নেথান লায়ন। —ফাইল চিত্র।
অ্যাশেজ সিরিজ়ের লর্ডস টেস্টের দ্বিতীয় দিন ডান পায়ের পেশিতে চোট পেয়েছেন নেথান লায়ন। শনিবার লায়ন ব্যাট করতে নামায় তাঁর চোট নিয়ে নিষ্ঠুর রসিকতা করেন কেভিন পিটারসেন। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ককে পাল্টা জবাব দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার অফ স্পিনার।
শনিবার ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় খোঁচা দিয়ে পিটারসেন বলেছিলেন, আহত লায়নকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। লায়নের মাথায় বাউন্সার লাগলে কনকাসন সাব বা পরিবর্ত ক্রিকেটারকে ব্যাট করতে নামানোর সুযোগ পাবে অস্ট্রেলিয়া। সে জন্যই বোধহয় লায়নকে নামানো হয়েছে। তাঁর এই কথায় রেগে লাল লায়ন। ২০১৪ সালে মাথায় বাউন্সার লেগে ফিলিপ হিউজের মৃত্যুর ঘটনা উল্লেখ করে পিটারসেনকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন তিনি। প্রশ্ন তুলেছেন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়কের মানসিকতা নিয়ে।
শনিবার খেলা শেষ হওয়ার পর লায়ন বলেছেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলছি। চোট-আঘাত খেলারই অংশ। আমি একটা মন্তব্য শুনেছি। বলা হয়েছে, আমাকে মাঠে নামানো হয়েছে মাথায় আঘাত পাওয়ার জন্য। আমি এই ধরনের মন্তব্যের বিরোধী। মাথায় আঘাতের কারণে আমি এক জন বন্ধুকে হারিয়েছি। তাই কথাটা আমার বেশ খারাপ লেগেছে। কেউ সৎ হলে এমন বলতে পারে না।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘আমার পেশিতে আঘাত লেগেছে। এর জন্য পরিবর্ত পাওয়া উচিত নয়। এমন চোট নিয়ে মাঠে নামা ঝুঁকির। তবু আমি খুশি যে বড় চোট লাগেনি।’’ উল্লেখ্য লর্ডসে দেশের হয়ে টানা ১০০টি ম্যাচ খেললেন লায়ন। বিশ্বের ষষ্ঠ ক্রিকেটার এবং প্রথম বোলার হিসাবে এই মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তিনি।
চোট নিয়ে আগেও খেলেছেন লায়ন। ২০০৯ সালে ভাঙা হাত নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলেছিলেন। শনিবার ব্যাট করতে নামার সময় তাঁর সাহসের জন্য প্রশংসা না করে কটাক্ষ করেছিলেন পিটারসেন। যা ভাল ভাবে নেননি লায়ন। ইংল্যান্ডের বোলারেরাও লায়নকে সমানে খাটো লেংথের বল দিয়ে বিব্রত করার চেষ্টা করেছেন। যদিও তিনি আউট হওয়ার পর বেন স্টোকসেরা এগিয়ে এসে তাঁর প্রশংসা করেন।
পিটারসেনের কটাক্ষ হয়তো অ্যাশেজের লড়াইয়েরই অংশ। কারণ অ্যাশেজ সিরিজ়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ইতিহাস। যা কিছুটা ব্যাঙ্গাত্মক। খানিকটা শোকেরও। ১৮৮২ সালে ওভালে আয়োজিত টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথম হেরেছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ফ্রেড স্পফোর্থের অনবদ্য বোলিংয়ের কাছে হারতে হয়েছিল ইংরেজদের। চতুর্থ ইনিংসে ৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে পারেনি তারা। স্পফোর্থ ৪৪ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। ০-১ ব্যবধানে সিরিজ় হেরে গিয়েছিল। পরের দিন ইংল্যান্ডের সংবাদ পত্র ‘দ্য স্পোর্টিং টাইমস্’ তাদের প্রতিবেদনে ক্রিকেট দলের তীব্র সমালোচনা করেছিল। লেখা হয়েছিল, ইংরেজ ক্রিকেটকে চিরস্মরণীয় করে রাখল ওভালের ২৯ আগস্ট, ১৮৮২ তারিখটি। গভীর দুঃখের সাথে বন্ধুরা তা মেনে নিয়েছে। ইংরেজ ক্রিকেটকে ভস্মীভূত করা হয়েছে এবং ছাইগুলো অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া হয়েছে। এর পরের বছর সিরিজ় পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় যায় ইংল্যান্ড। সংবাদমাধ্যমের ব্যঙ্গ মনে রেখে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক আইভো ব্লাই বলেছিলেন, তাঁরা অ্যাশেজ পুণরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন।
সে সময় কয়েকজন অস্ট্রেলীয় মহিলা ব্লাইকে আগের সিরিজ়ে পরাজয় নিয়ে পাল্টা ব্যঙ্গ করে ছাই ভর্তি একটি পাত্র দিয়েছিলেন। যাতে ছিল উইকেটের উপরে থাকা বেলের ছাই। তার পর থেকে দু’দেশের টেস্ট সিরিজ় ‘অ্যাশেজ’ বলে পরিচিত হয়। ব্লাই অবশ্য ছাইয়ের সেই আধারটি ব্যক্তিগত উপহার হিসাবে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। বিজয়ী দলকে ট্রফি হিসাবে তা দেওয়া হত না তখন। ব্লাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী লর্ডসে এমসিসি জাদুঘরে সেই পাত্রটি দান করে দিয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy