস্ট জিতেছে তারা। কিন্তু কেন এই সিরিজ়কে অ্যাশেজ বলা হয়? তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ইতিহাস। যা কিছুটা ব্যঙ্গাত্মক। খানিকটা শোকেরও। ১৮৮২ সালে ওভালে আয়োজিত টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথম হেরেছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ফ্রেড স্পফোর্থের অনবদ্য বোলিংয়ের কাছে হারতে হয়েছিল ইংরেজদের। চতুর্থ ইনিংসে ৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে পারেনি তারা। স্পফোর্থ ৪৪ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। ০-১ ব্যবধানে সিরিজ় হেরে গিয়েছিল। পরের দিন ইংল্যান্ডের সংবাদপত্র ‘দ্য স্পোর্টিং টাইমস্’ তাদের প্রতিবেদনে ক্রিকেট দলের তীব্র সমালোচনা করেছিল। লেখা হয়েছিল, ইংরেজ ক্রিকেটকে চিরস্মরণীয় করে রাখল ওভালের ২৯ আগস্ট, ১৮৮২ তারিখটি। গভীর দুঃখের সাথে বন্ধুরা তা মেনে নিয়েছে। ইংরেজ ক্রিকেটকে ভস্মীভূত করা হয়েছে এবং ছাইগুলো অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া হয়েছে। এর পরের বছর সিরিজ় পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় যায় ইংল্যান্ড। সংবাদমাধ্যমের ব্যঙ্গ মনে রেখে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক আইভো ব্লাই বলেছিলেন, তাঁরা অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন।
সেই সময় কয়েক জন অস্ট্রেলীয় মহিলা ব্লাইকে আগের সিরিজ়ে পরাজয় নিয়ে পাল্টা ব্যঙ্গ করে ছাইভর্তি একটি পাত্র দিয়েছিলেন। যাতে ছিল উইকেটের উপরে থাকা বেলের ছাই। তার পর থেকে দু’দেশের টেস্ট সিরিজ় ‘অ্যাশেজ’ বলে পরিচিত হয়। ব্লাই অবশ্য ছাইয়ের সেই আধারটি ব্যক্তিগত উপহার হিসাবে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। বিজয়ী দলকে ট্রফি হিসাবে তা দেওয়া হত না তখন। ব্লাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী লর্ডসের এমসিসি জাদুঘরে সেই পাত্রটি দান করে দিয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy