ক্ষিপ্ত: দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় বিরক্ত ভূপতি। ফাইল চিত্র
মহেশ ভূপতি বনাম সর্বভারতীয় টেনিস ফেডারেশনের লড়াই আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বুধবার। ভূপতি বলে দিয়েছেন, তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হলে কিছু বলার নেই। কিন্তু যে ভাবে টেনিস কর্তারা বলে বেড়াচ্ছেন যে, তিনি জাতীয় দলের দায়িত্ব পালন করতে চাননি, সেটা মেনে নেওয়া যায় না।
ভারতীয় টেনিসের ইতিহাসে সফলতমদের এক জন ভূপতি পাকিস্তানে ডেভিস কাপ ম্যাচে যেতে অস্বীকার করেছিলেন নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে। তাঁর সেই সিদ্ধান্ত সর্বভারতীয় টেনিস ফেডারেশন (এআইটিএ) খুব ভাল ভাবে নেয়নি কারণ কর্তারা পাক সফরে যাবেন না বলে কোনও অবস্থান নেননি। ভূপতি যেতে না চাওয়ায় তাঁর জায়গায় প্রাক্তন ডেভিস কাপার রোহিত রাজপালকে নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন বেছে নেয় এআইটিএ।
এর পরই নাটক অন্য দিকে মোড় নেয়, কারণ আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশন (আইটিএফ) ডেভিস কাপ টাই পাকিস্তান থেকে সরিয়ে নেয়। তারা বলে দেয়, যথেষ্ট নিরাপত্তার অভাব রয়েছে বলে ইসলামাবাদে ম্যাচ করা যাবে না। এ বার প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে পাকিস্তানে যখন ম্যাচ হচ্ছেই না, তা হলে নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন হিসেবে কে যাবেন? ভূপতি এ দিন বলেছেন, ‘‘আমি ১২টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছি। ২৫ বছর ধরে দেশের হয়ে খেলেছি। নিশ্চয়ই বসে বসে শুনব না যে, কেউ বলে দেবে আমি জাতীয় দলের দায়িত্ব পালন করতে চাইনি।’’ ক্ষুব্ধ তিনি যোগ করছেন, ‘‘আমাকে সরিয়ে দেওয়া হলে অসুবিধা নেই। ওরা (কর্তারা) বলতেই পারে, নতুন নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন আনার সময় হয়েছে। কিন্তু কেউ এই কথাটা বলতে পারে না যে, আমি জাতীয় দলের দায়িত্ব পালন করতে অস্বীকার করেছি।’’
পাকিস্তানে না যাওয়ার সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিয়ে ভূপতি আরও বলেন, ‘‘আমার সত্যিই মনে হয়েছিল, এই মুহূর্তে পাকিস্তানে যাওয়া নিরাপদ হবে না। আমার আশঙ্কা যে একেবারে অমূলক ছিল না, আইটিএফের (আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশন) সিদ্ধান্তেই তা পরিষ্কার। এখন যদি ওরা আমাকে বা খেলোয়াড়দের এর জন্য শাস্তি দিতে চায়, দিক। কিন্তু এ সব পরিকল্পনা কোনও কাজে আসবে না।’’ ২০১৭-তে নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব নেওয়া মহেশ অভিযোগ করেছেন, এআইটিএ কর্তাদের এটুকু সৌজন্যবোধও নেই যে, তাঁকে জানাবে আর ক্যাপ্টেন হিসেবে তোমাকে রাখা হচ্ছে না। ‘‘আমাকে কিছু একটা তো জানাবে এআইটিএ যে, আমি আর ক্যাপ্টেন নই। আমাকে শুধু জানানো হয়েছিল, রোহিত ইসলামাবাদ যেতে তৈরি, আমি নই, তাই এই টাইয়ের জন্য ওকে নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন বাছা হয়েছে। এবং, সেটাও ডেভিস কাপের জন্য নিরপেক্ষ কেন্দ্র বেছে নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে।’’ এআইটিএ সাধারণ সচিব কলকাতার হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায়কে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, ভূপতির সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। ‘‘৪ নভেম্বরের সন্ধ্যায় আমি নিজে ফোন করে মহেশকে জানাই, আমরা নতুন ক্যাপ্টেন বেছে নিয়েছি,’’ বলেন তিনি।
মহেশ এর পরেও তাঁর দাবিতে অনড়। তিনি পাল্টা বলছেন, তাঁকে ফোন করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কখনওই বলা হয়নি তাঁকে নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেনের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে শুধু এটুকুই বলা হয়েছিল যে, রোহিত রাজপাল এই টাইয়ের জন্য তাঁর জায়গায় ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালন করবে। ‘‘আমি একেবারে তৃণমূল স্তরে এই খেলাটার সঙ্গে যুক্ত থেকেছি। কারমান কৌর, সুমিত নাগালদের অগ্রগতির জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছি। যদি ছেলেরা আমাকে না চায়, সরে যেতেই পারি। কিন্তু কেউ যেন না বলে, আমি জাতীয় দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করিনি। সেটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।’’ ভূপতির আরও তোপ, ‘‘ফেব্রুয়ারিতে ইটালির কাছে হারার পরেই আমাকে বাতিল করার ভাল সুযোগ ছিল। তখনই আমাকে বলে দিতে পারত, টিমকে ওয়ার্ল্ড গ্রুপে নিয়ে যেতে পারিনি। তাই আমাকে আর রাখা হবে না। আইটিএফ বৈঠকের ঠিক আগে আমাকে বরখাস্ত করা হল কেন?’’ যখন বলা হয়, তাঁর মেয়াদ ২০১৮-র ডিসেম্বরেই শেষ হয়ে গিয়েছে এবং ইটালি ম্যাচ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল, ভূপতির সওয়াল, ‘‘যদি তাই হবে, তা হলে পাকিস্তান ম্যাচের নির্বাচনী সভায় আমাকে ডাকা হল কেন? আমাকে পাকিস্তান ম্যাচের জন্য প্রথমে নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন বাছাই বা হল কেন? আমিই এআইটিএ-কে বলেছিলাম, এমনি উড়ানে না গিয়ে জেটে করে পাকিস্তান যাক টিম। এখন ওদের পক্ষে বলে দেওয়া খুব সহজ যে, আমার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে।’’ তার পরেই তাঁর ঘোষণা, ‘‘আমাকে বরখাস্ত করতেই পারে। তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যাচ্ছি না। কিন্তু এই কাদার মধ্যে আমার নাম জড়াবেন না। আমি এক বারও বলিনি, পাকিস্তানে যাব না। আমি বলেছিলাম, কেউ পাকিস্তান যাওয়া নিয়ে স্বস্তিতে নেই।’’
আরও খোলাখুলি ভাবে ভূপতি বলেছেন, এআইটিএ তাঁকে সরিয়ে দিচ্ছে কারণ তাঁদের মনে হয়েছে, খেলোয়াড়দের তিনি পাকিস্তানে না যাওয়ার ব্যাপারে উস্কেছেন। ‘‘গত ২৫ বছর ধরে এআইটিএ সব সময় ছড়ি ঘোরাতে চেয়েছে। ওরা ভাবছে, আমি খেলোয়াড়দের এককাট্টা করেছি। তাই মাথাটাকেই আগে কেটে দাও।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy