ব্যাট হাতে ছক্কা হাঁকিয়ে নাসিম পাকিস্তানকে এশিয়া কাপের ফাইনালে তুললেন। ছবি: টুইটার থেকে
শেষ ওভারে ফজলহক ফারুকির বলটা লং অফের উপর দিয়ে মাঠের বাইরে উড়ে যেতেই হেলমেট খুলে ফেললেন নাসিম শাহ। দৌড়াতে শুরু করলেন আনন্দে। ব্যাট হাতে ছক্কা হাঁকিয়ে তিনি যে পাকিস্তানকে এশিয়া কাপের ফাইনালে তুলে ফেললেন।
নাসিম শাহের নামের পাশে লেখা থাকে বোলার। তাঁর বোলিং এ বারের এশিয়া কাপে কাঁপিয়ে দিয়েছে লোকেশ রাহুলদের। কিন্তু বুধবার ব্যাট হাতে তাঁর দুটো ছয় না থাকলে পাকিস্তানের ফাইনালের ওঠার পথ কঠিন হয়ে যেতে পারত। তাই রবি শাস্ত্রী ম্যাচ শেষে নাসিমকে যখন বললেন, “আজ থেকে তো তুমি বোলার থেকে অলরাউন্ডার হয়ে গেলে।” শুনে এক গাল হাসি দেখা গেল নাসিমের মুখে। স্বস্তির হাসি। দেশকে ফাইনালে তোলার হাসি। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানালেন বার বার। ১৯ বছরের তরুণ নাসিম যে তখনও বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে তিনি পেরেছেন।
পেসার মানেই তাঁর চোখেমুখে আক্রমণাত্মক ভাব। বিপক্ষের মাথা গুঁড়িয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার। একটা হিংস্র ভাব থাকবে তাঁর মুখে। নাসিমকে দেখলে সে সব মনেই হবে না। তাঁর মুখে সব সময় সরল হাসি। তাঁকে রাগতে দেখা যায় না। দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা নাসিমের কাছে ক্রিকেট খেলাটা প্রয়োজন ছিল। ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছেন। জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপে বাধা এসেছে। কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েছেন বার বার। তাঁর কাছে ক্রিকেটার হওয়া ছিল স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্ন এখন সত্যি। পাকিস্তানের জার্সি নিয়মিত পরছেন নাসিম। ম্যাচও জেতাচ্ছেন। বুধবার দেশকে ফাইনালে তুলে নাসিম বলেন, “যখন ব্যাট করতে নামছিলাম, নিজের উপর বিশ্বাস ছিল যে ছয় মারতে পারব। আমি ছয় মারার অনুশীলন করেছি। জানতাম ওরা আমাকে ইয়র্কার করবে। সে রকম ফিল্ডিংই সাজিয়েছিল ওরা। নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। নেটে যা অনুশীলন করেছি সেটাই মাঠে করতে হত। সেটাই করেছি।”
একটা সময় নেটে অনুশীলন করার থেকে বেশি সময় হাসপাতালে কাটাতে হত নাসিমকে। তাঁর পিঠের পেশিতে টান লাগত। বার বার স্ক্যান করাতে হত। খুব ভয়ের কিছু না হলেও চিন্তা তাঁর কাঁধের চোট চিন্তায় রাখত। সেই সব নিয়েও ব্যাটারদের ত্রাস হয়ে ওঠেন ১৯ বছরের নাসিম। ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কায় খেলার পর এ বার এশিয়া কাপ খেলতে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিয়ে। ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের হয়ে ১৩টি টেস্ট, তিনটি এক দিনের ম্যাচ এবং চারটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। তাঁর সংগ্রহ ৪৯টি আন্তর্জাতিক উইকেট। সুইং, সিম এবং গতিতে নাস্তানাবুদ করেন ব্যাটারদের। সব চেয়ে কম বয়সে টেস্ট হ্যাটট্রিক করার কৃতিত্বও রয়েছে তাঁর।
এই নাসিমের চার বছর আগে স্পাইক দেওয়া জুতো ছিল না। লেদার বল কী জানতেন না। সিম কী জানতেন না। শুধু জানতেন মারাত্মক গতিতে বল করতে। বুধবার সেই নাসিম বল হাতে যেমন চার ওভারে ১৯ রান দিয়ে একটি উইকেট নিলেন, তেমনই চার বলে গুরুত্বপূর্ণ ১৪ রান করে দলকে জেতালেন। রবি শাস্ত্রীকে বললেন, “ভুলে যাবেন না আমি বোলারও। যখন কেউ ন’নম্বরে ব্যাট করতে নামে, তখন তাঁকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। কিন্তু আমার মধ্যে বিশ্বাস ছিল। এই ম্যাচ আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
নাসিমের পেসার হয়ে ওঠার যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৫ বছর বয়সে। আব্দুল কাদির অ্যাকাডেমিতে। পাকিস্তানের প্রাক্তন স্পিনারের অ্যাকাডেমি থেকে উঠে এসেছেন এই তরুণ পেসার। প্রথম দিন নাসিমকে পুরনো বল দেওয়া হয়ে ছিল। কিন্তু দু’ওভার বল করেই নতুন বলের দাবি করেন তিনি। নাসিমের দাবি মেনেও নেওয়া হয়। এতটাই স্পেশাল ছিলেন তিনি। আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। সউদ খান, সুলেমান কাদিরের তত্ত্বাবধানে শুরু হয়ে যায় অনুশীলন। ছ’মাস নাসিম সাইকেল করে অনুশীলনে যেতেন। চার ঘণ্টা বল করতেন। সাইকেল করে বাড়ি আসতেন। খাবার খেতেন। ফের সাইকেলে করে অনুশীলনে যাওয়া। আবার চার ঘণ্টা অনুশীলন। সকলের জন্য এমনটা নিয়ম ছিল না। কিন্তু নাসিম এমনটাই চাইতেন। নাসিমের নাম ছড়িয়ে পড়তে লাগল। জায়গা করে নিলেন বয়সভিত্তিক খেলায়।
২০১৭ সালে প্রথম বার পিঠে চোট পেয়েছিলেন নাসিম। ছ’সাত মাস রিহ্যাবে থাকতে হয়েছিল তাঁকে। সেই চোট তাঁকে শারীরিক ভাবে কাবু করলেও মানসিক ভাবে মচকাতে পারেনি। প্রতি দিন সকালে তাঁর কোচকে বলতেন, “আমি খেলতে চাই।” কোচরা তাঁকে বোঝাতেন। খেলতে দিতেন না। নাছোড় নাসিমকে শান্ত রাখাই কঠিন ছিল তাদের পক্ষে। বুধবারও সেই নাছোড় মনোভাবটাই দেখা গেল। ব্যাট বদলে নিয়েছিলেন এক সতীর্থের সঙ্গে। পাকিস্তানকে ম্যাচ জেতালেন সেই ব্যাট দিয়েই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy