Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Ashes 2023

অ্যাশেজে দাপট অস্ট্রেলিয়ার, দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডকে জবাব ইংরেজদের ‘বাজ়বল’-এই

ইংল্যান্ডকে তাদের মতো করেই জবাব দিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম দিনই বাজ়বল খেললেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারেরা। ওভারপ্রতি চার রানের বেশি তুললেন তাঁরা।

picture of Steve Smith

বুধবার লর্ডসে অর্ধশতরান পূর্ণ করার পর স্মিথ। ছবি: আইসিসি।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২৩ ২৩:২৯
Share: Save:

অ্যাশেজ সিরিজ়ের দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডকে ইংরেজদের ভাষাতেই জবাব দিল অস্ট্রেলিয়া। লর্ডসের ২২ গজে আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট করে স্টিভ স্মিথ, মার্নাস লাবুশেনেরা প্রথম দিনেই চাপে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করলেন বেন স্টোকসদের। ওভার প্রতি চার রানের বেশি তুললেন প্যাট কামিন্সের দলের মিডল অর্ডার ব্যাটাররা। বলা যায় অসিদের পরিকল্পনা সফল। কারণ মারের মুখে বলের নিয়ন্ত্রণ হারালেন ইংরেজ বোলারেরা। প্রথম দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়া তুলল ৫ উইকেটে ৩৩৯ রান।

ইংল্যান্ডের বাজ়বল (টেস্টে ইংল্যান্ডের আক্রমণাত্মক খেলার ধরন) ক্রিকেট দর্শন যেন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কাজে আসছে না। বার্মিংহামের প্রথম টেস্ট হারতে হয়েছে ২ উইকেটে। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনেই অসি আগ্রাসনের সামনে কিছুটা কোণঠাসা ইংল্যান্ড। বুধবার অবশ্য নতুন বল নিতে আর দেরি করেননি স্টোকস। ৮০ ওভার হতেই নতুন বল নিয়ে আক্রমণে আনেন অভিজ্ঞ জেমস অ্যান্ডারসনকে। তাতেও বিশেষ লাভ হয়নি ইংল্যান্ডের।

মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর ডেভিড ওয়ার্নারকে আউট করেন জশ টং। ইংল্যান্ডের পেসারের ভিতরের দিকে ঢুকে আসা বল বুঝতে না পেরে ৬৬ রান করে বোল্ড হন ওয়ার্নার। স্টাম্প ভেঙে দেন টং। কিন্তু সেই উইকেটের লাভ তুলতে পারলেন না ইংল্যান্ডের বোলারেরা। স্মিথ-লাবুশেন জুটির আগ্রাসী ব্যাটিং ইংরেজদের ম্যাচের রাশ নেওয়ার আশায় জল ঢেলে দিল। যেমন লন্ডনের আকাশও বুধবার বার বার জল ঢালল অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনের খেলায়। স্মিথ ও লাবুশেনকে এক বার করে আউটও দিয়ে দেন আম্পায়ার। কিন্তু দু’বারই রিভিউ (আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে বিরুদ্ধে আবেদন) নিয়ে বেঁচে যান অসি ব্যাটাররা। লাবুশেন অবশ্য বড় রান পেলেন না। ৪৭ রান করে অলি রবিনসনের বলে আউট হলেন। উইকেটের অন্য প্রান্তে স্মিথ ছিলেন চেনা মেজাজে। এ দিন ৩১ রান করার সঙ্গে সঙ্গে টেস্ট ক্রিকেটে ৯০০০ রান পূর্ণ করলেন অস্ট্রেলিয়ার সহ-অধিনায়ক। ৯৯তম টেস্টে ১৭৪তম ইনিংসে আরও একটি মাইলফলক স্পর্শ করলেন তিনি। বিশ্বের দ্বিতীয় দ্রুততম এবং অস্ট্রেলিয়ার দ্রুততম ক্রিকেটার হিসাবে এই কীর্তি গড়লেন তিনি। টেস্টে দ্রুততম ৯০০০ রান করার কৃতিত্ব রয়েছে কুমার সাঙ্গাকারার। শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন অধিনায়ক ১৭২টি টেস্ট ইনিংসে এই মাইলফলকে পৌঁছেছিলেন।

চতুর্থ উইকেটে স্মিথের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ জুটি তৈরি করলেন ট্র্যাভিস হেড। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে রান না পাওয়া হেড নির্ভরতা দিলেন সফরকারীদের ইনিংসকে। ঠিক যেমন দিয়েছিলেন টেস্ট বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে। তিনি করলেন ৭৩ বলে ৭৭ রান। চতুর্থ উইকেটে জুটিতে স্মিথের সঙ্গে যোগ করেন ১১৮ রান। রান পেলেন না ক্যামেরন গ্রিন (শূন্য)। দু’জনকেই আউট করে রুট ইংল্যান্ড শিবিরে কিছুটা স্বস্তি ফেরান। প্রথম দিন ১৯ রানে ২ উইকেট নিয়ে রুটই ইংল্যান্ডের সফলতম বোলার। ৮৮ রানে ২ উইকেট জস টংয়ের। অসি ব্যাটারদের খানিকটা সুবিধা করে দেন ইংল্যান্ডের বোলারেরা। ব্যাটারদের পা লক্ষ্য করে বেশি বল করেন তাঁরা। ফলে মিড অন ও মিড উইকেট অঞ্চলে রান করতে সমস্যা হচ্ছিল না। মাঝেমধ্যে দু’একটি বল অবশ্য সমস্যায় ফেলছিল তাঁদের। দিনের শেষে স্মিথ অপরাজিত রয়েছেন ৮৪ রান করে। তাঁর সঙ্গে উইকেটে রয়েছেন অ্যালেক্স ক্যারে (১১)।

চা বিরতির আগে দলের সব বোলারকে ব্যবহার করেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক স্টোকস। বল করেন জো রুটও। আকাশে মেঘ থাকায় টসে জিতে বল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন স্টোকস। ইংল্যান্ডের অধিনায়কের সিদ্ধান্ত কাজেও লেগে যেত, যদি না অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনারের ক্যাচ পড়ত। ইংল্যান্ডকে এই ভুলের খেসারত দিতে হল। প্রথম বল থেকেই সুইং পাচ্ছিলেন বোলারেরা। তাই অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার সাবধানে শুরু করেন। পঞ্চম ওভারের পঞ্চম বলে জেমস অ্যান্ডারসনের বল খোয়াজার ব্যাটের কানায় লেগে স্লিপে যায়। জো রুট ক্যাচ ধরার চেষ্টা করেও পারেননি। হাত আরও কিছুটা আগে নিয়ে যেতে পারলে ক্যাচ ধরতে পারতেন রুট। মাঝে বৃষ্টির জন্য খেলা কিছু ক্ষণ বন্ধ থাকে।

১৩ তম ওভারের শেষ বলে আবার ক্যাচের সুযোগ পায় ইংল্যান্ড। এ বার স্টুয়ার্ট ব্রডের বল ওয়ার্নারের ব্যাটে লেগে তৃতীয় স্লিপের কাছে যায়। ওলি পোপ হাত লাগালেও বল ধরতে পারেননি। বলের গতি বুঝতে পারেননি পোপ। তাই ক্যাচ ফস্কান তিনি। এই ক্যাচ পড়ার পরেই রানের গতি বাড়ান ওয়ার্নার। নিজের শট খেলা শুরু করেন তিনি। কভার এলাকায় বেশ কয়েকটি চার মারেন এই বাঁ হাতি ব্যাটার।

টংয়ের একটি বাউন্সারে ছক্কা মেরে নিজের অর্ধশতরান পূর্ণ করেন ওয়ার্নার। মাত্র ৬৬ বলে ৫০ করেন তিনি। দেখে মনে হচ্ছিল, প্রথম সেশনে কোনও উইকেট পড়বে না অস্ট্রেলিয়ার। কিন্তু মধ্যাহ্নভোজের বিরতির আগে শেষ ওভারের প্রথম বলেই বোল্ড হন খোয়াজা। টংয়ের বল অফ স্টাম্পের বাইরে পড়েছিল। বল বাইরে যাচ্ছে ভেবে ছেড়ে দেন তিনি। কিন্তু বল পিচে পড়ে ভিতরের দিকে ঢুকে এসে অফ স্টাম্পে লাগে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ঠিক একই কায়দায় আউট হয়েছিলেন ভারতের শুভমন গিল ও চেতেশ্বর পুজারা। খোয়াজা আউট হতেই বিরতি হয়ে যায়।

মাঠে না নেমেও টেস্ট ক্রিকেটে নতুন নজির গড়লেন নাথান লায়ন। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজ সিরিজ়ের দ্বিতীয় টেস্ট লর্ডসে শুরু হতেই নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার। বিশ্বের ষষ্ঠ ক্রিকেটার হিসাবে নজির গড়লেন লায়ন। বিশ্বের প্রথম বোলার হিসাবে দেশের হয়ে টানা ১০০টি টেস্ট খেলার নজির গড়লেন লায়ন। স্টোকস প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বুধবার ম্যাচের শুরুতে মাঠে নামতে হয়নি লায়নকে। তবু প্রথম একাদশে থাকার সুবাদে নজির গড়ে ফেললেন তিনি।

অ্যাশেজ সিরিজ়ে ১-০ এগিয়ে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। প্রথম টেস্ট জিতেছে তারা। কিন্তু কেন এই সিরিজ়কে অ্যাশেজ বলা হয়? তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ইতিহাস। যা কিছুটা ব্যঙ্গাত্মক। খানিকটা শোকেরও। ১৮৮২ সালে ওভালে আয়োজিত টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথম হেরেছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ফ্রেড স্পফোর্থের অনবদ্য বোলিংয়ের কাছে হারতে হয়েছিল ইংরেজদের। চতুর্থ ইনিংসে ৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে পারেনি তারা। স্পফোর্থ ৪৪ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। ০-১ ব্যবধানে সিরিজ় হেরে গিয়েছিল। পরের দিন ইংল্যান্ডের সংবাদপত্র ‘দ্য স্পোর্টিং টাইমস্‌’ তাদের প্রতিবেদনে ক্রিকেট দলের তীব্র সমালোচনা করেছিল। লেখা হয়েছিল, ইংরেজ ক্রিকেটকে চিরস্মরণীয় করে রাখল ওভালের ২৯ আগস্ট, ১৮৮২ তারিখটি। গভীর দুঃখের সাথে বন্ধুরা তা মেনে নিয়েছে। ইংরেজ ক্রিকেটকে ভস্মীভূত করা হয়েছে এবং ছাইগুলো অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া হয়েছে। এর পরের বছর সিরিজ় পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় যায় ইংল্যান্ড। সংবাদমাধ্যমের ব্যঙ্গ মনে রেখে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক আইভো ব্লাই বলেছিলেন, তাঁরা অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন।

সেই সময় কয়েক জন অস্ট্রেলীয় মহিলা ব্লাইকে আগের সিরিজ়ে পরাজয় নিয়ে পাল্টা ব্যঙ্গ করে ছাইভর্তি একটি পাত্র দিয়েছিলেন। যাতে ছিল উইকেটের উপরে থাকা বেলের ছাই। তার পর থেকে দু’দেশের টেস্ট সিরিজ় ‘অ্যাশেজ’ বলে পরিচিত হয়। ব্লাই অবশ্য ছাইয়ের সেই আধারটি ব্যক্তিগত উপহার হিসাবে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। বিজয়ী দলকে ট্রফি হিসাবে তা দেওয়া হত না তখন। ব্লাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী লর্ডসের এমসিসি জাদুঘরে সেই পাত্রটি দান করে দিয়েছিলেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Ashes 2023 England Australia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy