Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
দস্তানার দাপট
Asia Cup 2022

Asia Cup 2022: পাক কেল্লা বিজয়ে নায়ক ‘নয়া’ হার্দিক

তিন বলে বাকি ছিল ছয় রান। চতুর্থ বলে বাঁ-হাতি স্পিনার মহম্মদ নওয়াজ়কে গ্যালারিতে ফেলে দেওয়ার পরেও অদ্ভুত শান্ত ছিল হার্দিক।

জয়ের ছয়: বল হাতে ২৫ রানে তিন উইকেট। তার পরে ব্যাটেও ১৭ বলে অপরাজিত ৩৩। দুবাইয়ে এশিয়া কাপে হার্দিক পাণ্ড্য।

জয়ের ছয়: বল হাতে ২৫ রানে তিন উইকেট। তার পরে ব্যাটেও ১৭ বলে অপরাজিত ৩৩। দুবাইয়ে এশিয়া কাপে হার্দিক পাণ্ড্য।

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২২ ০৭:৪৬
Share: Save:

চার বছর আগের এশিয়া কাপের একটি দৃশ্য মনে পড়ে যাচ্ছিল। যন্ত্রণায় মাটিতে পড়ে ছটফট করছে এক ক্রিকেটার। এর পরে তাকে স্ট্রেচারে করে মাঠের বাইরে নিয়ে যাওয়া হল।

চার বছর পরে সেই এশিয়া কাপেই প্রত্যাবর্তন ঘটল অলরাউন্ডার হার্দিক পাণ্ড্যের। পিঠের চোট যাকে দীর্ঘদিন বল করতে দেয়নি। তিন বলে বাকি ছিল ছয় রান। চতুর্থ বলে বাঁ-হাতি স্পিনার মহম্মদ নওয়াজ়কে গ্যালারিতে ফেলে দেওয়ার পরেও অদ্ভুত শান্ত ছিল হার্দিক। মাঠ ছাড়ার সময়ে এ বার আর যন্ত্রণা নয়, স্মিত একটা হাসি সঙ্গীছিল ছেলেটার।

এ তো শুধু নিজের ফিরে আসা নয়। এক বছর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের কাছে হারের প্রতিশোধটাও যেন নিয়ে ফেলল ভারত। পাকিস্তানের ১৪৭ রান পাঁচ উইকেট হারিয়ে তুলে দিল রোহিত শর্মার দল। হার্দিক অপরাজিত থাকল ১৭ বলে ৩৩ রান করে। এর সঙ্গে তো রয়েইছে তিন উইকেট।

আইপিএলে গুজরাত টাইটান্সকে চ্যাম্পিয়ন করানোর পরে হার্দিকের আত্মবিশ্বাসটা অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও যার প্রভাব পড়ছে। আইপিএল থেকে অলরাউন্ডারহার্দিকের প্রত্যাবর্তনটা শুরু হয়েছিল। এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে সেই প্রত্যাবর্তন পূর্ণতা পেল।

রান তাড়া করতে নেমে ম্যাচটা একটা সময়ে একটু কঠিন জায়গায় চলে এসেছিল। তিন ওভারে বাকি ছিল ৩২। নিজের অভিষেক ম্যাচে অসাধারণ বল করে গেল নাসিম শাহ। প্রথম ওভারে কে এল রাহুল, দ্বিতীয় স্পেলে সূর্যকুমার যাদবের উইকেট ছিটকে দিয়ে পাকিস্তানকে ম্যাচে রেখে দিয়েছিল। কিন্তু শেষ দিকে গরমে কাবু হয়ে পড়ল ছেলেটা। নিজের চতুর্থ ওভারে ক্র্যাম্পের শিকার হল। ওই ওভারের পঞ্চম বলে একটা ছয় মেরে ম্যাচ অনেকটা ধরে নেয় রবীন্দ্র জাডেজা। শেষ দু’ওভারে প্রয়োজন ছিল ২১। হ্যারিস রউফের ১৯তম ওভারে উঠল ১৪। ওই ওভারে তিনটে চার মেরে ম্যাচের ভাগ্য মোটামুটি ঠিক করে দেয় হার্দিক।

পাকিস্তানকে সবচেয়ে সমস্যায় ফেলে দেয় ওভার রেট। নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে ওভার রেটে পিছিয়ে থাকার জেরে শেষ তিন ওভারে এক জন বাড়তি ফিল্ডারকে বৃত্তের মধ্যে রাখতে বাধ্য হল বাবর আজ়ম। যার সুবিধেটাও পেল ভারত।

রোহিতদের পেস আক্রমণের সামনে পাকিস্তান ১৪৭ রানে শেষ হয়ে যাওয়ার পরে মনে হয়েছিল, ম্যাচটা জিততে খুব একটা সমস্যা হবে না ভারতের। বিশেষ করে যেখানে রোহিত শর্মা, কে এল রাহুল এবং বিরাট কোহলি খেলছে। কিন্তু প্রথম দু’জন ভীষণই হতাশকরল। রাহুল তো নাসিমের দ্বিতীয় বলেই বোল্ড। বিরাটকে দেখে মনে হচ্ছিল, নিজের শততম ম্যাচে বড় ইনিংস খেলার রাস্তায় হাঁটছে। যে ভাবে শুরুর দিকে স্ট্রোক খেলছিল, তাতে বোঝা যাচ্ছিল রান পেতে কতটা মরিয়া। কিন্তু বাঁ-হাতি স্পিনার নওয়াজ়কে মারতে গিয়ে উইকেট দিয়ে এল। ঠিক যে ভাবে আগের ওভারে একই স্পিনারের শিকারহয়েছিল রোহিত।

ভারতীয় ডাগআউটে যে শেষ পর্যন্ত হাসি ফিরল, তার নেপথ্যে অবশ্যই এই নতুন হার্দিক। পিঠের চোট অনেক ভুগিয়েছে ওকে। বোলিং করা সাময়িক ভাবে ছেড়ে দিতে হয়েছিল। ভারতীয় দল থেকে ছিটকে গিয়েছিল। কিন্তু সব কিছু সামলে নিজেকে ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে নেমেছিল হার্দিক। প্রথমে বল হাতে এবং পরে ব্যাটে পাকিস্তান জয় করে মাঠ ছাড়ল ও।বলে যদি শর্ট পিচড ডেলিভারি হার্দিকের প্রধান অস্ত্র হয়ে থাকে, তবে ব্যাটসম্যান হার্দিক মন কেড়ে নিল শর্টআর্ম পুল শটে।

এ দিনের দুবাই স্টেডিয়ামের পিচটা আগের দিনের মতো কালচে ছিল না। কিছুটা সাদা, অর্থাৎ জল সে রকম দেওয়া হয়নি। শুরুর দিকে সুইং সে রকম ছিল না, কিন্তু বাউন্স ছিল। আর সেই বাউন্স কাজে লাগিয়ে বাজিমাত করে দিয়ে গেল ভারতের দুই পেসার— ভুবনেশ্বর কুমার এবং হার্দিক। ভুবি নিল চারটে, হার্দিক তিনটে। পাকিস্তানের ১০টি উইকেটই তুলে নিল ভারতীয় পেসাররা।

একটা অদ্ভুত ব্যাপার দেখলাম পাকিস্তান ইনিংসে, যা আগে কোনও টি-টোয়েন্টি ম্যাচে দেখিনি। পাকিস্তানের প্রথম পাঁচটি উইকেটই পড়ল শর্ট বলে। এই মুহূর্তে বিশ্বের সম্ভবত সেরা ব্যাটসম্যান বাবরের উইকেটটা ভুবি তুলে নিল খুব বুদ্ধি খাটিয়ে। শর্ট বলটা এমন জায়গায় রেখেছিল, যেখানে বাবর পুল শট খেলতে বাধ্য হয়। সহজ ক্যাচ চলে যায় অর্শদীপ সিংহের কাছে। দ্বিতীয় উইকেট আবেশ খানের। শর্ট বলে আলতো করে ছোঁয়া লেগেছিল ফখর জ়মানের ব্যাটে। ব্যাটসম্যান নিজে না বেরিয়ে গেলে আম্পায়ার কী সিদ্ধান্ত নিতেন, কে জানে।এর পরে তিনটে শর্ট বলে পাকিস্তানের তিন ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেয় হার্দিক। দেখলাম, ওর অন্যান্য ডেলিভারির চেয়ে শর্ট বলের গতি বেশি হল, যা ব্যাটসম্যানদের আরও সমস্যায় ফেলে দেয়। এর পরে ভুবি ফিরে এসে ডেথ ওভারে তিন উইকেট তুলে নেয়। ডেথ ওভারে ভাল বল করল অর্শদীপও। এই বাঁ-হাতি পেসার কিন্তু ভারতের বড় অস্ত্র হয়ে উঠতেপারে ভবিষ্যতে।

জয়ের দিনেও একটা কথা বলতেই হবে। ঋষভ পন্থকে বসিয়ে দীনেশ কার্তিককে খেলানোর কিন্তু যুক্তি নেই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE