বিশ্রাম-বিতর্কে এক সুর রোহিত, স্টোকসের ফাইল চিত্র
ভারতীয় ক্রিকেটে এই মুহূর্তে অন্যতম বিতর্কের বিষয় ‘বিশ্রাম’। বিরাট কোহলী আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বিশ্রাম চেয়ে এই বিতর্ক তৈরি করেছেন। পরে অধিনায়ক রোহিত শর্মাও বিশ্রামের পক্ষে সওয়াল করেছেন। এ বার এই বিশ্রাম বিতর্কের রেশ ভারতীয় ক্রিকেট ছেড়ে সঞ্চারিত হল বিশ্ব ক্রিকেটেও। এক দিনের ক্রিকেটকে হঠাৎ বিদায় জানিয়ে ইংল্যান্ডের বেন স্টোকসও এই বিশ্রাম বিতর্ককেই উস্কে দিয়েছেন।
স্টোকস বলেছেন, ‘‘যত বেশি খেলা হয়, তত ক্রিকেটের বিজ্ঞাপনের পক্ষে সেটা ভাল। কিন্তু যদি উন্নত মানের খেলা দেখতে হয় তার জন্য ক্রিকেটারদের বিশ্রাম দেওয়া প্রয়োজন। না হলে খেলার মান কমবে।’’ তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর খেলার মান কমুক, সেটা তিনি চান না। তাই সময়ের আগেই ‘অলবিদা’ জানিয়েছেন এক দিনের ক্রিকেটকে।
স্টোকসের অবসর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে ক্রিকেটের সূচি নিয়ে। গত ২৫ দিনে ১২টি সাদা বলের ম্যাচ খেলেছে ইংল্যান্ড। এমনকি, দু’টি টেস্টের মাঝে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে এক দিনের সিরিজ। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ও তৃতীয় টেস্টের মাঝে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে তিনটি এক দিনের ম্যাচের সিরিজ খেলেছে ইংল্যান্ড। এই সূচি নিয়ে বিরক্ত স্টোকস। যেখানে সুযোগ রয়েছে সেখানেই সাদা বলের ক্রিকেট ঢুকিয়ে দেওয়ার যে প্রবণতা শুরু হয়েছে, তা ক্রিকেটের পক্ষে ক্ষতিকর বলে মত তাঁর। অতিরিক্ত ক্রিকেট খেলার জন্য ক্রিকেটারদের ক্লান্তি আখেরে খেলার ক্ষতি করছে বলে মনে করছেন তিনি।
স্টোকস বলেন, ‘‘আমরা গাড়ি নই, যে তেল ভরে দিলেই চলব। ইংল্যান্ডের জার্সি পরলে ১০০ শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু সেটা পারছি না। তাই অনেক ভেবে এক দিনের ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ তাঁর লক্ষ্য, আরও কয়েক বছর টেস্ট ক্রিকেট খেলা। বলেন, ‘‘আমি টেস্ট দলের অধিনায়ক। ইংল্যান্ডের হয়ে ১৪০-১৫০টা টেস্ট খেলতে চাই। জেমস অ্যান্ডারসন, স্টুয়ার্ট ব্রডকে দেখেছি কী ভাবে টেস্টে ভাল খেলার জন্য সাদা বলের ক্রিকেট ছেড়েছে ওরা। সেটাই আমি করতে চাই।’’
তাঁর ব্যাটে এক দিনের বিশ্বকাপ জিতেছিল ইংল্যান্ড। এখনকার সময়ে ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার বলা হয় তাঁকে। সেই স্টোকস হঠাৎ এক দিনের ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। মুখ বুজে বিদায় নেননি তিনি। বিদায়বেলায় স্টোকস বার্তা দিয়েছেন ক্রিকেট কর্তাদের। সতর্ক করে জানিয়েছেন, এ বার অন্তত ক্রিকেটের ঠাসা সূচি নিয়ে চিন্তা করুক বোর্ডগুলি। নইলে এ ভাবে হয়তো আরও অনেক ক্রিকেটারকে সময়ের আগেই অবসর নিতে হবে।
রোহিত ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এক দিনের সিরিজের সময় বিশ্রামের পক্ষে বলেছিলেন। তিনি দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলির প্রাসঙ্গিকতা নিয়েই ঘুরিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বলেছিলেন, “দ্বিপাক্ষিক সিরিজ আয়োজন করতে হলে আরও ভাল ভাবে সেগুলো পরিচালনা করা দরকার। সূচি এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যাতে মাঝে কিছুটা বিরতি থাকে। ছোটবেলায় ক্রিকেট খেলতে খেলতে বেড়ে ওঠার সময় দেখতাম অনেক ত্রিদেশীয় বা চতুর্দেশীয় সিরিজ হত। এখন সেগুলো পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমার মনে হয়, ওটাই ভবিষ্যৎ। এতে প্রতিটি দলের কাছে ঘুরে দাঁড়ানোর যথেষ্ট সময় থাকে।”
একের পর এক ক্রিকেটারের বক্তব্যে পরিষ্কার, ‘অতিরিক্ত’ খেলা নিয়ে অখুশি সবাই। যদিও এই নিয়ে আইসিসি-র কোনও বক্তব্য এখনও জানা যায়নি, সবার আগে কোপ পড়তে পারে এক দিনের ক্রিকেটে। আবার রোহিত যেখানে দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন, সেখানে গোটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটই হয়তো প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। আইপিএলের জন্য আইসিসি যে ভাবে আড়াই মাসের আলাদা সময় বার করতে চাইছে, তাতে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলিই কি ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ, উঠছে এই প্রশ্নও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy