আফগানিস্তানকে হারানোর পর নাসিমকে ঘিরে উচ্ছ্বাস পাক ক্রিকেটারদের। ছবি: টুইটার।
গ্যালারিতে তখন আফগানিস্তানের জাতীয় পতাকার সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দিচ্ছে ভারতের জাতীয় পতাকা। চক চক করছে ভারতীয় সমর্থকদের চোখ-মুখ। পাকিস্তানের হার মানেই টিকে থাকবে ভারত। অন্য দিকে, পাকিস্তানের সমর্থকদের মুখ থমথমে। শেষ দু’ওভারে চার উইকেট হারিয়ে সহজ ম্যাচ কঠিন করে ফেলেছেন পাক ক্রিকেটাররা।
শেষ ওভারে বাবর আজমদের দরকার ১১ রান। উইকেটে স্বীকৃত কোনও ব্যাটার নেই। পড়ে গিয়েছে নয় উইকেট। এক বলেই খেলা শেষ করে দিতে পারেন রক্তের স্বাদ পেয়ে যাওয়া আফগান বোলাররা। কিন্তু নাসিম শাহ বুঝিয়ে দিলেন তাঁর স্নায়ু ইস্পাত কঠিন। ইনিংসের শেয ওভারের প্রথম বল উড়িয়ে দিলেন সোজা উইকেটের উপর দিয়ে। ছয়। উচ্ছ্বাস ছড়াল পাক সমর্থকদের মধ্যে। আফগান বোলার ফজলহক ফারুকির দ্বিতীয় বলও উড়ে গেল গ্যালারিতে। আনন্দে দৌড়তে শুরু করলেন নাসিম। উল্লাস ছড়িয়ে পড়ল পাক সমর্থকদের মধ্যে। এশিয়া কাপের ফাইনালে চলে গেল পাকিস্তান। পাক সাজঘরে ফিরে এল শারজায় শেষ বলে জাভেদ মিয়াঁদাদের বিখ্যাত ছক্কার আমেজ।
গ্যালারির রং বদলে গেল। পাকিস্তানের পতাকার দাপটে গুটিয়ে গেল বাকি সব। পাহাড় প্রমাণ চাপের মুখে কী ভাবে পারলেন জয় ছিনিয়ে নিতে? দেশকে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ জিতিয়ে স্বাভাবিক নাসিম। সাবলীল দু’বলের ঝোড়ো ইনিংসের মতোই। পাক জোরে বোলার বললেন, ‘‘নেটে ব্যাটিং অনুশীলন করি মন দিয়ে। এমন ছয় মাঝে মাঝেই মারি অনুশীলনের সময়। বিশ্বাস ছিল পারব। বেশি কিছু ভাবার সুযোগ ছিল না। অনুশীলনে যেটা করি, ঠিক সেটাই করার চেষ্টা করেছি। দলকে জেতাতে পেরে ভাল লাগছে।’’ ব্যাট করতে নামার সময় কি কোনও পরামর্শ পেয়েছিলেন সতীর্থদের থেকে? নাসিম জানিয়েছেন, ‘‘চাপ নিতে বারন করেছিল সবাই। ফলের কথা না ভেবে সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করতে বলা হয়েছিল। সেটাই করেছি। তাতেই ফল মিলেছে।’’
প্রবল চাপের মুখে তাঁর ম্যাচ জেতানো বিশাল দু’টি ছয় নিশ্চিত ভাবেই অনেক দিন মনে রাখবেন পাকিস্তানের ক্রিকেট সমর্থকরা। মনে রাখবেন ভারত এবং আফগানিস্তানের ক্রিকেটপ্রেমীরাও। এই ম্যাচ মনে থাকবে নাসিমেরও। ম্যাচের পর নিজেই বলেছেন সে কথা। তাঁর প্রশংসা করেছেন পাক অধিনায়ক বাবর আজমও। ম্যাচের পর তিনি মেনে নিয়েছেন, সাজঘরে সকলেই ভীষণ চাপের মধ্যে ছিলেন।
বাবর বলেছেন, ‘‘সাজঘরে খুব চাপের মধ্যে ছিলাম আমরা। ভাল জুটি তৈরি করতে পারিনি আমরা। শেষ কয়েকটা ম্যাচেও এই সমস্যা হয়েছে। কিন্তু নাসিম যে ভাবে ম্যাচ শেষ করল, এক কথায় দুর্দান্ত। ওর ছয় দেখে শারজায় জাভেদ মিয়াঁদাদের সেই বিখ্যাত ছক্কার কথা মনে পড়ছে।’’
সহজ লক্ষ্য পেয়েও কেন এমন চাপ তৈরি হল? বাবর কৃতিত্ব দিয়েছেন আফগান বোলারদের। তিনি বলেছেন, ‘‘রশিদ খান, মহম্মদ নবিরা দারুণ বল করেছে। বিশ্বের সেরা স্পিনাররা আফগানিস্তান দলে রয়েছে। ওদের বিরুদ্ধে শট খেলা সব সময়ই ঝুঁকির। আমাদের বোলারদেরও কৃতিত্ব দিতে চাই। ওরা আগ্রাসী মেজাজে শুরু করার পরেও ১৩০ রানের মধ্যে আটকে রাখা গিয়েছে। তবে সব থেকে বেশি কৃতিত্ব নাসিমেরই। ছন্দটা ধরে রাখতে হবে আমাদের। যে ভুলগুলো এই ম্যাচে হয়েছে, সেগুলো আর করা চলবে না। পরের ম্যাচটাও জিততে চাই। ওটা আরেকটা নতুন ম্যাচ। সে ভাবেই খেলব আমরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy