Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
তোপের মুখে অলিম্পিক্স কর্তারা
2020 Tokyo Olympics

করোনা আতঙ্কের মধ্যে প্রস্তুতি কী করে, উঠছে প্রশ্ন

আইওসি-র সর্বশেষ বিবৃতির যা সুর, তাতে একে তো অলিম্পিক্স জুলাইয়ে হওয়ার কথাই বেশি করে বলা হয়েছে।

উৎসাহী: এই বিমানেই আসবে অলিম্পিক্সের মশাল। জাপানি প্রতিনিধি দলকে বিদায় জানাচ্ছেন বিমানবন্দরের কর্মীরা। বুধবার টোকিয়োয়। এএফপি

উৎসাহী: এই বিমানেই আসবে অলিম্পিক্সের মশাল। জাপানি প্রতিনিধি দলকে বিদায় জানাচ্ছেন বিমানবন্দরের কর্মীরা। বুধবার টোকিয়োয়। এএফপি

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২০ ০৬:২৩
Share: Save:

করোনাভাইরাস অতিমারির জেরে বিশ্বের সব খেলাই প্রায় বন্ধ থাকলেও অলিম্পিক্স বাতিল করা বা পিছিয়ে দেওয়ার কোনও আগ্রহ দেখাচ্ছে না আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি)। তা নিয়ে বিশ্বের নামী অ্যাথলিটেরা বেশ ক্ষুব্ধ এবং প্রকাশ্যে সেই ক্ষোভ বেরিয়ে আসতেও শুরু করেছে।

অলিম্পিক্স চ্যাম্পিয়ন গ্রিক পোলভল্টার ক্যাটেরিনা স্টেফানিডি বলে দিয়েছেন, আইওসি তাঁদের স্বাস্থ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। হেপ্টাথলনে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রিটিশ ক্যাটেরিনা জনসন-থম্পসন সদ্য ইংল্যান্ড ফিরেছেন ফ্রান্সে ট্রেনিং করে। আমেরিকায় তাঁর ট্রেনিং ক্যাম্প বাতিল করতে হয়েছে। তিনি এ দিন তোপ দেগেছেন, ‘‘এক দিকে আমরা প্রত্যেকে নিজেদের দেশের সরকারের কথা শোনার চেষ্টা করছি। যাতে সকলের স্বাস্থ্যের দিকটা দেখতে পারি এবং সকলে নিরাপদ থাকি। অন্য দিকে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) সম্পূর্ণ উল্টো কথা বলছে।’’

আইওসি-র সর্বশেষ বিবৃতির যা সুর, তাতে একে তো অলিম্পিক্স জুলাইয়ে হওয়ার কথাই বেশি করে বলা হয়েছে। উল্টে, প্রতিযোগীদের আহ্বান জানানো হয়েছে, প্রস্তুতি চালিয়ে যাও। এখানেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে প্রতিযোগীদের মধ্যে। প্রশ্ন উঠেছে, কী ভাবে প্রতিযোগীরা প্রস্তুতি চালিয়ে যাবেন? যেখানে বিশ্ব জুড়ে সব কিছুই বন্ধ রয়েছে এবং গরিষ্ঠ সংখ্যক মানুষ ঘরে বসে থাকছেন করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়ানো থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য, সেখানে অলিম্পিক্সের মতো বড় ইভেন্টের প্রস্তুতি কী ভাবে শুধু বাড়িতে বসে নেওয়া সম্ভব? ক’জনের বাড়িতে সেই অত্যাধুনিক প্র্যাক্টিস ব্যবস্থা রয়েছে? অলিম্পিক্সের আর মাত্র চার মাস বাকি। তাই উদ্বেগ এবং চাপের মধ্যে প্রস্তুতি নিয়ে এই বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ায় অনেকেই দিশেহারা।

জনসন-থম্পসন যেমন বলেছেন, ‘‘এ রকম পরিস্থিতিতে ট্রেনিং করাটা খুবই চাপের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। একই রকম রুটিন চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব।’’ চিনে প্রথম শুরু হওয়া ভাইরাসের প্রকোপ এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে এবং ইংল্যান্ডেও যথেষ্ট আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে অনুশীলন চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়াটাও যথেষ্ট অমানবিক বলে দাবি উঠেছে।

মজা হচ্ছে, অ্যাথলিটদের সমালোচনার মুখে পড়েও আইওসি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘আমরা একটা ব্যতিক্রমী পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। যেখান থেকে বেরিয়ে আসতে দরকার ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নেওয়ার।’’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘‘আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। চেষ্টা করছি সমাধানের এমন কোনও রাস্তা খুঁজে বার করতে যা অ্যাথলিটদের উপরে কোনও রকম নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। আমরা দেখছি কী ভাবে একই সঙ্গে গেমস চালু রেখেও অ্যাথলিটদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখা যায়।’’ আইওসি তাঁদের এ হেন ‘ব্যতিক্রমী’ উদ্যোগে অ্যাথলিটদের সমর্থনও প্রার্থনা করেছে। জনসন-থম্পসন বলেছেন, , ‘‘আমার দেশে পরিকাঠামো অসাধারণ। আমি নিজেও সম্পূর্ণ সুস্থ। অলিম্পিক্সের জন্য যোগ্যতাও অর্জন করেছি। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে অনুশীলনের সুযোগ কোথায়?’’

স্টেফানিডি আইওসি-কে রীতিমতো একহাত নিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আইওসি আমাদের স্বাস্থ্য, আমাদের পরিবারের স্বাস্থ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। কী ভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই মুহূর্তে আমাদের পক্ষে প্রত্যেক দিন অনুশীলন করে যাওয়া সম্ভব?’’ চার বারের অলিম্পিক সোনাজয়ী এবং এখন আইওসি সদস্য হেলি উইকেনহাইজার নিজেদের সংস্থাকেই তুলোধনা করে বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং অপরিণত’। তাঁর বক্তব্য, ‘‘করোনাভাইরাস নিয়ে তৈরি হওয়া সংকট অলিম্পিক্স হবে কি হবে না, তার চেয়েও অনেক অনেক বড়।’’ কানাডার প্রাক্তন আইস হকি তারকা উইকেনহাইজারের আরও যুক্তি, ‘‘অ্যাথলিটরা ট্রেনিং করতে পারছে না। কেউ ভ্রমণ সূচি বানাতে পারছে না। পরের চব্বিশ ঘণ্টায় কী হবে কেউ জানে না, তিন মাস তো অনেক দূরের কথা।’’ দু’টি বড় ফুটবল প্রতিযোগিতা ইউরো এবং কোপা আমেরিকা আগামী বছরে পিছিয়ে দেওয়ায় আরও বেশি করে অলিম্পিক্স নিয়ে কথা উঠছে। স্পেনের অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট আলেজান্দ্রো ব্লাঙ্কো দাবি করেছেন, টোকিয়ো অলিম্পিক্স বাতিল করা হোক। চিন এবং ইটালির পরে করোনায় সব চেয়ে আক্রান্ত স্পেন। অন্তত ১২,০০০ মানুয স্পেনে করোনা-আক্রান্ত। গ্রেট ব্রিটেনের পাঁচ হাজার মিটার দৌড়ের নামী অ্যাথলিট জেসিকা জুড যা শুনে মন্তব্য করেছেন, ‘‘গোটা বিশ্বে এখন যা অবস্থা তাতে কী ভাবে প্রস্তুতি চালিয়ে যাওয়া সম্ভব? এটা চূড়ান্ত অবাস্তব একটা উপদেশ।’’

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সরকারি মতে, জাপানে ৮৮২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। জাপানের অলিম্পিক কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ফুটবল সংস্থার প্রেসিডেন্ট কোজো তাশিমার পরীক্ষার ফল ইতিবাচক এসেছে। নেদারল্যান্ডসে উয়েফার সভা সেরে ফিরছিলেন তিনি। আমেরিকা হয়ে আসে তাঁদের উড়ান। আমেরিকার মহিলা পোল ভল্টার স্যান্ডি মরিস আবার বলেছেন, ‘‘আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, বারো মাসের জন্য অলিম্পিক্স পিছিয়ে দেওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত হবে। তবে এটাও বুঝতে হবে যে, অলিম্পিক কমিটি বা জাপানের কর্তারা সময় নিচ্ছেন। নিশ্চয়ই ওঁরা সকলের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই সিদ্ধান্ত নেবেন।’’ জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রী তারা আসো সংসদে বলেছেন, ‘‘আমরা সকলে চাই এমন একটা পরিবেশে অলিম্পিক্স হোক, যাতে সকলে নিরাপদ এবং সুস্থ বোধ করে। কিন্তু সেটা শুধু জাপানের হাতে নেই।’’

বিশ্ব জুড়ে খেলার মাঠে স্তব্ধতার মধ্যে সব নজর এখন আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির দিকে। অলিম্পিক্সের ৪৩ শতাংশ যোগ্যতা অর্জন ফয়সালা এখনও বাকি। এই পরিস্থিতিতে সেগুলিই বা কী ভাবে করে ওঠা সম্ভব হবে?

অন্য বিষয়গুলি:

2020 Tokyo Olympics Coronavirus IOC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy