ইউএস ওপেন ট্রফি নিয়ে কোকো গফ। ছবি: টুইটার।
আমেরিকার টেনিসের নতুন যুগের পদধ্বনি শোনা গেল শনিবার। শোনালেন ১৯ বছরের কোকো গফ। এক বছর আগে এই ইউএস ওপেনের ফাইনালেই নতুন যুগের আভাস দিয়েছিল তাঁর টেনিস। এ বার আর আবাস নয়। নতুন যুগ বোধহয় শুরুই হয়ে গেল গফের র্যাকেটের ধারে। সেরিনা উইলিয়ামসের ২৪ বছর পর আবার আমেরিকার কোনও কিশোরী চ্যাম্পিয়ন হলেন আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে।
পিছিয়ে পড়েও ফাইনালে জয়। ম্যাচ পয়েন্ট পাওয়ার পর যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না গফ। বুঝতে পারছিলেন না, তাঁর কী করা উচিত। কোর্টে শুয়ে পড়লেন। দেখে মনে হচ্ছিল শরীরে সব শক্তি শেষ করে ফেলেছেন। কোর্টে বসে হাউ হাউ করে কাঁদলেন। সমর্থক, কোচিং স্টাফদের দিকে তাকালেন। আঙুলের মুদ্রায় ভালবাসার ইঙ্গিত করলেন। তখনও তাঁর গলায় দলা পাকিয়ে উঠছিল কান্না।
দেখে কে বলবে ১৯ বছরের গফ সদ্য ইউএস ওপেনের নতুন বিজয়ী! এক ঝলকে মনে হতেই পারে স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা! মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করেও পারছিলেন না কিছুতেই। ধাতস্থ হতে বেশ কিছুটা সময় নিলেন নতুন গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন। দর্শকাসনে উপস্থিত ছিলেন গফের মা। মেয়ের সাফল্যে গ্যালারিতে তিনি তখন লাফাচ্ছেন। নিজেকে একটু গুছিয়ে নিয়ে দু’টি ফোন করলেন গফ। প্রথমে পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বললেন। পরেরটায় বিশেষ কারও সঙ্গে।
মহিলাদের সিঙ্গলসে গফ চ্যাম্পিয়ন হবেন, এতটা আশা ছিল না। খাতায়কলমে পিছিয়েই ফাইনালে নেমেছিলেন বিশ্বের এক নম্বর এরিনা সাবালেঙ্কার বিরুদ্ধে। কিন্তু চ্যাম্পিয়নেরা আর কবে এ সবের হিসাব কষেছেন! নিজেদের দিনে তাঁরাই নতুন রসায়নের প্রশ্নপত্র তৈরি করেন। যার উত্তর দিতে হিমশিম খান প্রতিপক্ষ। শনিবারের গফও ছিলেন কিছুটা হিসাবের বাইরে। ছিলেন বললেই তো হল না। গফের মতো খেলোয়াড়েরা হিসাব লেখেন নিজেদের মতো করে। মহিলাদের সিঙ্গলসের ফাইনালে যেমন করলেন আমেরিকার ১৯ বছরের কিশোরী।
১৯ বছর বয়সে গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন নতুন কোনও ঘটনা নয়। তবু তাঁর জয়ের আলাদা গুরুত্ব আছে। ৭৫ মাস পর আমেরিকার কোনও খেলোয়াড় গ্র্যান্ড স্ল্যাম ট্রফি স্পর্শ করলেন। আন্তর্জাতিক টেনিসে আমেরিকার স্পর্ধার ইতিহাস ম্লান হওয়ার আগেই তাকে আলোকিত করলেন গফ।
আলোকিত হলেন গফ নিজেও। যে আলোর সলতে পাকানোর কাজটা শুরু করেছিলেন তাঁর বাবা। ইউএস ওপেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সব কৃতিত্ব গফ অর্পণ করলেন নিজের বাবাকে। বিশ্বের সব বাবা-মেয়ের মধ্যেই বোধহয় একটা আলাদা রসায়ন থাকে। গফ এবং তাঁর বাবার মধ্যেও তেমনই রয়েছে। মেয়ের কান্না দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি তিনিও। মেয়ের সঙ্গেই হাউ হাউ করে কেঁদেছেন। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মেয়ের চোখও প্রথম খুঁজেছে গ্যালারিতে থাকা বাবাকে। তাঁর চোখের জল আরও বিহ্বল করেছে গফকে।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর গফের মুখে প্রথমেই এসেছে বাবা কোরি গফের কথা। তাঁর হাত ধরেই গফের টেনিস শুরু। আবেগ সামলে গফ বলেছেন, ‘‘বাবাই প্রথম ব্যক্তি যাঁকে আমি প্রথম দেখেছিলাম। এই প্রথম বাবাকে কাঁদতে দেখলাম। ফরাসি ওপেন ফাইনালে হারের পর বাবা বলেছিল, ‘আমি কাঁদিনি’। আজ আমি বাবাকে কাঁদতে দেখেছি। জল দেখেছি মায়ের চোখেও। এই মুহূর্তটা কোনও দিন ভুলতে পারব না।’’ গফ কৃতিত্ব দিয়েছেন বাবাকে। তিনি বলেছেন, ‘‘এই মানুষটা আমাকে প্রথম দিন থেকে সমর্থন করেছে। সব সময় সমর্থন করেছে। অনেকে চেষ্টা করেছিলেন, বাবার সঙ্গে আমার দূরত্ব তৈরি করার। তাঁরা বলেছিলেন, বাবার নাকি গ্যালারির বক্সে থাকার দরকার নেই। আমাকে কোচিং করানোর দরকার নেই। তাঁরা আসলে বড্ড কম জানেন। সে জন্যই আজ আমি চ্যাম্পিয়ন হতে পারলাম।’’
কথা বলার সময়ও গফের গলা বুজে আসছিল। তবু তাঁর এই বক্তব্য হয়তো সেই মানুষগুলির মুখ বন্ধ করে দেবে, যাঁরা গফকে বাবার কাছ থেকে আলাদা করতে চেয়েছিলেন। সেরিনা এবং তাঁর দিদি ভিনাস উইলিয়ামসের উত্থানের পিছনে যেমন তাঁদের বাবা রিচার্ড উইলিয়ামসের অক্লান্ত অবদান রয়েছে, তেমনই গফের সাফল্যে তাঁর বাবার। পেশাদার টেনিসে পা দেওয়ার পর গফ অন্য কোচ বেছে নিলেও বাবাকে সঙ্গে থাকতেই হবে। কোরিও মেয়ের সঙ্গে সর্বত্র ঘোরেন। গফের আত্মবিশ্বাসের ভরকেন্দ্র তাঁর বাবা।
আমেরিকার মহিলা টেনিসের পতাকা থাকল সেই বাবা-মেয়ে জুটির কাছেই। শুধু উইলিয়ামস পরিবার থেকে গফ পরিবারের কাছে এল ব্যাটন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy