আফগানিস্তানে ভাটা পড়েনি ক্রিকেট-প্রেমে। ফাইল ছবি
গুলির আওয়াজ, আগুন, কালো ধোঁয়া আর রক্ত। এক বছর আগের ছবি। আফগানিস্তানের একের পর এক শহর তালিবানের শাসনে চলে যাচ্ছে। এক সময় পুরো দেশের দখলই নিয়ে নিল তালিবান। এক বছর ধরে আফগানিস্তানের শাসন তাদের হাতেই। মেয়েদের বিভিন্ন কাজে নিষেধাজ্ঞা, বন্দুকের নলের উপর দাঁড়িয়ে দেশ শাসন চলছে রশিদ খান, মহম্মদ নবিদের দেশে। এর মাঝেও বেঁচে রয়েছে ক্রিকেট।
মেয়েদের ক্রিকেট একেবারেই বন্ধ আফগানিস্তানে। তালিবানের নিয়ম মেনে সে দেশে মেয়েরা ক্রিকেট খেলতে পারবে না। কিন্তু রশিদদের খেলতে কোনও বাধা নেই। আফগানদের ক্রিকেট নিয়ে উৎসাহে ভাটা পড়েনি। তালিবান দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান আফগান ক্রিকেট বোর্ডের বহু কর্তা। ক্রিকেটারদের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরশাহির আবাসিক ভিসা জোগাড় করতে হয়। প্রশ্ন উঠতে শুরু করে আইসিসি আদৌ আফগানিস্তানকে পূর্ণ সদস্য পদ আর দিতে রাজি হবে কি না। মেয়েদের ক্রিকেট বন্ধ করে দেওয়ার জন্যই এমন ভাবনা আসে। একের পর এক স্পনসর হারায় আফগানিস্তান ক্রিকেট। বিদেশি দলের পক্ষে সে দেশে গিয়ে খেলা সম্ভব নয়। এত কিছুর পরেও আফগানিস্তানের ক্রিকেট বেঁচে রইল।
আফগানিস্তান ক্রিকেটের প্রাক্তন নির্বাচক আসাদুল্লাহ খান এখন বোর্ডের অন্যতম উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “শুরুতে খুবই চিন্তা ছিল। কিন্তু সব কিছু শান্ত হতে দেখা যায় যে ক্রিকেট বেঁচে রয়েছে। ক্রিকেটের প্রতি মানুষের ভালবাসা বেড়েছে কিন্তু টাকা কমে গিয়েছে। তালিবান সরকার ক্রিকেটকে সাহায্য করে। কিন্তু স্পনসরের সংখ্যা কমে গিয়েছে। আইসিসির টাকাও এখন সোজাসুজি আসে না। টাকা সত্যিই একটা অসুবিধার জায়গা। আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড বেঁচে আছে, কিন্তু কত দিন পারবে তা বলা মুশকিল।”
তালিবান দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই টাকা একটা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বোর্ডের জন্য। বহু ক্ষেত্রে আইসিসি টাকা আফগান ক্রিকেট বোর্ডের হাতে না দিয়ে নিজেরা দিচ্ছে। এর ফলে বোর্ডের হাতে টাকা আসছে না। সেই কারণে এসিবি ঘরোয়া ক্রিকেটের উপর জোর দেওয়া শুরু করেছে। কাবুলে অত্যাধুনিক অনুশীলন কেন্দ্র বানাচ্ছে। আসাদুল্লাহ বলেন, “আফগান ক্রিকেট বোর্ড চাইছে দেশের দিকে দিকে ক্রিকেটকে পৌঁছে দিতে। কিন্তু টাকা না থাকায় সেটা আটকে যাচ্ছে। কাবুল ক্রিকেটারদের জন্য সেরা জায়গা। আমরা চাই দেশের আরও জায়গায় ক্রিকেটকে পৌঁছে দিতে। বোর্ডের সব দিক নতুন করে গড়তে চাইছে এসিবি। আরও স্বচ্ছ নিয়ম বানাতে চাইছে তারা। কন্দহর এবং খোস্ত এলাকায় ক্রিকেটের পরিষেবা গড়ে তোলার কাজ চলছে। সব জায়গায় ভাল কোচ প্রয়োজন। ক্রিকেটার তুলে আনার জন্য এটা জরুরি। সেই কারণে টাকা প্রয়োজন। দেশের ক্রিকেটকে অনেক বেশি পেশাদার করে তুলতে হবে। ক্রিকেটারদের উন্নতিই সেটার মূল লক্ষ্য।”
আফগান ক্রিকেটে রশিদ খান, মহম্মদ নবি, মুজিব উর রহমানের মতো ক্রিকেটাররা রয়েছেন, যাঁরা বিশ্ব জুড়ে ক্রিকেট খেলে বেড়াচ্ছেন। বিশ্বের যে কোনও লিগে এই তিন ক্রিকেটারকে দেখতে পাওয়া যায়। রশিদ এবং নবি ছ’টা আলাদা লিগে খেলেছেন। মুজিব সাতটি লিগে খেলেছেন। এই তিন জন ছাড়া পেসার নবিন উল হকও বিশ্বের বিভিন্ন লিগে সুযোগ পাচ্ছেন। তিনি ইতিমধ্যেই চারটি লিগে খেলে ফেলেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে খেলে বেড়ানোয় অনুশীলন শিবিরে খুব বেশি দেখা যায় না এঁদের।
বিভিন্ন দেশে খেলে অভিজ্ঞতা যেমন হচ্ছে, তেমনই রয়েছে সমস্যা। নিয়মিত ঘরের মাঠে ঘরোয়া লিগে খেলতে পারেন না তাঁরা। ঘরোয়া লিগে সময় দিতে না পারলেও দেশের হয়ে নিয়মিত খেলেন রশিদরা। সিরিজ শুরুর কয়েক দিন আগে দলের সঙ্গে যোগ দেন তাঁরা।
আফগানিস্তানের বিভিন্ন ক্রিকেটারের মতো রশিদ, নবিরা থাকেন সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতেই। প্রাক্তন ক্রিকেটার রেইজ আহমাদজাই এখন দলের সহকারী কোচ। তিনি বলেন, “আমাদের ক্রিকেটাররা বিভিন্ন লিগ খেলে। সেখান থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে আসে। যা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয় ওদের। ওরা হয়তো অনুশীলনে থাকতে পারে না, কিন্তু ওদের অভিজ্ঞতা সাজঘরকে সমৃদ্ধ করে। দলে রশিদ, মুজিবরা থাকলে আবহাওয়াটাই বদলে যায়। প্রচুর তথ্য নিয়ে আসে ওরা। অনুশীলনে থাকতে না পারলেও আমরা সেটা নিয়ে চিন্তা করি না। কারণ জানি ওরা দলে এলে অনেক কিছু জানতে পারবে তরুণ ক্রিকেটাররা।”
আরও একটি সমস্যা রয়েছে আফগানিস্তানে। সে দেশে কোচের অভাব। সিনিয়র দলে বার বার কোচ পরিবর্তন হতে থাকে। বিভিন্ন সিরিজে কখনও দায়িত্ব নেন জোনাথন ট্রট, কখনও ইউনিস খান, কখনও গ্রাহাম থর্প। কোনও কোচ সে দেশে গিয়ে কোচিং করান না। বিদেশ সফরে সিরিজের আগে দলের সঙ্গে যোগ দেন। আহমাদজাই বলেন, “কোচ এমন হওয়া উচিত যিনি দেশে থেকে ক্রিকেটারদের সঙ্গে সময় কাটাবেন। ক্রিকেটারদের তৈরি করবেন। কোচকে কৌশলগত দিকটাও দেখতে হয়। তাতে ক্রিকেটারদের চেনা খুব জরুরি। কিন্তু আমাদের দেশের যা অবস্থা তাতে সেটা সম্ভব নয়। কী পদ্ধতিতে আফগানিস্তানে ক্রিকেটার উঠে আসছে সেটা একজন কোচের জন্য জানা খুব দরকার। আমরা এখানে বেশ পিছিয়ে। জিম্বাবোয়েতে আমাদের কোনও প্রধান কোচ ছিল না, তাতেও আমরা জিতেছি।”
গত এক বছর ধরে তালিবান শাসনে দেশ যে জায়গায় রয়েছে তাতে ক্রিকেট যে এখনও টিকে রয়েছে, সেটাই অনেক বলে মনে করছেন সকলে। সেখানে রশিদদের জয় উৎসাহ বাড়িয়ে দিচ্ছে সমর্থকদের। ক্রিকেটপ্রেমীদের আবেগ বাড়ছে রশিদদের ঘিরে। বিনোদন বলতে সে দেশে এখন তো শুধুই ক্রিকেট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy