নজরে: ধোনির সিএসকে-তে ছিলেনই। এখন রাজ্য সংস্থাতেও শ্রীনি-কন্যা রূপা।
লোঢা কমিটির সংস্কার অনুযায়ী, ভারতীয় বোর্ডে কর্তাদের মৌরসিপাট্টা কি নামেই শেষ হতে চলেছে? এই প্রশ্ন উঠে পড়ছে কারণ অনেক রাজ্য ক্রিকেট সংস্থাতেই নিজেরা থাকতে না পেরে শীর্ষ কর্তারা তাঁদের পরিবারের লোকজনদের এনে বসাচ্ছেন।
খেলার মাঠ নয়, যে উদাহরণ রয়েছে রাজনীতির মঞ্চে। বিহারে মুখ্যমন্ত্রীত্ব খুইয়ে রাতারাতি স্ত্রী রাবড়ী দেবীকে সেই পদে বসিয়ে দিয়েছিলেন লালুপ্রসাদ যাদব। ক্রিকেটেও লোঢার ঘা পড়ার পরে বহু কর্তা বেছে নিচ্ছেন রাবড়ী-মডেল। তালিকায় সব চেয়ে চর্চিত নাম সেই এন শ্রীনিবাসন। যাঁকে দিয়ে সমস্ত ঝামেলার শুরু এবং বিচারপতি লোঢা কমিটির আগমন। তামিলনাড়ু ক্রিকেট সংস্থার ‘বস্’ নিজে মসনদ থেকে সরতে বাধ্য হচ্ছেন ঠিকই কিন্তু রাতারাতি তাঁর জায়গায় বসাচ্ছেন মেয়ে রূপা গুরুনাথকে। যাঁর স্বামী গুরুনাথ মাইয়াপ্পানের আইপিএল বেটিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট। ক্ষমতার অপব্যবহার করে জামাইকে রক্ষা করতে গিয়েই ডুবেছিলেন শ্রীনি। এমনকি, দু’বছরের জন্য সাসপেন্ড হয় চেন্নাই সুপার কিংসও।
অনেকেরই মনে হচ্ছে, রূপাকে এনে রিমোট কন্ট্রোলে ক্ষমতা নিজের হাতেই রেখে দিতে চান শ্রীনি। গত বছরই শ্রীনি তাঁর মেয়েকে চেন্নাই সুপার কিংসেরও প্রধান মুখ করে তুলেছিলেন। তাতে ফের প্রশ্ন উঠছে, এখনও কি তা হলে সিএসকে মানেই শ্রীনির ব্যবসায়িক সংস্থা এবং তামিলনাড়ু ক্রিকেট? ঠিক একই অভিযোগ উঠেছিল শ্রীনি নিজে ক্ষমতায় থাকার সময়েও। আগামী ২২ অক্টোবর বোর্ডের নির্বাচন সেরে ফেলার কথাও জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স (সিওএ)। সংস্কারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সেই নির্বাচনের সময়েও মেয়েকে বোর্ডের উচ্চ পদে আনার জন্য প্রভাব বিস্তার করতে পারেন শ্রীনি।
সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স (সিওএ) বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা শ্রীনির কার্যকলাপে মোটেও প্রসন্ন নয়। নতুন করে তারা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে। সেখানে সিওএ আবেদন করেছে, ২০ সেপ্টেম্বর আদালতের শেষ রায়কে অপব্যাখ্যা করছে তামিলনাড়ু ক্রিকেট সংস্থা। দুরভিসন্ধি নিয়ে কাজ করছে তারা, এমন কথাও তুলেছে সিওএ। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, নির্বাচনী বিধিনিষেধ প্রয়োগ হবে পদাধিকারীদের ক্ষেত্রে। অনেক রাজ্য সংস্থা এর ব্যাখ্যা করেছিল যে, ভোটদানের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি হবে না। বিশেষ করে সত্তরোর্ধ্বরা ভোট দিতে পারবেন বলেই সে দিন মনে হয়েছিল। সে রকম হলে শ্রীনি নিজে সত্তরোর্ধ্ব হয়ে গেলেও বোর্ডের নির্বাচনে ভোট দিতে আসার সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন। মনে করা হচ্ছে, শ্রীনিকে আটকানোর জন্যই সিওএ সর্বোচ্চ আদালতে পাল্টা আবেদন করেছে। সিওএ জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা শুধু পদাধিকারীদের মধ্যে সীমিত রাখলে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। কেউ যদি মনে করে, ন’বছর কাটিয়ে ফেলার পরেও কমিটিতে থাকা যাবে, সেটা ঠিক নয়। এই আবেদনের জেরে নতুন কী নির্বাচনী নাটক উপস্থিত হয়, সকলে তা দেখার অপেক্ষায়।
যদিও শ্রীনি একা নন, অনেকেই পরিবারের লোকজনদের এনে বসাচ্ছেন। ক্রিকেট খেলা ছেড়ে সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করছেন দীর্ঘকাল ধরে সেখানে রাজ চালানো নিরঞ্জন শাহের পুত্র জয়দেব শাহ। যাঁর অধীনে খেলেছেন চেতেশ্বর পুজারা, রবীন্দ্র জাডেজারা। হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট সংস্থার সিংহাসন ছেড়ে দিতে হয়েছে অনুরাগ ঠাকুরকে। পরিবর্ত? তাঁর ভাই অরুণ ঠাকুর।
ভারতীয় বোর্ডের ইতিহাসে এমনিতে বাবার পরে ছেলের ক্রিকেট প্রশাসনে আসার নজির আছে। যেমন তামিলনাড়ু ক্রিকেট সংস্থার প্রধান হওয়ার পরে বোর্ড প্রেসিডেন্টও হয়েছিলেন এ সি মুথাইয়া। যিনি এম এ চিদম্বরমের ছেলে। বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, ছাব্বিশ বছর ছিলেন বোর্ডের কোষাধ্যক্ষ। অথবা মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেট সংস্থায় মাধব রাও সিন্ধিয়ার পরে এসেছেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। কিন্তু রাতারাতি রাবড়ী-মডেল অনুসরণ করে পরিবার-রাজ প্রয়োগের উদাহরণ বিরল।
অতীতে বোর্ডে শীর্ষ পদে বসতে গেলে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হত। লোঢা নিয়মে তা আর নেই। বিচারপতি লোঢাও নিশ্চয়ই ভাবছেন, নামগুলোই শুধু সরানো গেল, পদবী-পরিবারের শাসন সেই থেকেই গেল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy