খেলছে পাপাই, খেলছে পাপাই,/ মারছে পাপাই চার,/খেলছে পাপাই, খেলছে পাপাই,/ মারছে পাপাই ছয়...!
প্রথমেই ‘চন্দ্রবিন্দু’ আর শিলিগুড়ির পাপালির কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। সামান্য বদলে নিয়েছি পংক্তিগুলি, সে তো ছন্দ মেলানোর তাগিদেই। ছন্দটাই তো শেষ কথা! ছন্দে পড়লে নেচে উঠবে জীবন, প্রকৃতি, গান, কবিতা থেকে ক্রিকেট। কেউ কেউ জানেন সে ভাবে মেলাতে।
শেক্সপিয়ার বলেছিলেন, ‘‘হোয়াটস ইন আ নেম!’’ নামে কীই বা আসে যায়! পাপালির ঝলকানিতে যদি কোনও পাপাই শ্যাডো করতে থাকে বারান্দায়, তবে লাভ বই ক্ষতি তো নেই। তার পরে সে মাথা তুলে দিগন্তে তাকালে দেখতে পাচ্ছে ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ কাঞ্চনজঙ্ঘা। আবার মাথা নামিয়ে সেই পাপাই ফিরে যাচ্ছে শ্যাডোতে। তাকে যে পাপালির মতো হতে হবে!
টি, টিম্বার, টুরিজ়মের সঙ্গে এত দিনে শিলিগুড়ির আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গিয়েছে টেবিল টেনিসও। কিন্তু তাই বলে ক্রিকেট? সে কি শুধু পাপালির জন্যই ব্রাত্যজন থেকে উঠে এল অভিজাত আঙিনায়? একটু বরং হেঁটে আসা যাক স্মৃতির পথে।
স্মৃতি রোমন্থন কি বার্ধক্যের লক্ষণ? না। বরং অতীত বিস্মৃতি মানুষকে শিকড়হীন, ভুঁইফোঁড় করে তোলে। তাই যে দিন আইপিএলে খাদের কিনার থেকে দলকে ধীরে ধীরে তুলে এনে শেষ চারে প্রতিষ্ঠা করলেন পাপালি, সে দিন ‘তিলক ময়দানের’ স্মৃতিপথে হাঁটতে ক্ষতি কি? বিধান রোড থেকে গোষ্ঠ পাল মূর্তিকে ডাইনে রেখে হাঁটতে হাঁটতে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই টিনে ঘেরা তিলক ময়দান। কানে ভেসে আসে দর্শকদের আওয়াজ।
শীতের কুয়াশা মাখা সকালের তিলক ময়দান হয়তো আজ অনেক বদলেছে, কালের নিয়মে আধুনিকতার ছোঁয়ায় সে আজ অনেক বেশি ঝলমলে, আলোকিত। কিন্তু প্রজন্মের ব্যবধান কি বদলাতে পারে মাঠের মেজাজ? বোধহয় না! তাই সে দিন যে ভাবে শীতের তিলক ময়দানে লোভীর মতো দৌড়তেন ফিল্ডার ক্যাচ লুফতে, স্টেপ আউট করে ছয় মারতেন ব্যাটসম্যান বা লাল বল হাতে ঝলসে উঠতেন বোলার, আজ এত দিন পরেও সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে। তার মধ্যেই কেউ হয়তো চেঁচিয়ে ওঠেন, ‘ফাইট, পাপাই, ফাইট...!’ হঠাৎ মনে হল দশক আগের জয়ন্ত ভৌমিকের গলা শুনছি না তো? পাপাই বলল, নাকি পাপালি? শীত রোদে ঘাসে ঘাসে তখন পাপাই আর পাপালি এক হয়ে যাচ্ছে।
পাপালি নামটাই একটা স্বপ্ন এখন। তাঁর নিঃশব্দ প্রত্যাবর্তন মনে করিয়ে দিচ্ছে, মেজাজটাই তো আসল রাজা...! নাকি মহারাজ? তাঁকেই কাম ব্যাকের শেষ কথা বলা হত এত দিন।
তার পর পাপাই দেখতে পেল, ঋদ্ধিমান সাহা ব্যাট তুলে আকাশে চাইছেন, আর বদলে যাচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা ক্রীড়াঙ্গন, শহরের দিগন্তে বরফের মুকুট আরও ঝকঝকে হচ্ছে, তিলক ময়দানের টিনের ব্যারিকেড ভেদ করে শোনা যাচ্ছে দর্শকদের গর্জন।
ক্রিকেট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, উত্তুরে শীত, সব নিয়েই এ শহরে ফের একটা শীতকাল আসছে ‘সুপর্ণা’!
(লেখক শিক্ষক ও কবি)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy