অ্যানিমেশন, গ্রাফিকের সঙ্গে ইতিহাস, আবেগ। একত্রিত হলে হয়তো এমন মন ভাল করে দেওয়া লেজার শো তৈরি করা যায়। ৩ মিনিট ১০ সেকেন্ডের ভিডিয়োর পরতে পরতে প্রয়াত দিয়েগো মারাদোনার প্রতি আবেগ, ভালবাসা ও শ্রদ্ধা ঝরে পড়ল। দক্ষিণ আমেরিকা ফুটবল কনফেডারেশনের উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছিল এই ভিডিয়ো। সেটা আর্জেন্টিনা বনাম চিলে ম্যাচের আগে দেখানো হয়।
৩ মিনিট ১০ সেকেন্ডের ভিডিয়োতে ‘ফুটবলের রাজপুত্র’র জীবনের মূল্যবান দিকগুলো তুলে ধরা হল। শোনা যায় মারাদোনা যেখানেই থাকতেন তাঁর সঙ্গে থাকত অপাসের সেই বিখ্যাত ‘লিভ ইজ লাইফ’ গান। এই গানটা শুনলেই নাকি শিশুদের মতো আনন্দে মেতে উঠতেন তিনি। ভিডিয়োর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চলল এই গান। ১৯৮৯ সালে উয়েফা কাপের সেমি ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের বিরুদ্ধে নাপোলির হয়ে নামার সময় এই গানটাই গেয়েছিলেন মারাদোনা।
গত বছর ২৫ নভেম্বর মারাদোনা মারা যাওয়ার পর তাঁকে ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ’ আখ্যা দিয়েছিল দক্ষিণ আমেরিকা ফুটবল কনফেডারেশন। ‘ফুটবল সম্রাট’ পেলের জন্য এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি ব্রাজিল। তবে সেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর দেশে দেখানো হল এই ভিডিয়ো। সেখানে দেখা যাচ্ছে অনেক বিষয়ে মনোমালিন্য থাকলেও মারাদোনাকে দেখা মাত্র তাঁকে জড়িয়ে ধরছেন পেলে।
¡GRACIAS, DIEGO! 🙏
— Copa América (@CopaAmerica) June 14, 2021
Emotivo homenaje al astro Diego Armando Maradonaen la CONMEBOL #CopaAmérica 🏆
¡Eterno 🔟!#VibraElContinente pic.twitter.com/vHKGeXugKm
প্রিয় মারাদোনার প্রতি আবেগ দেখানোর পালা অবশ্য এখানেই শেষ নয়। ছোট্ট, রোগা, ঝাঁকড়া চুলের দিয়েগো বলছেন তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হল দেশের হয়ে বিশ্বকাপ খেলা। ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপ জেতার পর মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট হাত থেকে ট্রফি নেওয়া থেকে শুরু করে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ছয় জনকে কাটিয়ে সেই বিখ্যাত গোল। সবকিছুই ফুটে উঠল। সেটা মাঠে নামার আগে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করলেন লিওনেল মেসি, অ্যাঞ্জেল দি মারিয়া, সের্জিও আগুয়েরোরা। তবে ‘হ্যান্ড অব গড’ এই ভিডিয়োতে জায়গা পায়নি।
আর্জেন্টিনা জুনিয়র দল থেকে শুরু হয়েছিল ওঁর ফুটবল জীবন। নিউওয়েল ওল্ড বয়েজ, বোকা জুনিয়র্স, বার্সেলোনা, নাপোলি, সেভিল্লার মতো ক্লাবের পাশাপাশি দেশের সিনিয়র দল, সব জায়গাতেই ছিল তাঁর সমান আধিপত্য। খুব কম সময়ের মধ্যে চোখের নিমেশে অ্যানিমেশন ও গ্রাফিকের মিশেলে বদলে ফেলা হচ্ছিল ‘ফুটবল দেবতা’র জার্সিগুলো। সঙ্গে ছিল ওঁর সেই মন্ত্রমুগ্ধ করা বাঁ পা দিয়ে বল নাচানো।
আর ভিডিয়োর প্রায় শেষ দিকে ফুটে উঠল মারাদোনার সেই অমর উক্তি। ২০০১ সালে বোকা জুনিয়র্স থেকে বিদায় নেওয়ার সময় আবেগ মেশানো গলায় তিনি বলেছিলেন, “এই পার্টি শেষ না হলেই তো ভাল হতো! তোমরা কিন্তু আমাকে এ ভাবেই আজীবন ভালবেসে যেও।”

১৯৮৬ বিশ্বকাপ জেতার সেই মুহূর্ত। ফাইল চিত্র।
তবে ভিডিয়োর শেষটা অন্য মাত্রা পেয়েছে। লেজার শো-র মাধ্যমে রিও-র নিল্টন স্যান্টোস স্টেডিয়ামের মাঠে ফুটে উঠল মারাদোনার মুখ। সেখানে লেখা, ‘জন্ম ১৯৬০ সাল। মৃত্যুর জায়গায় একটা ফুটবলের ছবি।’
সত্যিই তো। মারাদোনার শরীরের শুধু মৃত্যু হয়েছে। স্মৃতিতে আজও তিনি অমর। আজীবন অমর থাকবেন।