Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Covid-19

কী হবে এর পরে, প্রশ্ন ওঁদের মনে...

রেল বা পুলিশের মতো অফিস দলগুলোর খেলা রাজ্য কবাডিতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল তিন বছর আগেই।  গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতোই করোনার দাপটে বন্ধ হয়েছে ওঁদের ম্যাচ অনুশীলনও।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২০ ০৫:০৬
Share: Save:

করোনার ধাক্কায় রাতের ঘুম উড়েছে রামকুমার সাউ, অমরেশ মণ্ডল, মুকেশ ঠাকুরদের মতো রাজ্যের প্রথম সারির কবাডি খেলোয়াড়দের!

রেল বা পুলিশের মতো অফিস দলগুলোর খেলা রাজ্য কবাডিতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল তিন বছর আগেই। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতোই করোনার দাপটে বন্ধ হয়েছে ওঁদের ম্যাচ অনুশীলনও। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে ফের ম্যাটে নামবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা ওঁদের গলায়।সমস্যাটা হচ্ছে, অন্যান্য খেলা করোনার প্রকোপ কমলে শুরু করা নিয়ে কথা চলছে। তবে কবাডি যে-হেতু ভীষণ ভাবেই শারীরিক সংস্পর্শ থাকা একটি খেলা, করোনার জেরে প্রাচীন এই খেলার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

গত বছর নেপালে পাঁচ দেশীয় কবাডি চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের অধিনায়কত্ব করেছিলেন রামকুমার। গত দুই দশকে বাংলা থেকে সিনিয়র জাতীয় পুরুষ দলের একমাত্র সদস্য তিনিই। কলকাতা পুলিশের এই কর্মী পটনা পাইরেটসের হয়ে দু’বার প্রো-কবাডি লিগেও চ্যাম্পিয়ন। হতাশ গলায় রামকুমার বলছেন, ‍‘‍‘জাতীয় স্তরে ভাল ফল না-হলে নির্বাচকদের নজরে পড়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে প্রো-কবাডির পাশাপাশি জাতীয় দলের দরজা বন্ধ।’’ এখন তাঁর বাড়তি উদ্বেগ, ‘‘করোনার প্রকোপে আমাদের খেলাটাই না বন্ধ হয়ে যায়।’’ কবাডি এমনই একটা খেলা যেখানে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়, মেনে নিচ্ছেন রামকুমরা-সহ অনেকেই।

একই রকম চিন্তিত গত এশিয়ান গেমসে রানার্স মহিলা কবাডি দলের অধিনায়ক পায়েল চৌধুরী বা এই মুহূর্তে বাংলা কবাডি দলের আলোচিত প্রতিভা মুকেশ ঠাকুর, সুরশ্রী পাখিরাও। চন্দননগরের পায়েল রেলে কর্মরত। এঁদের প্রত্যেকেরই প্রশ্ন, করোনা-পরবর্তী অধ্যায়ে কবাডির মতো শারীরিক সংঘাতের খেলার ভবিষ্যৎ কী হতে যাচ্ছে। ‍‘‍‘এর পরে কী হবে?’’ প্রশ্ন তাঁদের।

জাতীয় নির্বাচকদের তালিকায় ইতিমধ্যেই উঠেছে সুরশ্রীর নাম। তাঁর বক্তব্য, ‍‘‍‘নিজের উদ্যোগে সকালে ছুটতে যাচ্ছি। বিকেলে জিম করছি। সঙ্গে ম্যাচ অনুশীলনের জন্য ‍শ্যাডো প্র্যাক্টিস। কাল্পনিক ভাবে, বিপক্ষের হাত বা পায়ের পাতা স্পর্শ করে পয়েন্ট ছিনিয়ে আনার সেই কৌশলে শান দিচ্ছি।’’ এই দুঃসময়ে রাজ্য সংস্থার কোনও উদ্যোগ? সুরশ্রী, মুকেশদের কাছ থেকে কোনও উত্তর পাওয়া যায় না।

রাজ্য কবাডি সংস্থার এখন নাম পাল্টে হয়েছে ‍‘একেএফআই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ইউনিট’। এই নামেই জাতীয় পর্যায়ে এখন খেলছে বাংলা। রাজ্য লিগ বা নকআউট বা অফিস প্রতিযোগিতা বন্ধ বহু দিন। ভরসা জেলাস্তরের প্রতিযোগিতা। বাংলা দলও তৈরি হয় জেলার খেলোয়াড়দের নিয়ে। পায়েল বলছেন, ‍‘‍‘অফিস দলের খেলোয়াড় নেই। অভাব রয়েছে আধুনিক অনুশীলন পদ্ধতি বা প্রযুক্তির। অনভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের নিয়ে দু’মাস অনুশীলন করে জাতীয় স্তরে খেলতে গেলে ফল ভাল হবে কী ভাবে?’’

জাতীয় প্রতিযোগিতায় পুরুষদের বিভাগে বাংলা শেষ সেমিফাইনাল খেলেছে ১৯৯৮ সালে। গত কয়েক বছরে প্রো-কবাডি লিগে কোটিপতি খেলোয়াড়ের সংখ্যা বেড়েছে। সেখানে গত বছর প্রো-কবাডিতে বাংলা থেকে কোনও খেলোয়াড়ই জায়গা পাননি। এই প্রতিযোগিতায় এ পর্যন্ত বাংলা থেকে খেলেছেন মাত্র পাঁচ জন। সেখানে উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রের খেলোয়াড় গিজগিজ করছে এই লিগে। গত বছর চ্যাম্পিয়ন হওয়া কলকাতার দল ‍‘বেঙ্গল ওয়ারিয়র্স’-এ ছিল না বাংলারই কোনও মুখ।

সিনিয়র ভারতীয় মহিলা দলের কোচ ও জুনিয়র জাতীয় দলের নির্বাচক বাংলার বনানী সাহা। সিনিয়র জাতীয় পুরুষ দলের নির্বাচক শ্রীনিবাস রেড্ডি। তাঁরা দু’জনেই বলছেন, বাংলায় প্রতিভা প্রচুর। শ্রীনিবাসের কথায়, ‍‘‍‘রমা সরকার, বিশ্বজিৎ পালিতেরা তো বাংলা থেকেই অর্জুন হয়েছেন। এখন পায়েল খেলছে। ভাল খেলোয়াড়েরা রেল, ব্যাঙ্কে চাকরি করতে চলে যান। তাই হয়তো নতুন মুখ কম।’’

রাজ্য সংস্থার দুই যুগ্ম সচিব বিশ্বজিৎ ও হাবিব আলি। দু’জনেই জাতীয় দলে খেলেছেন। বিশ্বজিৎ ১৯৯৮ সালে ব্যাঙ্কক এশিয়ান গেমসে সোনাজয়ী অধিনায়ক। দুই যুগ্ম সচিবের বক্তব্য, ‍‘‍‘অফিস দলগুলোকে রাজ্য সংস্থায় খেলতে দেওয়া হয় না কেন জানি না! অনেকেই জাতীয় প্রতিযোগিতায় তাঁর অফিস দলে জায়গা না পেলে আমাদের হয়ে খেললে বাংলারই ভাল। অন্য রাজ্যে এটাই হয়ে থাকে।’’

রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় রাজ্য কবাডি সংস্থার প্রেসিডেন্ট। অফিসে কর্মরতদের কেন বাংলা দলে খেলতে দেওয়া হয় না সেই প্রশ্ন নিয়ে তাঁর যুক্তি, ‍‘‍‘জেলা থেকে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েরা আসে। অফিস দলের বিত্ত রয়েছে। তাই আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ওদের ছেলেমেয়েরা বেশি পায়। আমাদের সেই আর্থিক জোর নেই। ফলে ওদের বিত্ত দেখলে আমাদের জেলার ছেলেদের হীনমন্যতা আসতে পারে। তাই এই সিদ্ধান্ত।’’

অন্য বিষয়গুলি:

COVID-19 Coronavirus Lockdown Kabaddi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy