Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
করোনার ধাক্কা: কী প্রভাব বাংলার খেলায়/ টেবল টেনিস
Coronavirus Lockdown

মহড়ার অভাবে লক্ষ্য কঠিন হচ্ছে সুতীর্থাদের

২০১৮ কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জিতেছেন সুতীর্থা। বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে ৯৫ হলেও ভারতীয়দের র‌্যাঙ্কিংয়ে তিনিই শীর্ষে।

লড়াই: ম্যাচ প্র্যাক্টিস হচ্ছে না। সমাধান খুঁজছেন মরিয়া সুতীর্থা।

লড়াই: ম্যাচ প্র্যাক্টিস হচ্ছে না। সমাধান খুঁজছেন মরিয়া সুতীর্থা।

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২০ ০২:৩৬
Share: Save:

ক্রিকেটার হলে মাঠে নেট প্র্যাক্টিস করে নিজেকে তৈরি রাখা যায়। সমস্যা হয় না ফুটবলারদেরও। কিন্তু ক্লাব না খুললে টেবল টেনিস খেলোয়াড়েরা প্রস্তুতি নেবেন কী ভাবে? বাড়িতে বোর্ড রাখার জায়গা অনেকেরই নেই। বন্ধ বেশির ভাগ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। করোনা অতিমারি তাই বড় কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে বাংলার টেবল টেনিস প্রতিভা সুতীর্থা মুখোপাধ্যায়ের অলিম্পিক্স স্বপ্নে।

২০১৮ কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জিতেছেন সুতীর্থা। বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে ৯৫ হলেও ভারতীয়দের র‌্যাঙ্কিংয়ে তিনিই শীর্ষে। শেষ সাফ গেমসে তিনটি সোনা জিতেছেন নৈহাটির ২৪ বছর বয়সি খেলোয়াড়। কমনওয়েলথ টেবল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের হয়ে একটি সোনা, একটি রুপো ও একটি ব্রোঞ্জ জিতে ফিরেছেন। এপ্রিলে ব্যাঙ্কক উড়ে যাওয়ার কথা ছিল অলিম্পিক্স যোগ্যতা অর্জন পর্বে যোগ দিতে। সেই প্রতিযোগিতা বাতিল হয়ে গিয়েছে। র‌্যাঙ্কিংয়ের ভিত্তিতে ভারতের মণিকা বাত্রা, জি সাথিয়ান এবং শরৎ কমল হয়তো যোগ্যতা অর্জন করে যেতে পারেন। যোগ্যতা অর্জন পর্বে ভাল ফল হলেই টোকিয়োর টিকিট হাতে পেয়ে যাবেন বাংলার সুতীর্থা।

কিন্তু সেই স্বপ্নে কালো মেঘ জমতে শুরু করেছে। চার মাস বাড়িতে বসে থাকার ফলে দক্ষতায়় ভাঁটা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সুতীর্থা বলছিলেন, ‘‘সব দিক থেকেই খুব সমস্যায় পড়েছি। ক্রিকেটার, অথবা ফুটবলার হলে মাঠে গিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া যায়। কিন্তু আমাদের ক্লাব না খুললে প্র্যাক্টিস করার সুযোগ নেই। তবুও বাড়িতেই যতটা সম্ভব ফিজিক্যাল ট্রেনিং, শ্যাডো প্র্যাক্টিস করছি। সৌম্যদীপদা ও পৌলমীদি অনলাইনে আমাদের ক্লাস করাচ্ছেন।’’ উদ্বিগ্ন গলায় যোগ করছেন, ‘‘অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচও সব বাতিল হয়ে গিয়েছে। কবে হবে তারও কিছু ঠিক নেই। তবু যোগ্যতা অর্জন পর্বের জন্যই নিজেকে তৈরি করে রাখছি।’’

সুতীর্থা যদিও মনে করেন, এই চার মাস গৃহবন্দি থাকার ফলে কিছু সমস্যা তৈরি হওয়াই স্বাভাবিক। বলছিলেন, ‘‘ম্যাচ প্র্যাক্টিস না হলে ঠিক বোঝা যাবে না কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। তবে এত দিন সে ভাবে অনুশীলনের সুযোগ না পাওয়ায় রিফ্লেক্সের কিছুটা সমস্যা হওয়া স্বাভাবিক।’’

সুতীর্থার কোচ ও প্রাক্তন অলিম্পিয়ান পৌলমী ঘটকও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পৌলমী বলছিলেন, ‘‘যতটা সম্ভব সুতীর্থাকে অনলাইনে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি আমি আর সৌম্যদীপ। লকডাউনের মধ্যে বাড়িতে থেকেই যাতে নিজেকে ফিট রাখা যায়, তার চেষ্টাই চলছে। জুনিয়র স্তরের খেলোয়াড়দের সমস্যা হবে না। কারণ, ওদের সামনে কোনও প্রতিযোগিতা নেই। সমস্যা হবে সিনিয়রদের। বিশেষ করে যারা অলিম্পিক্সের জন্য তৈরি হচ্ছে।’’ পৌলমীর ব্যাখ্যা, ‘‘বেলজিয়াম, চিন, জাপানে কিন্তু বেশির ভাগ ক্লাব খুলে গিয়েছে। শুরু হয়ে গিয়েছে প্রস্তুতিও। ভারতে এখনও সে ভাবে প্রস্তুতি শুরু হয়নি। সে দিক থেকে কিন্তু এই লকডাউন আমাদের টেবল টেনিস খেলোয়াড়দের জন্য বড় ধাক্কা। যত দিন যাচ্ছে, তত আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি।’’

নৈহাটির ঐহিকা মুখোপাধ্যায় কমনওয়েলথ টেবল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতে ফিরেছেন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে যাওয়ার কথাও ছিল তাঁর। লকডাউনের জন্য সেই প্রতিযোগিতা বাতিল হয়ে গিয়েছে। প্রি-অলিম্পিক্সও বাতিল। ঐহিকা বলছিলেন, ‘‘ফিটনেস ট্রেনিং আর শ্যাডো প্র্যাক্টিস করে যাচ্ছি। করোনা আর লকডাউন মানসিক ভাবে অনেক পিছিয়ে দিচ্ছে।’’

বাংলার রাজ্য টেবল টেনিস সংস্থার এক কর্তা জানিয়েছেন, সরকার থেকে অনুমতি না পেলে কোনও ক্লাব অথবা অ্যাকাডেমি খোলার নির্দেশ দেওয়া হবে না। তত দিন বাড়িতে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে প্রত্যেককে। বাংলার উঠতি খেলোয়াড়দের জন্যও পরিস্থিতি কঠিন। গড়িয়ার ২০ বছর বয়সি জিৎ চন্দ্র যেমন। ওমান ওপেন চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফিরেছেন অনূর্ধ্ব-২১ বিভাগে। ভারতে যুব র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে জিৎ। বিশ্ব যুব র‌্যাঙ্কিংয়ে ৯ নম্বরে। অলিম্পিয়ান পৌলমী ঘটককে প্রশিক্ষণ দিতেন তাঁর বাবা তপন চন্দ্র। বর্তমানে বাবার কাছেই প্রস্তুতি চলছে। জিৎ বলছেন, ‘‘ওমান থেকে সোনা জিতে ফেরার পরে আত্মবিশ্বাস ছিল তুঙ্গে। সব বন্ধ হওয়ার পর থেকে মন ভাল নেই। তবু বাবার কাছে প্রস্তুতি নিই।’’ জিতের বাবা তপন চন্দ্র বেশ চিন্তিত। তাঁর কথায়, ‘‘ওমান থেকে ফেরার পরে এ মাসেই ইটালি যাওয়ার কথা ছিল। ওর মতো জাতীয় দলের খেলোয়াড় যদি এ ভাবে বাড়িতে বসে থাকে, তা হলে সমস্যা তো হবেই। সামনে কোনও প্রতিযোগিতা নেই। কী লক্ষ্য নিয়ে এগোবে?’’

অলিম্পিয়ান মৌমা দাস সদ্য মা হয়েছেন। তবুও এত দিন গৃহবন্দি থাকার পরে একজন টেবল টেনিস খেলোয়াড়ের কতটা সমস্যা হতে পারে, তা উপলব্ধি করতে পারছেন। মৌমা বলছিলেন, ‘‘চোট থেকে ফেরার পরে ছন্দে ফিরতেই অনেক সময় লাগে। ব্যাটে, বলে ঠিক মতো টাইমিং হয় না। লকডাউনে অবস্থা আরও খারাপ হবে। শারীরিক ক্ষতির সঙ্গেই অবসাদ গ্রাস করে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ধ্যান ও যোগব্যায়াম অত্যন্ত জরুরি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Table Tennis coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy