Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
ক্রিকেট কথা
Ashes 2021-22

Ashes cricket: বোলান্ডের উত্থানে শাপমুক্তির আশা বর্ণবৈষম্যের অভিশাপ

মাত্র ২১ বলে বোলান্ডের ৭ রানে ছয় উইকেট অবশ্যই সেরা বোলিং গড়গুলির একটা ছিল। এই টেস্টেও প্রথম ইনিংসে ৩৬ রানে চার উইকেট নিয়েছে ও।

স্কট বোলান্ড।

স্কট বোলান্ড। —ফাইল চিত্র।

রাজু মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:০৯
Share: Save:

সিডনিতে অ্যাশেজের চতুর্থ টেস্টে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করে উসমান খোয়াজা নায়ক। যার উপমহাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। আবার কিছু দিন আগেই নায়ক হয়েছিল স্কট বোলান্ড। অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী ক্রিকেটার। চলতি অ্যাশেজ কিন্তু ক্রিকেট ছাপিয়ে সামাজিক প্রভাবও রেখে যাচ্ছে। নানা ধর্ম, নানা বর্ণ, সমাজের নানা স্তরে ক্রিকেটের প্রসারের ছাপ রেখে যাচ্ছে।

মাত্র ২১ বলে বোলান্ডের ৭ রানে ছয় উইকেট অবশ্যই সেরা বোলিং গড়গুলির একটা ছিল। এই টেস্টেও প্রথম ইনিংসে ৩৬ রানে চার উইকেট নিয়েছে ও। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ উইকেটসংগ্রাহক বোলান্ডই। জানিয়ে রাখা যাক, ১৮৯৬-তে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের জর্জ লোমান ৫৮ বলে ৭ রানে ৮ উইকেট নিয়েছিলেন। তার মধ্যে হ্যাটট্রিকও ছিল। অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা আগে খুব বেশি ক্রিকেটে আগ্রহী ছিল না। মূলত অ্যাথলেটিক্স আর রাগবিই ওরা খেলত। বলতেই হবে, বর্ণবৈষম্যের অভিশাপমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেছে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ড। উপেক্ষা না করে অন্য গোত্রের, পিছিয়ে পড়া জাতির জন্য ওরা ক্রিকেটের দরজা খুলে দিয়েছে। ক্রিকেটের শুরুর দিন থেকে বর্ণবৈষম্যের কারণে অনেক তারকাকেও অপমান, যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে। শ্বেতাঙ্গ না হলেই সমস্যায় পড়তে হয়েছে। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, এমনকি, ওয়েস্ট ইন্ডিজেও যা দেখা গিয়েছে।

ইংল্যান্ডে প্রথম যে দল খেলতে গিয়েছিল, তা ছিল অস্ট্রেলীয় আদিবাসীদের। সেই দলকে কখনও সরকারি ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এমনকি, প্রথম শ্রেণির ম্যাচের তকমাও দেওয়া হয়নি সেই সফরকে। সেই দলে জন মুলঘের মতো ক্রিকেটার ছিলেন। অতীতের অসাধারণ তারকা। ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রতিকূল পরিবেশ, পরিস্থিতিতে প্রত্যেকটি শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে রান করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া থেকে উঠে আসা এই ব্যাটসম্যান কখনও প্রাপ্য সম্মান বা স্বীকৃতি পাননি। বার বার নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। সবাই জানত, সেই সময়ে অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন মুলঘ। কিন্তু কখনও অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলার ডাক পাননি। যার একমাত্র কারণ ছিল, তাঁর গায়ের রং।

আজ যখন অস্ট্রেলিয়া দলে স্কট বোলান্ডরা দাপিয়ে বেড়ান, মুলঘদের বঞ্চিত, উপেক্ষিত পৃথিবীতে কিছুটা হলেও তাজা বাতাস খেলে বেড়ায়। এখন তাঁকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রয়াসও দেখা যাচ্ছে। বোলান্ডকে যে ম্যাচের সেরার ট্রফি দেওয়া হয়েছিল, তার নামকরণ হয়েছে জন মুলঘ ট্রফি। নিঃসন্দেহে খুব ভাল প্রয়াস এবং ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার এর জন্য কুর্নিশ প্রাপ্য। ব্যবধান মিটিয়ে সর্বস্তরের প্রতিভাকে যে ক্রিকেটে স্বাগত জানানো হচ্ছে, সেটা খুব
ভাল দিক।

অস্ট্রেলিয়ায় ভয়াবহ বর্ণবৈষম্যের শিকারের মধ্যে ছিলেন দুর্দান্ত ফাস্ট বোলার এডি গিলবার্ট। ১৯৩০-এর দিকে কুইন্সল্যান্ডের হয়ে খেলতেন। এখনকার লাসিথ মালিঙ্গার মতো ‘স্লিঙ্গিং’ বোলিং অ্যাকশন ছিল। ওই অদ্ভুত বোলিং অ্যাকশন সমস্যায় ফেলেছিল স্যর ডন ব্র্যাডম্যানকেও। এমনও হয়েছে যে, ব্র্যাডম্যানের হাত থেকে ব্যাট ফস্কে বেরিয়ে গিয়েছে গিলবার্টকে খেলতে গিয়ে।

একটা প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ব্র্যাডম্যানকে শূন্য রানে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন গিলবার্ট। সেই সময়ে ডনকে শূন্য রানে আউট করা কার্যত অসম্ভব ব্যাপার ছিল। তবু নানা ছলনার আশ্রয়ে গিলবার্টের অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলের দরজা বন্ধই করে রাখা হয়েছে। বলা হল, তাঁর অ্যাকশন বৈধ নয়। তিনি নাকি বল ছোড়েন। এই ব্যাখ্যা হাস্যকর ছিল কারণ নিয়মিত ভাবে কুইন্সল্যান্ডের হয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট শেফিল্ড শিল্ডে খেলছিলেন তিনি। অতীতে এমনই সব ঘৃণ্য ঘটনা রয়েছে বর্ণবৈষম্যর।

সৌভাগ্যের ব্যাপার, পৃথিবী পাল্টাচ্ছে। দৃষ্টিভঙ্গি উদার হয়েছে। আদিবাসী হয়ে জেসন গিলেসপি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৭১টি টেস্ট ও ৯৭টি ওয়ান ডে খেলেছে। গিলেসপির আগে গ্রাহাম থমাস নামে এক জন ব্যাটসম্যান ছিলেন। ববি সিম্পসনের সময় অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৮টি টেস্ট খেলেছিলেন। গিলেসপি আর থমাসের পরে বোলান্ড তৃতীয় ক্রিকেটার, যে কি না আদিবাসী হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্ট খেলছে। ডনের দেশে ক্রিকেট নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি যে পাল্টাচ্ছে, ক্রিকেট নীতি যে উদার হচ্ছে, সন্দেহ নেই।

মুলঘদের যন্ত্রণা, উপেক্ষা যদি দূর হয় স্কট বোলান্ডদের হাত ধরে!

অন্য বিষয়গুলি:

Ashes 2021-22 Ashes Test Series Usman Khawaja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE