প্রতীকী ছবি।
শেষ হল বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমস। পদক তালিকায় চতুর্থ স্থানে শেষ করল ভারত। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড এবং কানাডার পর। মোট পদকের সংখ্যাতেও ভারতের স্থান চতুর্থ। ২০১৮-র গোল্ড কোস্ট গেমসে পদক তালিকায় তৃতীয় স্থানে ছিল ভারত।
ক্রীড়াবিশ্বে কৌলিন্যের বিচারে কমনওয়েলথ গেমসের স্থান অলিম্পিক্স এবং এশিয়ান গেমসের পর। আমেরিকা, চিন, রাশিয়া, জাপান, ফ্রান্স, জার্মানির মতো ক্রীড়াবিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলি কমনওয়েলথ গেমসে অংশ নেয় না। বিশ্বের প্রথম সারির অনেক ক্রীড়াবিদও অংশগ্রহণ করেন না তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ কমনওয়েলথ গেমসে। তবু চার বছর অন্তর কমনওয়েলথ গোষ্ঠীর দেশগুলিকে নিয়ে আয়োজিত এই ক্রীড়াযজ্ঞের গুরুত্ব রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, কানাডার মতো শক্তিধর কিছু দেশ এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।
বার্মিংহামে পদক সংখ্যার বিচারে অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ড বাকি সব দেশের ধরাছোঁয়ার বাইরে। ৬৭টি সোনা, ৫৭টি রুপো এবং ৫৪টি ব্রোঞ্জ–সহ মোট ১৭৮টি পদক জিতে তালিকার শীর্ষে অস্ট্রেলিয়া। ৫৭টি সোনা, ৬৬টি রুপো, ৫৩টি ব্রোঞ্জ-সহ মোট ১৭৬টি পদক নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ইংল্যান্ড। তালিকায় তৃতীয় স্থানে শেষ করা কানাডার সংগ্রহ ২৬টি সোনা, ৩২টি রুপো, ৩৪টি ব্রোঞ্জ-সহ মোট ৯২টি পদক। ভারতের স্থান পদক তালিকায় চতুর্থ। ২২টি সোনা, ১৬টি রুপো এবং ২৩ ব্রোঞ্জ-সহ মোট ৬১টি পদক জিতেছেন ভারতীয় ক্রীড়াবিদরা। তালিকার পঞ্চম স্থানে শেষ করা নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ২০টি সোনা, ১২টি রুপো এবং ১৭টি ব্রোঞ্জ-সহ মোট ৪৯টি পদক।
বার্মিংহাম গেমসে শ্যুটিং, তিরন্দাজির ইভেন্ট থাকলে পদক তালিকায় আরও উপরে শেষ করার সুযোগ থাকত ভারতের সামনে। কমনওয়েলথ দেশগুলির মধ্যে এই দুই খেলাতেই ভারত অন্যতম শক্তিশালী। বিশেষ করে শ্যুটিং। ২০১৮ সালের গোল্ড কোস্ট গেমসে শ্যুটিংয়ে ১৬টি পদক জিতেছিল ভারত। তার মধ্যে ছিল সাতটি সোনা, চারটি রুপো এবং পাঁচটি ব্রোঞ্জ। চোটের জন্য বার্মিংহামে যেতে পারেননি জ্যাভলিন থ্রোয়ার নীরজ চোপড়াও। গোল্ড কোস্ট গেমসে ভারতের মোট পদক ছিল ২৬টি সোনা, ২০টি রুপো এবং ২০টি ব্রোঞ্জ-সহ মোট ৬৬টি। সেই হিসাবে অন্য খেলাগুলি থেকে এসেছিল ৫০টি পদক। এ বার এসেছে ৬১টি পদক। তিরন্দাজি অবশ্য গোল্ড কোস্টেও ছিল না।
এ বারের ৬১টি পদকের মধ্যে লন বোল থেকে একটি করে সোনা ও রুপো, জুডোয় দু’টি রুপো ও একটি ব্রোঞ্জ, হকিতে একটি করে রুপো ও ব্রোঞ্জ পদক রয়েছে। রুপো এসেছে প্রথম বার হওয়া মহিলাদের ক্রিকেট থেকে। আগের গেমসে এই খেলাগুলিতে কোনও পদক ছিল না ভারতের। লন বোলে যে ভারত অংশ নেয়, সেটাই অনেকে জানতেন না। মহিলাদের দল সোনা জেতার পর নিয়মকানুন জানতে শুরু করেছেন অনেকেই। রাতারাতি এই খেলার সমর্থকের সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছে।
এ ছাড়া, অ্যাথলেটিক্সে ৫টি পদক বেড়েছে। এই বিভাগটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর আগে অ্যাথলেটিক্সের কোনও বিভাগেই ভারত ভাল ফল করতে পারত না। এ বার ট্রিপল জাম্পের মতো ইভেন্টে সোনা, রুপো দুটোই জিতেছে ভারত। লং জাম্পে পদক জিতেছেন মুরলী শ্রীশঙ্কর। রেস ওয়াকে দু’টি পদক এসেছে। স্টিপলচেজে ১৯৯৮ সাল থেকে প্রথম তিনটি স্থান দখল করে এসেছে কেনিয়া। এ বার ভারতের অবিনাশ সাবলে সেই একাধিপত্যে থাবা বসিয়েছেন। রুপো পেয়েছেন তিনি।
এটা মাথায় রেখেও বলা দরকার, অ্যাথলেটিক্সে জামাইকা এবং আফ্রিকার মতো দেশগুলি অংশগ্রহণ করলেও, তাঁরা দেশের সেরা ক্রীড়াবিদদের এই প্রতিযোগিতায় পাঠায় না। এখানে বরং দেখে নেওয়া হয় নতুন প্রতিযোগীদের, যাঁরা আগামী দিনে তারকা হয়ে উঠতে পারেন। আসল ক্রীড়াবিদদের রেখে দেওয়া হয় অলিম্পিক্স, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ বা ডায়মন্ড লিগগুলির জন্যে, যেগুলি গুরুত্বের বিচারে অনেক এগিয়ে। ভারত থেকে সেখানে প্রথম সারির ক্রীড়াবিদরাই এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ফলে আরও বেশি কঠিন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে গেলে নিজেদের মান অনেক বাড়াতে হবে।
প্রতি বছরই খেলার বিভিন্ন ইভেন্টে পারফরম্যান্সের উন্নতি হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন রেকর্ড। সেই নিরিখে বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসে ভারতীয়দের পারফরম্যান্সকে গোল্ড কোস্টের থেকে ভালই বলা যেতে পারে। শ্যুটিং বাদ দিয়ে অন্য খেলাগুলি থেকে আগের বারের তুলনায় ১১টি পদক বেশি এসেছে। পদক এসেছে চারটি নতুন খেলায়। কৃতিত্ব অবশ্যই ক্রীড়াবিদদের। তাঁদের প্রস্তুতি, পরিশ্রম, পদক জয়ের জেদই ক্রীড়াবিশ্বে ভারতকে কিছুটা হলেও এগিয়ে দিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy