৩৫ বলে শতরান। আইপিএলে নজির ১৪ বছরের বৈভব সূর্যবংশীর। রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে ব্যাট করতে নেমে নতুন কীর্তি গড়ল বিহারের কিশোর ব্যাটার। সবচেয়ে কম বয়সি ক্রিকেটার হিসাবে আইপিএলে শতরান করল। গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে ২১০ রান তাড়া করতে নেমে ব্যাট হাতে ঝড় তুলল বৈভব। ১৭ বলে অর্ধশতরান করে আইপিএলে কনিষ্ঠতম হিসাবে কীর্তিও গড়েছে। শুধু তাই নয়, গোটা বিশ্বে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এত কম বয়সে শতরান করার নজির আর কারও নেই। শেষ পর্যন্ত বৈভবের ব্যাট থেকে এসেছে ৩৮ বলে ১০১ রানের ইনিংস। ৭টি চার এবং ১১টি ছক্কা রয়েছে তার ইনিংসে।
আইপিএলের নিলামে বৈভবকে ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় কিনেছিলেন রাজস্থান কর্তৃপক্ষ। তখন অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞই ভ্রু কুঁচকেছিলেন। বিহারের কিশোর ক্রিকেটারের উপর আস্থা রেখেছিলেন রাজস্থান কোচ রাহুল দ্রাবিড়। ভারতীয় ক্রিকেটের ‘দ্য ওয়াল’ বলেছিলেন, বৈভবকে পূর্ণ ক্রিকেটার হিসাবে গড়ে তুলবে রাজস্থান। দ্রাবিড় যে শুধু কথার কথা বলেননি, তা আইপিএলে সুযোগ পেয়েই প্রমাণ করে দিয়েছে বৈভব। লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে প্রথম খেলার সুযোগ পেয়েছিল বৈভব। প্রথম বলেই শার্দূল ঠাকুরের মতো অভিজ্ঞ বোলারকে ছয় মেরেছিল। তখনই বোঝা গিয়েছিল, কোন মানসিকতা নিয়ে ব্যাট করতে নামে আইপিএলের কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার। সোমবার ইশান্ত শর্মা, মহম্মদ সিরাজ, ওয়াশিংটন সুন্দরদের মতো বোলারদের নিয়ে এক রকম ছেলেখেলা করল বৈভব। রশিদ খানের মতো বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলারও সুবিধা করতে পারলেন না! জুনিয়র সতীর্থের দাপট দেখে যশস্বী জয়সওয়ালের (৪০ বলে ৭০) মতো ব্যাটার ২২ গজের অন্য প্রান্তে নিজেকে গুটিয়ে রাখলেন। তাঁদের প্রথম উইকেটের জুটিতে উঠল ১১.৫ ওভারে ১৬৬ রান! গুজরাতের বোলারেরা যেখানেই বল ফেলেছেন, বৈভব অনায়াসে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে। অভিজ্ঞ বোলারেরাও বুঝতে পারছিলেন না কোন লাইন এবং লেংথে বল করলে ১৪ বছরের ব্যাটারকে আটকানো যাবে। বোলিং পরিবর্তন বা ফিল্ডিং সাজানোর ক্ষেত্রে অসহায় দেখিয়েছে গুজরাত অধিনায়ক শুভমন গিলকেও।
বৈভবের বাড়ি বিহারের সমস্তিপুরের তাজপুরে। চার বছর বয়সে বাবার হাত ধরে ক্রিকেট শেখা শুরু তার। সাড়ে সাত বছর বয়সে বৈভবের বাবা সঞ্জীব তাকে নিয়ে যান পটনার এক ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে। সেখানেই কোচ সৌরভ কুমার প্রথম দেখেন বৈভবকে। অবাক হয়ে গিয়েছিলেন এত কম বয়সে তার ব্যাটিং দেখে। নেটে নামার জন্য ছটফট করত বৈভব। আর সেখানে তার বয়সি বোলারেরা প্রায় পাত্তাই পেত না। বড়দের সঙ্গে খেলানো হত বৈভবকে। আনন্দবাজার অনলাইনকে সৌরভ বলেছিলেন, “আমরা জানতাম নিলামে রাজস্থান ওর জন্য ঝাঁপাবে। প্রায় সব দলই বৈভবের খেলার ভিডিয়ো চেয়েছিল। দিল্লি আর রাজস্থান ট্রায়ালেও ডাকে। ১৯ নভেম্বর রাজস্থানের ট্রায়ালে গিয়েছিল বৈভব। পাঁচ দিনের মধ্যে ওরাই কিনে নিল ওকে।”
মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে বৈভব। বাবা কৃষক। একটি দোকানও আছে। জমি বিক্রি করে ছেলের ক্রিকেট শেখার খরচ জুগিয়েছেন সঞ্জীব। সমস্তিপুর থেকে ভোর ৪টের সময় বেরোতে হয়। পটনা পৌঁছতে সাড়ে ৭টা বেজে যায়। সেখানে কোচ মণীশ ওঝার কাছে প্রশিক্ষণ নেয় বৈভব। কাকভোরে খাবার বানিয়ে দেন বৈভবের মা। মণীশ বললেন, “সমস্তিপুরে বৈভবের বাড়ি থেকে পটনায় আমার অ্যাকাডেমির দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার। প্রতি দিন অনুশীলন করতে আসা সম্ভব ছিল না। এক দিন অন্তর আসত ও। তবে যে দিন আসত অন্তত ৫০০ বল খেলত।”
১২ বছর ২৮৪ দিন বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় মিডল অর্ডার ব্যাটার বৈভবের। ২১১ দিনের জন্য রেকর্ড গড়া হয়নি তার। ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলার নজির রয়েছে রাজপুতানার প্রাক্তন ক্রিকেটার আলিমুদ্দিনের। তার আগে ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ ‘বি’ দলের হয়ে ভাল পারফরম্যান্স করেছিল সে। ভাল খেলেছিল বিনু মাঁকড় ট্রফিতেও। সেই প্রতিযোগিতায় পাঁচ ম্যাচে ৪০০-র বেশি রান করে সে। গত বছর ১ অক্টোবর বেসরকারি টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার অনূর্ধ্ব ১৯ দলের বিরুদ্ধে ৫৮ বলে শতরান করে আলোচনায় উঠে আসে বৈভব। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের লাল বলের ক্রিকেটে ভারতের হয়ে এটাই দ্রুততম শতরান। ইনিংসে ছিল ১৪টি চার ও চারটি ছয়। স্ট্রাইক রেট ১৬৭.৭৪।
আরও পড়ুন:
শুভমনের দলের বিরুদ্ধে ১০১ রানের ইনিংস বৈভবকে ভারতীয় ক্রিকেটে ‘তারকা’র মর্যাদা এনে দেবে। এত কম বয়সে এমন ব্যাটিং দেখে বিস্ময় লুকিয়ে রাখতে পারেননি ধারাভাষ্যকারেরাও। আইপিএলের প্লে-অফের লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য গুজরাতের বিরুদ্ধে জয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল রাজস্থানের জন্য। বৈভবের ব্যাটেই এল সেই জয়। প্রথমে ব্যাট করে ৪ উইকেটে ২০৯ রান করেছিলেন শুভমনেরা। জবাবে ১৫.৫ ওভারে ২ উইকেটে ২১২ রাজস্থানের। ২৫ বল বাকি থাকতে ৮ উইকেটে ম্যাচ জিতল রিয়ান পরাগের দল। এ দিনের জয়ের ফলে ১০ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে তালিকায় অষ্টম স্থানে উঠে এল রাজস্থান। হুইলচেয়ারে থাকা দ্রাবিড়কে দাঁড় করিয়ে দিল ১৪ বছরের সূর্যবংশী।
- ১৮ বছরের খরা কাটিয়ে ট্রফি জিতেছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। প্রথম বার আইপিএল জেতার স্বাদ পেয়েছেন বিরাট কোহলি। ফাইনালে পঞ্জাব কিংসকে ছ’রানে হারিয়েছে বেঙ্গালুরু।
- ট্রফি জেতার পরের দিনই বেঙ্গালুরুতে ফেরেন বিরাট কোহলিরা। প্রিয় দলকে দেখার জন্য প্রচুর সমর্থক জড়ো হয়েছিলেন চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে। সেখানে হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১১ জনের। আহত ৫০-এরও বেশি। ঘটনাকে ঘিরে দায় ঠেলাঠেলি শুরু হয়েছে।
-
১১ মৃত্যুর জের, আইপিএল জয়ের উৎসবে কী কী করা যাবে না, শনিবার ঠিক করবে বোর্ড, আর কী কী নিয়ে আলোচনা?
-
‘লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় হবে’! বেঙ্গালুরুতে কোহলিদের উৎসবের আগে সতর্ক করেছিল পুলিশই, তবু কেন এড়ানো গেল না দুর্ঘটনা
-
আইপিএলের শেষ পর্বে ছিলেন না, ভারত-পাক সংঘাত, না কি ‘বিশেষ’ কারণে খেলতে আসেননি স্টার্ক?
-
‘ভিড়ের চাপে স্ত্রীয়ের হাত ছুটে যায়’, পদপিষ্টে প্রিয়জন হারিয়ে কথা বলার ভাষা নেই পরিবারের
-
অফিসে খোলা পড়ে ল্যাপটপ, আরসিবি-র অনুষ্ঠান দেখেই ফিরবেন বলেছিলেন, ফিরে এল তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী কামাক্ষীর দেহ