Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Football

স্পেনের করোনা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারের বৃদ্ধ বাবা

লাল হলুদের ফুটবলার মার্কোসের চিকিৎসক বাবা মারিয়োর তৎপরতা এখন আগের থেকে বহু গুণে বেড়ে গিয়েছে।

ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলার মার্কোস। (ডান দিকে) মার্কোসের বাবা মারিয়ো।

ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলার মার্কোস। (ডান দিকে) মার্কোসের বাবা মারিয়ো।

কৃশানু মজুমদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২০ ১৬:৫৪
Share: Save:

তাঁর ছেলে মার্কোস দে লা এসপাড়া যখন ইস্টবেঙ্গলের জার্সি পরে ঘাম ঝরাচ্ছিলেন, তিনি তখন স্পেনে অন্য এক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ‘বুলফাইটিং’-এর দেশে তখন সবেমাত্র থাবা বসাতে শুরু করেছে মারণ ভাইরাস।

আর এখন, করোনার কোপে গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত স্পেন। দিন-রাত এক করে তিনি এখন করোনা যুদ্ধে দেশের অন্যতম যোদ্ধা।

লাল হলুদের ফুটবলার মার্কোসের চিকিৎসক বাবা মারিয়োর তৎপরতা এখন আগের থেকে বহু গুণে বেড়ে গিয়েছে। সে দেশের সরকার ঘরের বাইরে বেরোতে নিষেধ করেছে মানুষদের। কিন্তু ৬৭ বছরের মারিয়ো সেই সব নিষেধাজ্ঞাকে তোয়াক্কা না করে চিকিৎসার মহান ধর্ম পালন করার জন্য রোগীর ঘরে ঘরে ছুটছেন। তাঁদের অবস্থা খতিয়ে দেখছেন।

আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের পর করোনা যুদ্ধে নামলেন দীনেশ চান্ডিমলও

বুধবার মারিয়োর সঙ্গে যখন যোগাযোগ করা হল, তখন সে দেশের স্থানীয় সময় সকাল ১০টা। স্পেনের পোলেনসার বাড়ি থেকে সাত কিলোমিটার দূরের ডিসপেনসারিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মার্কোসের বাবা। আনন্দবাজার ডিজিটালকে মারিয়ো বললেন, ‘‘আমি যেখানে থাকি, সেই এলাকায় এখনও পর্যন্ত তিন জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি যা, সেই তুলনায় আমার এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যাটা কমই। তবে সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সরকারের তরফে যে নির্দেশিকা দেওয়া হচ্ছে, তা মেনে চলা ছাড়া উপায় নেই।’’

স্পেনের মানুষ ঘরবন্দি। সে দেশে মৃত্যুমিছিল। দেশ জুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে এক লক্ষ। মৃত প্রায় সাড়ে আট হাজার। মারিয়ো বলছেন, ‘‘এই সময়ে স্পেনে ফ্লু হওয়া স্বাভাবিক। অ্যান্টিবায়োটিক, প্যারাসিটামল দেওয়া হয় রোগীদের। ছ’-সাত দিন বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকি। এ বার কোভিড-১৯-এর আক্রমণ মহামারির আকার নিয়েছে।’’

এই মারণভাইরাসে বয়স্কদের ঝুঁকি কিছুটা বেশি। তাঁদের ঘর থেকে বেরোতেই নিষেধ করা হয়েছে। ৬৭ বছরের মারিয়োকে অবশ্য নিয়মিত বেরোতে হচ্ছে। মার্কোসের বাবা বলছেন, ‘‘কিছু করার নেই। আমাকে তো অন্য মানুষের সেবার জন্য যেতেই হবে। মানুষের খারাপ সময়ে ঝাঁপিয়ে পড়া তো ডাক্তারদেরই কাজ। অনেক রোগীর বাড়ি যাচ্ছি। তাঁদের অবস্থা খতিয়ে দেখে পরামর্শ দিচ্ছি। আমার কাজ আমি করে যাচ্ছি।’’

ছেলে মার্কোস এখনও কলকাতায়। এই শহরেও ছড়িয়েছে সংক্রমণ। এই দুঃসময়ে ছেলের জন্যও দুশ্চিন্তা হচ্ছে তাঁর। ইস্টবেঙ্গল স্ট্রাইকারের জন্য তাঁর পারমর্শ কী? মারিয়ো বলছেন, ‘‘পরামর্শ একটাই। ঘরের বাইরে বেরনো যাবে না। মার্কোসকে বলে দিয়েছি, খুব প্রয়োজন না হলে বেরবেই না। অনেক মানুষ যেখানে এক জায়গায় রয়েছেন, সেই জায়গা এড়িয়ে চলতে হবে। মার্কোসকে এই কথাগুলোই রোজ বলি।’’

আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশে দুশো পরিবারের দায়িত্ব নিলেন মোসাদ্দেক হোসেন

এ দিকে মার্কোস, কিবু ভিকুনা, ফ্রান গনজালেজদের মতো স্পেনীয় ফুটবলারদের বিশেষ বিমানে দেশে ফেরাতে চাইছে স্পেন। ভারতে থাকা স্পেনীয় ফুটবলারদের কাছে ইতিমধ্যেই চিঠি পাঠিয়েছে সে দেশের দূতাবাস। ফোনে যোগাযোগ করা হচ্ছে দ্রুত ফেরার জন্য। উদ্বেগ নিয়ে কলকাতায় অপেক্ষা করছেন স্পেনীয় ফুটবলাররা।

মারিয়ো বলছেন, ‘‘আমি জানি স্পেনীয় ফুটবলারদের দেশে ফেরানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। আই লিগ এখনও শেষ হয়নি। করোনাভাইরাসের কোপে টুর্নামেন্টই স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। ফেডারেশন যত ক্ষণ না আই লিগ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তত ক্ষণ ওদের দেশে ফেরত আসা কঠিন।’’

পৃথিবীর দু’ প্রান্তে লড়াই চালাচ্ছেন পিতা-পুত্র। এক জন লড়ছেন নিজেকে সুস্থ রাখতে। আর এক জন লড়াই চালাচ্ছেন দেশকে সুস্থ করতে।

অন্য বিষয়গুলি:

East Bengal Marcos De La Espada Mario De La Espada
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE