অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সোনা জিতে চমক কডি সিম্পসনের। ছবি: টুইটার।
কমনওয়েলথ গেমসে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সাঁতারের ৪x১০০ মিটার রিলেতে সোনা জিতেছেন কডি সিম্পসন। ১০০ মিটার বাটারফ্লাই ফাইনালে হয়েছেন পঞ্চম। মাত্র তিন বছর আগে প্রতিযোগিতামূলক সাঁতার শুরু করা সিম্পসনের জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে রং।
সিম্পসনের বান্ধবীও অস্ট্রেলিয়ার প্রথম সারির সাঁতারু। এমা ম্যাককিয়নের অলিম্পিক্সের ১১টি পদক রয়েছে। এই পরিচয়ের বাইরে আরও একটি পরিচয় রয়েছে সিম্পসনের। তিনি আসলে এক জন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী। ছোট বয়সে সাঁতারে তেমন আগ্রহই ছিল না। সিম্পসন চেয়েছিলেন গায়ক হিসাবে বিশ্বজয় করতে। কিশোর বয়স থেকেই গায়ক হিসাবে পরিচিতি অর্জন করেছিলেন। গানের সুবাদেই সিম্পসনের সঙ্গে পরিচয় হয় আমেরিকার বিখ্যাত পপ গায়িকা মাইলি সাইরাসের। শুধু পরিচয় নয় তাঁদের মধ্যে ছিল প্রণয়ের সম্পর্কও। উইকিপিডিয়াতেও তাঁর পরিচয় সঙ্গীতশিল্পী হিসাবেই।
মাত্র সাত বছর বয়সে একটি গান লেখেন সিম্পসন। নিজেই সুর দেন। গানের ভিডিয়ো পোস্ট করেন নেটমাধ্যমে। তাঁর গাওয়া সেই গানই চোখে পড়ে আমেরিকার এক প্রযোজকের। তখন অবশ্য সিম্পসনের বয়স ১২। তাঁকে আমেরিকায় গিয়ে গান রেকর্ডিং করার প্রস্তাব দেন ওই প্রযোজক। সুযোগ হারাতে চাননি সিম্পসন। বাবা-মা এবং ভাইয়ের সঙ্গে চলে যান লস অ্যাঞ্জেলেস। তাঁর অবাক হওয়ার বাকি ছিল তখনও। গান রেকর্ড করেন আমেরিকার বিখ্যাত র্যাপার ফ্লো রিডার সঙ্গে। অস্ট্রেলীয় খুদের জগতে তখন শুধুই গান। ১২ বছরের সিম্পসনের গানে মুগ্ধ হয়ে আমেরিকার ওই প্রযোজক তাঁর সঙ্গে চুক্তি করেন।
গানকে সঙ্গী করেই বেড়ে উঠছিলেন সিম্পসন। ঠিক এক দশক আগে সিম্পসন জীবনে প্রথম বার হার্মিংহামে আসেন। একটি জিমন্যাস্টিক প্রতিযোগিতায় গান গাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। একই অনুষ্ঠানে গান গাইতে আসেন কানাডার বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী জাস্টিন বিবার। ২০১২ সালের ওই অনুষ্ঠানে বিবার মঞ্চ ভাগ করে নেন সিম্পসনের সঙ্গে। তার আগে থেকেই অবশ্য গানকে পেশা হিসাবে বেছে নেন সিম্পসন। সিম্পসন বলেছেন, ‘‘গানের জন্য বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘুরেছি। বেশ কিছু ভাল কাজও করেছি। ব্রডওয়ের অন্যতম সদস্য হিসাবে ১০টা জনপ্রিয় অ্যালবামে কাজ করেছি। আমার বেশ কিছু কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। কাজ করেছি রাষ্ট্রসঙ্ঘের সঙ্গেও।’’
সঙ্গীত জগতে তাঁর অনায়াস বিচরণ ক্রমে বাড়াচ্ছিল পরিচিতি। সাঁতারে চলে আসা হঠাৎ করেই। সে কথা মাত্র বছর তিনেক আগের। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় এক সাঁতারের প্রতিযোগিতায় নাম দেন নেহাতই শখে। মঞ্চে পারফরম্যান্স করার জন্য ফিটনেস বজায় রাখতে হত। সে কারণেই তাঁর সাঁতার শেখা। সিম্পসন অবশ্য জানতেন না ক্যালিফোর্নিয়ার ওই প্রতিযোগিতাই ঘুরিয়ে দেবে তাঁর জীবনের মোড়। বাটারফ্লাইয়ে তাঁর দক্ষতা ছিল ভালই। নিজের সাঁতারের উপর আস্থা রেখেই নেমেছিলেন প্রতিযোগিতায়। পদক না পেলেও তাক লাগিয়ে দেয় তাঁর পারফরম্যান্স। সিম্পসনও বোঝেন সাঁতারেও ভাল কিছু করতে পারেন চেষ্টা করলে। সেই মনে হওয়া থেকেই সাঁতারকে আপন করে নিয়েছেন। লক্ষ্য ২০২৪ অলিম্পিক্সে দেশকে পদক দেওয়া। সেই প্রস্ততির পথেই বার্মিংহামে ৪x১০০ মিটার রিলেতে সোনা জিতেছেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে। সাঁতার ছাড়াও তাঁর প্রিয় খেলা ক্রিকেট।
সিম্পসন বলেছেন, ‘‘সাঁতার নিয়ে একটা ইচ্ছা ছিল আমার। সেই জন্যই সাহস করে ২০২০ সালে জলে ঝাঁপিয়ে পড়েছি।’’ এখনও পর্যন্ত নিজের পারফরম্যান্সে খুশি ২৫ বছরের সাঁতারু। প্যারিস অলিম্পিক্সের পদকের লক্ষ্যে প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে চান। তাই বলে গানকে জীবন থেকে সরিয়ে দেননি। আরও সাঁতরাতে চান সঙ্গীতের সমুদ্রেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy