Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Arshdeep Singh

ডায়েরিতে দুঃস্বপ্নের সেই কাহিনি লিখে রেখেছেন আরশদীপ

ভারত-পাক দ্বৈরথে আসিফ আলির ক্যাচ ফেলে দেওয়ার পরে গণমাধ্যমে তাঁকে তীব্র বিদ্রুপ এবং অপমানের শিকার হতে হয়েছিল। এমনকি তাঁর উইকিপিডিয়া পেজ পর্যন্ত বিকৃত করা হয়।

উল্লাস: আসিফ আলিকে আউট করে আরশদীপ সিংহ।

উল্লাস: আসিফ আলিকে আউট করে আরশদীপ সিংহ। ছবি: সংগৃহীত।

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২২ ০৮:৪২
Share: Save:

শাপমুক্তি। রবিবার মেলবোর্নে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের যাত্রায় নিজের প্রথম বলেই বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটার, পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজ়মকে এলবিডব্লিউ করে ফিরিয়ে দেন প্যাভিলিয়নে। কিন্তু উইকেট পাওয়ার পরে তাঁর মধ্যে অতিরিক্ত কোনও উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি। বরং কাঁধ থেকে বোঝা নেমে যাওয়ার স্বস্তি ছিল চোখে-মুখে।

যে ছবিটা সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল এশিয়া কাপের সময়। সেই ভারত-পাক দ্বৈরথে আসিফ আলির ক্যাচ ফেলে দেওয়ার পরে গণমাধ্যমে তাঁকে তীব্র বিদ্রুপ এবং অপমানের শিকার হতে হয়েছিল। এমনকি তাঁর উইকিপিডিয়া পেজ পর্যন্ত বিকৃত করা হয়।

সেই অধ্যায় হয়তো ভুলেও যেতে পারতেন আরশদীপ সিংহ। কিন্তু ২৩ বছরের তরুণ তা ভুলতে পারেননি। ব্যক্তিগত ডায়েরিতে লিখে রেখেছিলেন সে দিনের ঘটনা। তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে যে ভাবে আক্রমণ করা হয়েছিল, সমস্তটাই মনে রেখেছিলেন পঞ্জাব কিংসের বাঁ হাতি পেসার। চোখে-মুখে প্রতিবাদের কোনও প্রতিফলন না থাকলেও পারফরম্যান্সে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে সেই যন্ত্রণাকে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার মরিয়া প্রয়াস। রবিবারের ম্যাচে চার ওভারে ৩২ রান দিয়ে তুলে নেন বাবর, মহম্মদ রিজ়ওয়ান ও আসিফের উইকেট। এশিয়া কাপের মঞ্চে এই আসিফই তাঁর ক্যাচ ফেলার ক্ষতকে দগদগে করে তুলেছিলেন পাকিস্তানকে জিতিয়ে। তাঁর উইকেট নেওয়ার পরে সেই যন্ত্রণা কিছুটা হলেও কমেছে তরুণ পেসারের।

ম্যাচ শেষে আরশদীপ ভিডিয়ো কলে কথা বলেন তাঁর বাবা দর্শন সিংহ ও কোচ যশবন্ত রাইয়ের সঙ্গে। আনন্দবাজারকে যশবন্ত বলেছেন, ‘‘আরশদীপ এত দিন ধরে সেই ঘটনা মনে রেখে দিয়েছিল। ওর কাছে একটি ডায়েরি আছে। যাতে ও নিয়ম করে নিজের সাফল্য ও ব্যর্থতার কথা লিখে রাখে। কেউ আজ পর্যন্ত সেই ডায়েরি পড়েছে কি না জানি না, তবে আমাকে ও বলত এই আত্মপর্যালোচনা ওকে শক্তিশালী হতে সাহায্য করে।’’ যোগ করেন, ‘‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচের পরে ওর জীবনে যা ঘটেছে, সব কিছু লেখা রয়েছে ডায়েরিতে। আমি বলেছি, সেই ঘটনা যত মনে রাখবি, তত মানসিক অশান্তি তৈরি হবে নিজের মধ্যে। কিন্তু ও পরমার্শ শোনেনি। মনে রেখেছিল প্রত্যেকটি মন্তব্য। তার জবাবই যেন বেরিয়ে এসেছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।’’

বাবা দর্শনকে ভারতীয় পেসার জানিয়েছেন, ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমে বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা তাঁর জন্য সকলকে উঠে দাঁড়িয়ে করতালি দেওয়ার অনুরোধ করেন। যশবন্তের কথায়, ‘‘কিছুক্ষণ আগেই ভিডিয়ো কল করেছিল ও। সিডনির পথে রওনা দিয়েছে। পাকিস্তানকে হারানোর পরে খুব একটা বেশি উৎসব ওরা করেনি। মূল উদ্দেশ্য তো বিশ্বকাপ জেতা। কিন্তু ড্রেসিংরুমে বিরাট ও রোহিত ওকে উঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন দিয়েছে।’’ যোগ করেন, ‘‘বাবরের উইকেট নিয়ে ভারতীয়দের মধ্যে বিশ্বাসটা কিন্তু ও-ই ফিরিয়ে এনেছে।’’

পঞ্জাবের জুনিয়র দলে সুযোগ না পেয়ে ১৮ বছর বয়সে আরশদীপ ঠিক করেছিলেন ক্রিকেট ছেড়ে দেবেন। কানাডায় দাদার কাছে গিয়ে থাকবেন। সেখানেই খুঁজে নেবেন কোনও চাকরি। কিন্তু ছোটবেলার কোচ যশবন্ত তাঁকে আরও একটি বছর ক্রিকেটকে দিতে বলেন। তার পর থেকেই সাফল্য পেতে শুরু করেন জেলা স্তরের ক্রিকেটে।

অনেকেরই প্রশ্ন, এত কম বয়সে এতটা মাথা ঠান্ডা কী করে রাখতে পারেন ভারতীয় পেসার? সাধারণত পেস বোলাররা খুব একটা শান্তশিষ্ট হন না। আরশদীপও নন। কিন্তু তিনি বাকিদের চেয়ে অনেকটাই কম উগ্র। কোচই জানিয়ে দিলেন তার কারণ। যশবন্তের কথায়, ‘‘প্রত্যেক দিন আধ ঘণ্টা ধ্যান করে ও। সেটাই ওর শান্ত হওয়ার কারণ।’’

সাফল্যের দিনেও শাহিন শাহ আফ্রিদি তাঁকে কী ভাবে ছয় মারলেন, তা নিয়ে চলছে পর্যালোচনা। গণমাধ্যমের বন্দনার স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে দিচ্ছেন না। ঠিক যেমন তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি কয়েক মাস আগের বিদ্রুপ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy