আকর্ষণ: চোখ ধাঁধানো ফুটবলেই মাতিয়ে রাখতেন চুনী। ফাইল চিত্র
চুনী গোস্বামীর সঙ্গে আমার শেষ দেখা ভেটারেন্স ক্লাবের একটা অনুষ্ঠানে। তা-ও বছর চারেক আগে। আমি এখন সেই টুপি মাথায় ডাকাবুকো গোলকিপার নই। ক্রাচ নিয়ে হাঁটতে হয়। পানিহাটির বাড়িতে বসে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনি, গুনগুন করে গান গাই। সেই গান শুনতে শুনতেই রেডিয়োতে চুনীর মত্যু সংবাদটা পেলাম। পিকের পর চুনীও চলে গেল। মনটা খারাপ লাগছিল। চুনীর চেয়ে প্রায় দশ বছরের বড় আমি।
কুড়ি বছরের গোলকিপার জীবনে বহু তারকা স্ট্রাইকারের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছি। আপ্পারাও, বেঙ্কটেশ, সালে, আমেদ, মেওয়ালাল, পিকে, বলরামের মতো চুনীর সামনেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছি ইস্টবেঙ্গল বা এরিয়ানে খেলার সময়। চুনী আমার অনেক পরে খেলতে এসেছিল ময়দানে। ছোট্ট ছেলে। দেখতে বেশ সুন্দর। আমি যেমন শৈলেন মান্নাদের সঙ্গে খেলেছি, তেমন চুনীর সঙ্গেও। ওর বিপক্ষে খেলেছি, ওর সঙ্গেও খেলেছি। কারণ দুই প্রধানে নয় বছর খেলার সুযোগ হয়েছিল আমার। ভারত এবং বাংলা দলেও খেলেছি। চুনীকে আমি একশোয় একশো দেব পাসার এবং ড্রিবলার হিসাবে। পায়ে বল পড়লেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠত। বেঙ্কটেশ, বদ্রু, মেওয়ালাল বা বলরামরা যেমন প্রতিপক্ষের গোলের সামনে এসে ওঁত পেতে থাকত, চুনী তা ছিল না। উইং ঘেঁষে খেলত। তবে ওর পায়ে বল পড়লেই লক্ষ্য রাখতাম কাকে বল দেবে, সে দিকেই। পাসটা এত নিখুঁত দিত যে, সেটা থেকে গোল করাই শুধু বাকি থাকত সতীর্থদের। ইস্টবেঙ্গল, এরিয়ান বা রেলে খেলার সময় ডিফেন্ডারদের বলতাম, ফাইনাল ট্যাকলে না যেতে। আমি নিজেও ওর সামনে একের বিরুদ্ধে এক অবস্থায় পড়ে গেলে গোল ছেড়ে এগোতাম না। ডেড বলে ও ছিল ড্রিবলিং করায় ওস্তাদ। প্রকৃত বল প্লেয়ার ছিল বলে অবলীলায় ছিটকে দিত ডিফেন্ডারদের।
মোহনবাগানে দীর্ঘ চার বছর খেলেছি চুনীর সঙ্গে। কিন্তু সখ্যতা কখনও গড়ে ওঠেনি। হয়তো বয়সের কারণে। তখন চুনী ছিল মোহনবাগানের ডায়মন্ড। রাজপুত্রও বলতে পারেন। সবাই ওকে ঘিরে থাকত। ওর সঙ্গে কথা বলার জন্য শুধু সদস্য-সমর্থকরাই নয়, অন্য ফুটবলাররাও মুখিয়ে থাকত।
আরও পড়ুন: ‘আজীবন নির্বাসন হোক উমর আকমলের, বাজেয়াপ্ত করা হোক যাবতীয় সম্পত্তি’
বলাইদাস চাটুজ্জে (চট্টোপাধ্যায়) ওকে নিয়ে এসেছিল মোহনবাগানে। আমরা সবাই ছোট দল খেলে এসেছি বড় ক্লাবে। কিন্তু ও সরাসরি। সেজন্য একটা আলাদা কদর ছিল। চুনী রোগাটে চেহারার হলেও বল পায়ে পড়লে গতিতে একের পর এক প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারকে টপকে যেত যখন, গ্যালারি উচ্ছ্বাসে ভেসে যেত। সামনাসামনি না দেখলেও আমার প্রয়াত স্ত্রীও চুনীর হাসিমুখের ফ্যান হয়ে পড়েছিল। পিকে-র মতো চুনী সবার সঙ্গে মিশতে পারত না। একটা আবরণ ছিল। মাঠে এবং মাঠের বাইরেও। আমি টুপি পরতাম রোদ এবং বৃষ্টি থেকে চোখকে বাঁচানোর জন্য। ময়দানে সবাই বলত এটা আমার স্টাইল। তা নয়। চুনীও নিজের পোশাক নিয়ে অত্যন্ত সচেতন থাকত। কখনও কারও সমালোচনা শুনিনি ওর মুখে। এই গুণটা ওর ড্রিবলিংয়ের মতোই অসাধারণ ছিল।
(সাক্ষাৎকার-ভিত্তিক অনুলিখন: রতন চক্রবর্তী)
আরও পড়ুন: রোহিতের সাফল্যের পিছনে অবদান ধোনির, দাবি গৌতম গম্ভীরের
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy