Advertisement
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
Pink ball test

৬ ভুল: গোলাপি বলের টেস্টে কেন আত্মসমর্পণ করতে হল রোহিতের ভারতকে?

সাজঘরের সামনে চেয়ারে বসে থাকা ভারত অধিনায়কের মুখে যন্ত্রণা স্পষ্ট। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১০ উইকেটে এই হারের নেপথ্যে কি শুধুই গোলাপি বল? না কি রয়েছে ভারতের ভুলও? উত্তর খুঁজল আনন্দবাজার অনলাইন।

Rohit Sharma

অ্যাডিলেডে হারের পর রোহিত শর্মা। ছবি: রয়টার্স।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৪
Share: Save:

পার্‌থ টেস্টে যে দাদাগিরি দেখা গিয়েছিল ভারতের, অ্যাডিলেডে সেটাই উধাও। পর পর চারটি টেস্ট হেরে অধিনায়ক রোহিত শর্মা যখন রবিবার মাঠ ছাড়ছিলেন, তখন তাঁর কাঁধ ঝুঁকে গিয়েছে। সাজঘরের সামনে চেয়ারে বসে থাকা ভারত অধিনায়কের মুখে যন্ত্রণা স্পষ্ট। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১০ উইকেটে এই হারের নেপথ্যে কি শুধুই গোলাপি বল? না কি রয়েছে ভারতের ভুলও? উত্তর খুঁজল আনন্দবাজার অনলাইন।

মাত্র সাতটি সেশনে শেষ হয়ে যায় অ্যাডিলেড টেস্ট। প্রথম দু’দিন পুরো খেলা হয়েছিল। রবিবার খেলা শেষ হয়ে যায় মাত্র দেড় ঘণ্টায়। ভারতীয় দল আত্মসমর্পণ করল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। মাত্র ১০৩১ বলে শেষ টেস্ট। ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট এত তাড়াতাড়ি আগে কখনও শেষ হয়নি। গত বার অ্যাডিলেডে ৩৬ অলআউট হওয়ার ম্যাচও এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে গোলাপি বলের টেস্টে এ বারে ভারত ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং তিনটি বিভাগেই ব্যর্থ।

১০ দিনের বিশ্রাম

পার্‌থ টেস্ট জয়ের ১০ দিন পর অ্যাডিলেডে খেলতে নেমেছিল ভারত। জয়ের ছন্দ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়। সেখানে লাল বলের ক্রিকেটে খেলা হলেও বোলিং এবং দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং ভারতকে উজ্জীবিত করেছিল। সেই ছন্দটা কেটে যায় ১০ দিনের বিরতিতে। ভারত একটা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিল। কিন্তু সেটা নিছকই প্রস্তুতি ম্যাচ ছিল। জয়ের ছন্দ ধরে রাখা জন্য সেটা যে যথেষ্ট নয়, তা অ্যাডিলেডে স্পষ্ট। উল্টো দিকে অস্ট্রেলিয়া হেরে যাওয়ার পর দল গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ পায়। বিশ্রামের কারণে সময় পেয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। তারা দল গুছিয়ে নিয়ে নামে অ্যাডিলেডে। ফলে জস হেজ়লউডের অভাবও বুঝতে দেয়নি তাদের বোলিং বিভাগ।

জয়ী দলে তিন বদল

ভারতের যে দল পার্‌থে জিতেছিল, সেই দলের তিন জনকে বসিয়ে দেওয়া হয়। ক্রিকেটে জয়ী দলে পরিবর্তন না করার কথা শোনা যায়। কিন্তু ভারতকে পরিবর্তন করতেই হত। অধিনায়ক রোহিত দলে ফিরেছিলেন। তাঁকে জায়গা দিতে হতই। সেই সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে বদল করতে না চাওয়ায় রোহিত নেমেছিলেন মিডল অর্ডারে। চোট সারিয়ে দলে ফেরেন শুভমন গিল। সেই সঙ্গে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকেও দলে নেয় ভারত। গোলাপি বলে অতীতে তাঁর সাফল্যের কথা মাথায় রেখেই দলে ফেরানো হয়েছিল। এই বদলগুলির ফলে ভারতের দলের ভারসাম্য কিছুটা নষ্ট হয়। কারণ রোহিত মিডল অর্ডারে খেলতে অভ্যস্ত নন। আর পার্‌থে সফল হওয়া ওপেনিং জুটি অ্যাডিলেডে ব্যর্থ হয়। তাতেই কিছুটা দুর্বল হয়ে যায় ভারতীয় দল। অ্যাডিলেড টেস্টে দলে ঢোকা কেউই দলকে ভরসা দিতে পারেননি। অশ্বিন সে ভাবে প্রভাব ফেলতে না পারায় ভারতীয় দল আরও সমস্যায় পড়ে।

Rohit Sharma

সাজঘরের সামনে চেয়ারে বসে থাকা ভারত অধিনায়কের মুখে যন্ত্রণা স্পষ্ট। ছবি: রয়টার্স।

ভারতের ব্যাটিং ব্যর্থতা

গোলাপি বলে এর আগে অ্যাডিলেডে ৩৬ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল ভারত। এ বারে সেই লজ্জার মুখে পড়তে না হলেও প্রথম ইনিংসে ১৮০ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭৫ রানে শেষ হয়ে যান রোহিতেরা। গোলাপি বলের বিরুদ্ধে ভারতের ব্যাটিং যে নড়বড়ে তা স্পষ্ট হয়ে যায় আবার। টপ অর্ডার বা মিডল অর্ডারের কেউই খেলা ধরতে পারেননি। নীতীশ কুমার রেড্ডি কিছুটা চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কাউকে পাশে পাননি। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল, শুভমন গিল, ঋষভ পন্থ, যশস্বী জয়সওয়ালের মতো ব্যাটার থাকলেও সুইংয়ের বিরুদ্ধে ব্যর্থ হলেন সকলেই। বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “প্রথম টেস্ট জিতলেও ভারতের ব্যাটিংয়ে সমস্যা রয়েছে। সেটা দ্বিতীয় টেস্টে আরও স্পষ্ট হয়ে গেল। সুইংয়ের বিরুদ্ধে ভারতীয় ব্যাটারেরা স্বচ্ছন্দ নয়। এই সমস্যা দ্রুত কাটাতে হবে, না হলে আগামী ম্যাচগুলোয় বিপদে পড়তে হবে। আর পন্থকে নিজের খেলায় পরিবর্তন আনতে হবে। টেস্টে এত ঝুঁকিপূর্ণ শট সবসময় খেলাটা ঠিক নয়। ম্যাচের পরিস্থিতিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। পন্থের সেটা মাথায় রেখে খেলা উচিত।”

স্টার্কের সুইং

গোলাপি বলের টেস্টে মিচেল স্টার্কের মতো ভয়ঙ্কর আর কাউকে হতে দেখা যায়? অন্য নাম মনে করা বেশ কঠিন। ১৩টি দিন-রাতের ম্যাচে ৭৪টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। গোলাপি সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার তালিকায় শীর্ষে তিনি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সমসংখ্যক ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ৪৩টি উইকেট। অর্থাৎ, স্টার্কের থেকে ৩১টি উইকেট কম। তৃতীয় স্থানে থাকা প্যাট কামিন্স ১৩টি টেস্ট খেলে নিয়েছেন ৪১টি উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার তিন বোলারই গোলাপি বলে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সেরা অবশ্যই স্টার্ক। পরিসংখ্যানের বিচারে বিশ্বের মধ্যেও গোলাপি বলে সেরা তিনি। সম্বরণ বললেন, “গোলাপি বল পুরনো হলেও সুইং করানো যায়। সেটাই কাজে লাগায় স্টার্ক। যে স্পেলেই বল করতে আসুক সুইং করাচ্ছে। যেটা ব্যাটারদের জন্য সমস্যার।” বাঁহাতি পেসারের সুইং কাবু করল ভারতকে। লাল বলেও সুইং করান স্টার্ক। সেখানে তাঁকে সামলাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় ব্যাটারদের। কিন্তু গোলাপি বলে সেই সুইং আরও বাড়ে। কারণ বলের চকচকে ভাবটা অনেক ক্ষণ থাকে। লাল বলের মতো কয়েক ওভার পর উঠে যায় না। যশস্বী যেমন টেস্টের প্রথম বলেই আউট হলেন সুইংয়ের কারণে। লেগ স্টাম্পে পড়ে বলটি যে সোজা আসবে, তা বুঝতে পারেননি তরুণ ব্যাটার। প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নেওয়া স্টার্কের সুইংয়ে ভারতের আত্মসমর্পণের শুরু।

Starc and Pant

মিচেল স্টার্কের সুইং সামলাতে ব্যর্থ ঋষভ পন্থ। ছবি: পিটিআই।

অতিরিক্ত বুমরা নির্ভরতা

ভারতের বোলিংয়ে যশপ্রীত বুমরা আছেন। যিনি যে কোনও পিচে, যে কোনও প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলতে পারেন। কিন্তু তাঁর ওভার সামলে দিলে উল্টো দিক থেকে কোনও চাপ নেই। মহম্মদ শামির অভাব টের পাচ্ছেন রোহিতেরা। দু’দিক থেকে আক্রমণ করতে পারছে না ভারত। পার্‌থে ১৫০ রানে শেষ হয়ে যাওয়া ভারতকে ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন বুমরাই। কিন্তু প্রতি ম্যাচে তো সেটা হয় না। অ্যাডিলেডে হয়নি, তাতেই সমস্যা বাড়ল। বুমরা উইকেট নেওয়ার সঙ্গে রানটা আটকে রেখেছিলেন। সেটা পারলেন না মহম্মদ সিরাজ। তিনি চারটি উইকেট নিলেও ওভার প্রতি ৪ রান করে দিলেন। একাই ৯৮ রান দিলেন সিরাজ। হর্ষিত রানা ১৬ ওভারে ৮৬ রান দিয়ে কোনও উইকেট পাননি। নীতীশ ব্যাট হাতে দলকে ভরসা দিলেও বল হাতে ৬ ওভারে ২৫ রান দিলেন। প্রাক্তন নির্বাচক সম্বরণ বললেন, “শামি সুস্থ থাকলে এখনই ওকে অস্ট্রেলিয়া পাঠানো উচিত। বুমরার উপর চাপ পড়ছে। দু’দিক থেকে আক্রমণটা তৈরি হচ্ছে না। সিরাজ বা হর্ষিত ভাল কিন্তু ওরা শামির মতো নয়।” রান আটকে রেখেছিলেন শুধু অশ্বিন, কিন্তু উইকেট নিয়েছেন মাত্র একটি। জুটি ভাঙার ক্ষেত্রে ভারতীয় স্পিনার তেমন ভূমিকা নিতে পারেননি।

হেড নিয়ে মাথাব্যথা

যে পিচে ভারতীয় ব্যাটারেরা আত্মসমর্পণ করলেন স্টার্কদের সামনে, সেই পিচেই ভারতীয় বোলারদের উপর ছড়ি ঘোরালেন ট্রেভিস হেড। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল, এক দিনের বিশ্বকাপের ফাইনালের পর আরও এক বার হেড ভারতের মাথাব্যথার কারণ হলেন। ১৪১ বলে ১৪০ রানের ইনিংস ভারতকে চাপে ফেলে দেয়। হারের মূল কারণ তিনিই। টেস্টে প্রায় ১০০ স্ট্রাইক রেট রেখে ব্যাট করে ভারতের হারের রাস্তাটা আরও কাছে এনে দেন। ম্যাচের সেরাও তিনিই।

অন্য বিষয়গুলি:

Pink ball test Adelaide test Team India India tour of Australia 2024 BGT 2024-25 Border-Gavaskar Trophy 2024-25
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy