Advertisement
E-Paper

WB District Sports Federation: নিজের সংস্থার বিরুদ্ধেই আদালতে তনুময়, জেলায় জেলায় ক্ষোভ, মুখ খুললেন প্রশাসক নিজেই

এজিএমকে আটকাতে স্থগিতাদেশ আদায় করেছেন তনুময়। এই পদক্ষেপের পরে বেশ কিছু জেলার ক্রীড়া প্রশাসনের কর্তাদের অভিযোগ, অনৈতিক কাজ করেছেন তিনি।

বিতর্কে তনুময়

বিতর্কে তনুময় ছবি: ফেসবুক।

দেবার্ক ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২২ ১৬:১৫
Share
Save

পশ্চিমবঙ্গ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি তনুময় বসুকে ঘিরে বিতর্ক ক্রমেই বাড়ছে। সংস্থার বিরুদ্ধেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। সংস্থার এজিএম আটকাতে স্থগিতাদেশ আদায় করেছেন। তাঁর এই পদক্ষেপের পরে বেশ কিছু জেলার ক্রীড়া প্রশাসনের কর্তাদের অভিযোগ, অনৈতিক কাজ করেছেন তনুময়। পদের লোভে এই কাজ করেছেন তিনি। তাই তাঁর বিরুদ্ধে গিয়েছে ১৫টি জেলা। এই অভিযোগকে উড়িয়ে গিয়েছেন তনুময়। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, কয়েক জন ক্রীড়া প্রশাসকের বিরুদ্ধে। তাঁর দাবি, বাধ্য হয়ে আদালতে গিয়েছেন তিনি। তাঁর পাশে রয়েছে প্রায় সমস্ত জেলা। ঠিক সময়ে সবাইকে জবাব দেবেন তিনি।

ঘটনাটা ঠিক কী হয়েছিল?

গত চার বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি তনুময়। সেই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাই নতুন কমিটি গঠন প্রয়োজন। কিন্তু কোভিডের কারণে সেই বৈঠক করা যায়নি। জেলার ক্রীড়াসংস্থার কর্তাদের একাংশের দাবি, নতুন কমিটি তৈরি করার জন্য তনুময় চেয়েছিলেন দিঘায় এজিএম করতে। কিন্তু কোভিডের কারণে জেলাকর্তাদের অধিকাংশ সেখানে যেতে চাননি। পরে কলকাতার নিউটাউনের একটি হোটেলে বৈঠকের কথা বলেন তনুময়। সেখানেও রাজি হননি তাঁরা। জেলার বেশির ভাগ কর্তার দাবি ছিল, মালদহে বৈঠক হোক।

প্রথমে ঠিক হয়েছিল ৮ মার্চ হবে এজিএম। কিন্তু তনুময় জানান, ১০ মার্চ তাঁর মেয়ের বিয়ে। তাই তার পরেই করা হোক বৈঠক। তনুময়ের অভিযোগ, তাঁর অনুরোধ মেনে প্রথমে ৮ তারিখের বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু পরে হঠাৎ ৪ মার্চ বৈঠক ডাকা হয়। তাঁকে কিছু জানানো হয়নি। কী ভাবে তাঁকে না জানিয়ে বৈঠক এগিয়ে আসতে পারে, সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর তিনি পাননি বলে দাবি করেছেন তনুময়। তার পরেই আদালতের দ্বারস্থ হন। চুঁচুড়া সিটি সিভিল কোর্ট ১৫ মার্চ পর্যন্ত এজিএম-এ স্থগিতাদেশ দিয়েছে।

জেলার অধিকাংশ কর্তার অভিযোগ, ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে আদালতে গিয়েছেন তনুময়। তার ফলে ফেডারেশনের কাজ বন্ধ রয়েছে। তাতে আখেরে খেলার ক্ষতি হচ্ছে। কর্তাদের আরও অভিযোগ, তনুময় নাকি সচিব হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাতে জেলাগুলি রাজি নয়। তার ফলেই আদালতে গিয়েছেন তনুময়।

পশ্চিমবঙ্গ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব দেবব্রত সাহা আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘বিষয়টি বিচারাধীন। তনুময় ব্যক্তি স্বার্থে এই কাজ করেছেন। এতে জেলার খেলা পিছিয়ে যাবে। খেলা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফেডারেশনের প্রাক্তন সচিব সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় সিএবি অ্যাপেক্স কাউন্সিলে যাওয়ার আগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে পদত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু তনুময় সে কথা কাউকে জানাননি। পরে জোর করাতে ৬ মাস পরে উনি সেটা বলেন। ফেডারেশনের কাজ সচিব চালান। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ব্যাঙ্কে সই করার অধিকার সুশান্তের।’’

দেবব্রতর আরও অভিযোগ, ‘‘অনেক দিন ধরে কমিটি নেই। তনুময় সব মৌখিক ভাবে বলেন। মেয়ের বিয়ের জন্য উনি দিন বদল করতে বলেছেন। সেটা করা হয়েছে। তার মানে বৈঠক ডাকার পদ্ধতি ঠিক ছিল। বৈঠক ডাকার অধিকার সচিবের রয়েছে। উনি সচিব হতে চাইছেন। সেটা জেলাগুলি চাইছে না। আমরা ওঁকে চেয়ারম্যান করতে চেয়েছিলাম। উনি সেটা চাইলেন না। ব্যক্তি স্বার্থে উনি এটা করলেন।’’

পশ্চিমবঙ্গ জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রাক্তন সচিব গৌতম গোস্বামী বললেন, ‘‘আমি যে দিন অ্যাপেক্স কাউন্সিলের সদস্য হয়েছি সব পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। কিন্তু তনুময় সব কিছু নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখছেন। ওঁকে সবাইকে নিয়ে চলতে বলেছিলাম। সভাপতির উচিত সবাইকে নিয়ে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা। সভাপতি হয়ে আদালতে যাওয়া ঠিক হয়নি। যখন কোনও সমাধান নেই তখনই কেউ আদালতে যান। এ ভাবে নিজের ভাবমূর্তি নষ্ট করলেন তনুময়। কারণ সংস্থার থেকে ব্যক্তি বড় নয়। এতে আগামী দিনে অন্য জেলাগুলিও এই পথে যেতে পারে। সেটা ঠিক নয়।’’

ক্রীড়া সংস্থার কোষাধ্যক্ষ বিপ্লব চক্রবর্তী বললেন, ‘‘এক জন ভারতীয় ফুটবলার, যিনি আইএফএ-র সহ-সভাপতি, তাঁর কাছে এটা আশা করিনি। আমরা ভেবেছিলাম নির্দিষ্ট পদ্ধতিতেই উনি পদত্যাগ করবেন। সেটা উনি করলেন না।’’ শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সচিব কুন্তল গোস্বামীর মতে, ‘‘যেটা ঘটল সেটা খুব দুঃখজনক। তনুময়ের আদালতে যাওয়াকে সমর্থন করি না।’’একই কথা জলপাইগুড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব সব্যসাচী দত্তের। তাঁর মতে, ‘‘আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়া যেত। সভাপতি নিজেই সংস্থার বিরুদ্ধে আদালতে গেলেন। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’’ আদালতে না গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা নিটিয়ে নিলে ভাল হত বলে মনে করেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব অমিতাভ ঘোষ।

উত্তর দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব আবার চিন্তা করছেন জেলাস্তরের ফুটবলারদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। তিনি বললেন, ‘‘তনুময়দা সভাপতি হয়ে যদি সচিবের বিরুদ্ধে মামলা করেন সেটা সুখকর নয়। আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়া যেত। এজিএম পিছিয়ে গেল। ফলে খেলার ক্ষতি হল। ফেডারেশনের কার্যকারিতা হারিয়ে যাচ্ছে। আন্তঃরাজ্য ফুটবল প্রতিযোগিতার ভবিষ্যৎ অথৈ জলে। ফলে জেলার ফুটবলারদের সমস্যা হল। তারা একটা শংসাপত্রের জন্য অপেক্ষা করে থাকে। সেটা তারা পাচ্ছে না।’’ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সহ-সচিব সুতীর্থ সাউ বললেন, ‘‘মতান্তর থাকতেই পারে। তবে তার ফলে আদালতে যাওয়া ঠিক নয়। তনুময়ের কাছে খেলোয়াড় সুলভ আচরণ আশা করেছিলাম।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সচিব মদন মোহন মারিকের মতে, ‘‘নিজের সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত নয় সভাপতির। তিনি জেলাগুলিকে বলতেই পারতেন। কথা বলে মিটিয়ে নেওয়া যেত।’’

যাঁকে নিয়ে এত অভিযোগ সেই তনুময় কী বলছেন? আনন্দবাজার অনলাইনকে প্রাক্তন ফুটবলার বললেন, ‘‘স্থির হয়েছিল সভাপতির মেয়ের বিয়ের জন্য বৈঠক স্থগিত করা হল। কিন্তু তার পরে আমার সঙ্গে আলোচনা না করেই বৈঠক ডাকা হল। কোনও জেলা জানত না। সব জেলার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারাও বলেছে এটা অন্যায় হয়েছে। তাই আমি বাধ্য হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। আমারও অনেক কিছু বলার রয়েছে। এখন সচিব অন্তর্বর্তীকালীন। পরের কমিটি না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে সচিব করা হয়েছে। তাই তাঁর বৈঠক ডাকার কোনও অধিকার নেই।’’

তিনি সচিব হতে চাইছেন বলে যে অভিযোগ উঠছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলেই জানিয়েছেন তনুময়। তিনি বললেন, ‘‘সভাপতি থেকে কেউ সচিব হতে চায়? ওরা প্রথমে ঠিক করেছিল একটা চেয়ারম্যান পদ তৈরি করা হবে। তার পর কোনও উচ্চবাচ্য হয়নি। আদালতের সিদ্ধান্তের পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ করব।’’

Tanumoy Basu WB District Sports Federation Court

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}