নেমার, মেসি দু’জনেই বোতলবন্দি ছিলেন গোটা ম্যাচে। ছবি টুইটার
রবিবার বরাবরই বাঙালির কাছে ঘুম থেকে দেরি করে ওঠার দিন। গোটা সপ্তাহের ক্লান্তি মেটানোর এই একটাই সুযোগ। কিন্তু এই রবিবারটা ছিল বাকিগুলির থেকে আলাদা। বাঙালিকে উঠে পড়তে হয়েছিল সূর্যের আলো ফোটার আগেই। উপলক্ষ্য একটাই, কোপা আমেরিকার ফাইনাল দেখা, যেখানে মুখোমুখি দুই যুযুধান ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা।
দিনের শেষে নীল-সাদা জার্সির সমর্থকরা বাঁধভাঙা আবেগে ভাসলেন ঠিকই। কিন্তু যাঁরা ভাল ফুটবল দেখতে টিভি খুলে বসেছিলেন, তাঁদের হতাশ হতে হয়েছে। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নয়, এক সময় মনে হচ্ছিল দুটো ছোট দলের খেলা হচ্ছে।
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা মানেই আপামর ফুটবলপ্রেমীর কিছু প্রত্যাশা থাকে। পাসের বন্যা, শৈল্পিক ফুটবল, স্কিলের ঝলক, ডিফেন্সচেরা পাস। রবিবারের ম্যাচে সে সবের কোনও চিহ্নই দেখা গেল না। বেশিরভাগ সময়ে খেলা হল গগনে-গগনে। রদ্রিগো দে পলের গোলের পাস ছাড়া সুন্দর পাস সে ভাবে দেখাই যায়নি।
তবে সব থেকে বেশি চোখে পড়ল অকারণ ফাউল এবং মারপিট। তিন মিনিটেই হলুদ কার্ড দেখলেন ফ্রেড। সেই শুরু। পরিসংখ্যান বলছে, গোটা ম্যাচে ৯ জন হলুদ কার্ড দেখেছেন। অবিরাম ফাউলের জেরে বার বার রুদ্ধ হয়েছে খেলার গতি। লিয়ো মেসিকে বোতলবন্দি করে রেখেছিল ব্রাজিল ডিফেন্স। তিনি যত বারই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন, তত বারই গায়ের জোরে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
একই কথা প্রযোজ্য নেমারের ক্ষেত্রেও। প্রথমার্ধে নিস্তেজ থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে তিনি অনেক বেশি সচল ছিলেন। কিন্তু তাঁকে কড়া মার্ক করে রেখেছিলেন রদ্রিগো দে পল। দৈহিক শক্তিকে ক্রমাগত আটকাতে চেয়েছেন ব্রাজিলের অন্যতম সেরা ফুটবলারকে। বার বার ফাউলও দিয়েছেন রেফারি। আগের ম্যাচে দেখা গিয়েছিল মেসির পায়ে রক্ত জমে রয়েছে। রবিবার একই জিনিস দেখা গেল আর্জেন্টিনার মন্তিয়েলের ক্ষেত্রেও। তাঁর ডান পায়ে রক্তপাতের চিহ্ন পরিষ্কার ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। চোরাগোপ্তা মার এ ভাবেই গোটা খেলায় দেখা গিয়েছে।
ব্রাজিল হোক বা আর্জেন্টিনা, দু’দেশেরই বেশিরভাগ ফুটবলার খেলেন ইউরোপে। ক্লাবের হয়ে নিজেদের নিংড়ে দিতে দেখা যায় তাঁদের। কিন্তু রবিবারের খেলায় তার ছিটেফোঁটাও দেখা গেল না। প্রথমার্ধের খেলা দেখে অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না এটা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ম্যাচ হচ্ছে। নেটমাধ্যমের দেওয়ালে ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। মনে হচ্ছিল ইউরোপে খেলা একঝাঁক ফুটবলারের উপর জোর করে লাতিন আমেরিকার কৌশল চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফল যা হওয়ার ছিল তাই হয়েছে। নিম্নগামী হয়েছে খেলার মান।
শুধু ফুটবলের মান কেন, প্রশ্ন উঠেছে রেফারিংয়ের মান নিয়েও। ম্যাচে একাধিক বার বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। লাইন্সম্যানের সঙ্গে বোঝাপড়ার অভাব দেখা গিয়েছে। একই ঘটনায় লাইন্সম্যান যেখানে থ্রো দিয়েছেন, সেখানে পিছন থেকে রেফারি ছুটে এসে ফাউল দিয়েছেন, যা দেখে অবাক ফুটবলপ্রেমীরা।
পার্থক্যটা আরও বেশি করে চোখে পড়েছে কারণ, একই সময়ে বিশ্বের আর এক প্রান্তে রমরমিয়ে চলছে ইউরো কাপ। সেখানে ছোটখাটো দলের খেলাও নজর কেড়েছে। ডেনমার্ক উঠেছিল সেমিফাইনালে। চেক প্রজাতন্ত্র, উত্তর ম্যাসিডোনিয়া বা ইউক্রেনের খেলার প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছেন তাবড় ফুটবল বিশেষজ্ঞরাও। কোপা আমেরিকা সেখানে উপহার দিয়েছে একরাশ হতাশা।
গত কয়েক বছর ধরে লাতিন আমেরিকার ফুটবল এমনিতেই পড়তির দিকে। খেলার মান যেমন পড়ছে, তেমনই ভাল মানের ফুটবলার উঠে আসার সংখ্যাও কমছে। গত বারের ফুটবল বিশ্বকাপই তার প্রমাণ। প্রথম বার বিশ্বকাপ খেলতে নামা অখ্যাত আইসল্যান্ডের কাছে আটকে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। গ্রুপের ম্যাচে ৩৫ লক্ষের দেশ ক্রোয়েশিয়ার কাছে তিন গোল খেয়েছিল। শেষ চারে লাতিন আমেরিকার কোনও দলই পৌঁছতে পারেনি। ইউরোপীয় দেশগুলি সেখানে প্রতিনিয়ত উন্নতি করছে।
সম্প্রচার, ম্যাচের সময়, খেলার মান — ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে এমনিতেই ইউরো কাপের কাছে দশ গোল খাবে কোপা আমেরিকা। কিন্তু সমর্থকরা ভেবেছিলেন অন্তত এরকম একটা হাইভোল্টেজ ম্যাচে উন্নতমানের ফুটবল দেখা যাবে। এক মাসের ফুটবল-যজ্ঞ শেষে হতাশ হতে হল তাঁদের।
কয়েক ঘণ্টা পরে ইউরো কাপের ফাইনাল খেলতে নামবে ইংল্যান্ড এবং ইটালি। ফুটবলপ্রেমীদের আশা, দিনের শেষটা অন্তত হবে ভাল ভাবেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy