Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Sakshi Malik

CWG 2022: সোনা জিতে শাপমুক্তি, মানসিক সমস্যায় সাক্ষী ভেবেছিলেন খেলা ছাড়ার কথাও

ফাইনালে পিছিয়ে পড়েও প্রতিপক্ষকে বোকা বানিয়ে সোনা জিতেছেন সাক্ষী। ম্যাচের পর জানালেন ঘুরে দাঁড়ানোর কথা।

সাক্ষী মালিক।

সাক্ষী মালিক। ছবি পিটিআই

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২২ ১৪:২৫
Share: Save:

গলায় তখন ঝুলছিল সোনার পদক। বার বার সেটাকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখছিলেন সাক্ষী মালিক। বার্মিংহামের কভেন্ট্রি সেন্টারে জাতীয় সঙ্গীত বেজে ওঠার সময় নিজেকে সামলে রাখতে পারলেন না। চোখ বুজে এল। কোণ দিয়ে গড়িয়ে পড়ল জল। হয়তো আশপাশে যা হচ্ছে, সেটাকে স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছিল সাক্ষীর। বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে তিনি সোনা জিতে ফেলেছেন।

গত কয়েক বছর ধরে সাক্ষীকে যাঁরা কাছ থেকে দেখেছেন, একমাত্র তাঁরাই জানেন কতটা কষ্ট লুকিয়ে রয়েছে ওই চোখের জলে। ২০১৬ সালে রিয়ো অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ জিতে গোটা দেশের নয়নের মণি হয়ে উঠেছিলেন তিনি। দিকে দিকে তখন তাঁরই চর্চা। পরের কয়েকটা বছর বাস্তব তাঁকে মাটিতে আছড়ে ফেলেছিল। হেরে যাচ্ছিলেন অখ্যাত এবং জুনিয়র কুস্তিগিরদের কাছেও। যাঁরা এক সময় তাঁকে নিয়ে নাচানাচি করেছিলেন, তাঁরাই সমালোচনায় বিদ্ধ করতে থাকেন। রাগে-দুঃখে-অভিমানে খেলাই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন সাক্ষী। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। ভাগ্যিস এসেছিলেন! না হলে বার্মিংহামের এই রাত তাঁর দেখাই হত না।

মানসিক সমস্যা আধুনিক ক্রীড়াবিদদের কাছে খুবই সাধারণ। প্রতিনিয়তই কোনও না কোনও ক্রীড়াবিদ মানসিক সমস্যার কথা তুলে ধরেন। চাপ বা প্রত্যাশা সামলাতে না পেরে অনেকেই হাল ছেড়ে দেন। সাক্ষীও প্রায় সেই দলেই নাম লিখিয়ে ফেলেছিলেন। ২০১৭-র কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়নশিপের পর আর কোনও পদক জেতেননি। যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি টোকিয়ো অলিম্পিক্সের। সেই প্রসঙ্গে সাক্ষী বলেছেন, “আত্মবিশ্বাস তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। রোজ অনুশীলন করছিলাম, কিছুতেই মনে এই বিশ্বাস আসছিল না যে জিততে পারব। কোচেরা বার বার বলছিলেন কুস্তিগিরদের মধ্যে আমি অনেক ফিট। নিজের মধ্যে সেই বিশ্বাস আসছিল না। ভাবছিলাম সময় খারাপ যাচ্ছে। তবে একটা সময় বুঝতেই পারছিলাম না কী হয়ে চলেছে চারপাশে।”

সোনা জিতলেন কাঁদলেন সাক্ষী।

সোনা জিতলেন কাঁদলেন সাক্ষী। ছবি পিটিআই

সাক্ষী শুধু এ টুকু বুঝতে পেরেছিলেন, কোথাও না কোথাও মানসিক সমস্যা হচ্ছে। তিনি সিদ্ধান্ত নেন মনোবিদের শরণাপন্ন হওয়ার। সাক্ষী বলেছেন, “মনোবিদ আমাকে বলেন নিয়মিত ডায়রি লিখতে। কোথায় সমস্যা হচ্ছে, কী অনুশীলন করা দরকার, সব লিখে রাখতাম। মনের ভিতরে যে নেতিবাচক ভাবনা চলছে সেটা নিয়েও ওঁর সঙ্গে আলোচনা করতাম। অনুশীলনে কোনও সমস্যা হত না। প্রতিযোগিতায় নামলেই মনে হত সব শেষ। এর পর মনোবিদ আমাকে নির্দিষ্ট কিছু কাজ করতে দেন। সেগুলো করে অনেকটা শান্তি পাই।” এখনও রোজ ডায়রি লেখেন সাক্ষী। প্রতিযোগিতা চলাকালীন লেখার সময় পান না।

কমনওয়েলথে এর আগে দু’টি পদক থাকলেও সোনা ছিল না। সাক্ষী বিশ্বাস করেন, তাঁর সোনা জেতার এটাই শেষ সুযোগ ছিল। সেটা কোনও ভাবেই হাতছাড়া করতে চাননি। ফাইনাল পর্যন্ত কোনও সমস্যা হয়নি। সোনা জয়ের শেষ ম্যাচে কানাডার আনা গদিনেজের বিরুদ্ধে অবশ্য শুরুতে একটু বিপদে পড়েন। প্রতিপক্ষ এগিয়ে গিয়েছিলেন ০-৪ পয়েন্টে। এক মুহূর্তের জন্যেও নিজের উপর বিশ্বাস হারাননি। পছন্দের ‘ডাবল লেগ অ্যাটাক’ দিয়েই প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করে ফেলেন। ‘ডাবল লেগ অ্যাটাক’ সাক্ষীর খুবই পছন্দের। রিয়ো অলিম্পিক্সেও এই আক্রমণে সাফল্য এসেছিল। কমনওয়েলথে সোনা এনে দিল।

ম্যাচের পর সাক্ষী বলেছেন, “সোনা জেতার জন্য নিজেকে নিংড়ে দিতে তৈরি ছিলাম। শেষ পর্যন্ত লড়তে চেয়েছিলাম। ০-৪ পিছিয়ে পড়ার পরেও চিন্তা করিনি। অলিম্পিক্সে কয়েক সেকেন্ডে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে পদক জিতেছি। তাই জানতাম এখানেও সেটা সম্ভব। আমার হাতে তিন মিনিট সময় ছিল। ১৮ বছর ধরে কুস্তি করছি। এই শট ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও করে দিতে পারব।”

কমনওয়েলথে আসা এক সময় নিশ্চিত ছিল না সাক্ষীর। লড়তে হয়েছিল ট্রায়ালে। সোনম মালিককে হারিয়ে কমনওয়েলথ গেমসের যোগ্যতা অর্জন করেন। তবে সাক্ষীর ফিরে আসার শুরুটা ফেব্রুয়ারি মাসে। জাতীয় দলের কোচ হিসাবে জিতেন্দ্র যাদব যোগ দেওয়ার পর। সাক্ষীর মনে যে সামান্য দ্বিধা ছিল, সেটা দূর করে দেন জিতেন্দ্র। তিনি বলেছেন, “সাক্ষীর মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখতে পেয়েছিলাম। পুরোটাই মানসিক। ওর টেকনিক বা খেলায় কোনও সমস্যা ছিল না। সাক্ষী ভাবছিল ও ফিট নয়। সেটাই ওর আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি এনেছিল। জাতীয় স্তরেও তাই ভাল খেলতে পারছিল না। হেরে যাচ্ছিল জুনিয়রদের কাছে। আমি এসে দেখতাম ও বেশি ওজনের প্রতিযোগীদের বিরুদ্ধে লড়ছে। আমি কম ওজনের প্রতিযোগীদের বিরুদ্ধে ওকে লড়তে বলি। এতে ওর নড়াচড়া আগের থেকে অনেক ভাল হয়। ওকে বলেছিলাম, কমনওয়েলথে যেতে না পারলে আমি জাতীয় কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দেব। সাক্ষী আস্থার দাম রেখেছে।”

শুধু জিতেন্দ্রই নয়, সাক্ষীর স্বামী সত্যবর্ত এবং শ্বশুরও ভরসা রেখেছিলেন। নিজের বাড়িতেই আখড়া রয়েছে। সেখানে নিয়মিত অনুশীলন করতেন সাক্ষী। শ্বশুর তাঁকে সাহায্য করতেন। অনুশীলনের মাঝে সত্যবর্তও আসতেন। সাক্ষীর কথায়, “ওঁদের দু’জনের প্রভাব আমার জীবনে বিরাট। আজ যেখানে দাঁড়িয়ে, সেটা ওঁদের ছাড়া সম্ভব ছিল না।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy