তালিবান জমানায় নানা সমস্যায় রশিদ খানদের ক্রিকেট। ফাইল ছবি।
এশিয়া কাপের অন্যতম দল আফগানিস্তান। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজেদের দিনে বিশ্বের যে কোনও দলকে হারাতে পারেন রশিদ খান, মহম্মদ নবিরা। কিন্তু তালিবান শাসনে কেমন আছে আফগানিস্তানের ক্রিকেট?
তালিবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করেছে প্রায় এক বছর। তালিবান ফতোয়ায় আফগানদের জীবন আবার কঠিন হয়েছে। তালিবানরা ক্ষমতা দখলের সময় আর সকলের মতো সিঁদুরে মেঘ দেখেছিলেন ক্রিকেট কর্তারাও। তালিবান জমানায় বন্ধ হয়েছে মহিলাদের ক্রিকেট। রশিদ, নবিদের সুরক্ষার জন্য অন্য পথ বেছে নিয়েছেন আফগান ক্রিকেট সংস্থার কর্তারা। দেশের সেরা ২৪ জন ক্রিকেটারের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে বসবাস করার ভিসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আফগানিস্তানের জাতীয় ক্রিকেট দল সে দেশেই এখন ‘হোম ম্যাচ’ খেলে। কারণ, বিশ্বের কোনও দেশই তাদের দেশে গিয়ে খেলতে রাজি নয়। তা ছাড়া দুবাইয়ে অনুশীলনের পরিকাঠামোও ভাল। আমিরশাহিতে সারা বছর জাতীয় দলকে রাখা এবং অন্য সব ব্যবস্থা করতে আফগান ক্রিকেট বোর্ডকে সাহায্য করছেন প্রাক্তন নির্বাচক আসাদুল্লাহ খান। তিনি বলেছেন, ‘‘শুরুতে অনিশ্চয়তা, আশঙ্কা সবই ছিল। সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা গিয়েছে। আফগানিস্তানে এখনও ক্রিকেট বেঁচে রয়েছে।’’
ক্রিকেট আফগানিস্তানের জনপ্রিয়তম খেলা। ক্রিকেটকে সুরক্ষিত রাখতে চেষ্টার খামতি রাখছেন না কর্তারা। তালিবান শাসন থেকে ক্রিকেটকে নিরাপদ দূরে সরাতে পারলেও সমস্যা রয়েছে আরও। আফগান ক্রিকেটের পাশ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে স্পনসররা। নতুন কোনও সংস্থা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফলে ক্রমশ তীব্র হচ্ছে আফগান ক্রিকেট বোর্ডের অর্থসঙ্কট। আসাদুল্লাহ বলেছেন, ‘‘ক্রিকেট নিয়ে দেশে আগ্রহ অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি বাড়ছে অর্থের অভাব। তালিবান সরকার ক্রিকেটকে সাহায্য করছে ঠিকই। কিন্তু বেসরকারি সংস্থাগুলি সরে যাচ্ছে। আইসিসির অনুদানও আমরা সরাসরি হাতে পাই না। অর্থের সমস্যা নিয়েও আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু জানি না, এ ভাবে আর কত দিন চলা সম্ভব হবে।’’
ক্রিকেট বাঁচিয়ে রাখতে হলে শুধু জাতীয় দলের দেখভাল করলেই হয় না। ঘরোয়া ক্রিকেটকেও গুরুত্ব দিতে হয়। পরিকাঠামোর উন্নতি প্রয়োজন। নতুন ক্রিকেটার তুলে আনা দরকার। কিছুই অজানা নয় আফগান ক্রিকেট কর্তাদের। কাবুলের ক্রিকেট পরিকাঠামোর উন্নতি হলেও দেশের অন্যত্র পরিকাঠামো বলে তেমন কিছুই নেই। তাই কান্দহর-সহ অন্যান্য জায়গায় পরিকাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন তাঁরা।
রশিদ, নবিরা বিভিন্ন দেশে টি-টোয়েন্টি লিগ খেলেন। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে তাঁদের চাহিদাও ভাল। তাঁরাই আফগান কিশোরদের অনুপ্রেরণা। আন্তর্জাতিক স্তরে রশিদদের সাফল্যও রয়েছে। জাতীয় দলের সহকারী কোচ রইস আহমেদজাই। তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের ক্রিকেটাররা বিভিন্ন লিগে খেলছে। ওরা অনেক কিছু শিখতে পারছে। প্রচুর অভিজ্ঞতা হচ্ছে ওদের। বাকিরাও রশিদ, নবিদের পরামর্শে উপকৃত হচ্ছে। সব মিলিয়ে আমাদের জাতীয় দলের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে। পারফরম্যান্স ভাল হচ্ছে। যদিও আমাদের আরও বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার দরকার। না খেললে ক্রিকেটারদের অভিজ্ঞতা কী করে বাড়বে? অভিজ্ঞতার অভাবে আমরা অনেক ম্যাচ হেরে যাই।’’ পাশাপাশি হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘সাধারণত বিদেশি কেউই জাতীয় দলের প্রধান কোচ হন। তিনি আমাদের দেশে থাকতে পারলে সব থেকে ভাল হত। ক্রিকেটের উন্নতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারতেন। দুর্ভাগ্যের যে আমাদের দেশে সেই পরিস্থিতি নেই। কী ভাবে আফগানিস্তানের ক্রিকেট চলছে, তা জানা উচিত জাতীয় দলের প্রধান কোচের। তরুণ ক্রিকেটারদের উন্নতি সম্পর্কে তাঁর জানা দরকার। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না।’’
এ ভাবে চললে আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশের মর্যাদা হারাতে পারে আফগানিস্তান। তেমন হলে টেস্ট খেলার সুযোগ থাকবে না। আফগান ক্রিকেট কর্তাদের লক্ষ্য টেস্ট খেলার স্বীকৃতি ধরে রাখা। না হলে, এত দিনের সব পরিশ্রম জলে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy