Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Cricket

অনিশ্চয়তার মহান খেলা, ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ওক্‌সের আগ্রাসনে জয় ছিনিয়ে নিল ইংল্যান্ড

ইংল্যান্ড-পাক সিরিজ শুরু হওয়ার আগে বিশেষজ্ঞেরা বলেছিলেন, লড়াই হবে ইংল্যান্ড ব্যাটিং বনাম পাকিস্তান বোলিংয়ের। ভুল বলেননি।

অদম্য: অবিশ্বাস্য জয়! ইংল্যান্ডের নায়ক ওক্‌সের উল্লাস। ছবি: গেটি ইমেজেস

অদম্য: অবিশ্বাস্য জয়! ইংল্যান্ডের নায়ক ওক্‌সের উল্লাস। ছবি: গেটি ইমেজেস

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২০ ০৬:০১
Share: Save:

আরও এক বার প্রমাণ হল, টেস্ট ক্রিকেটের মৃত্যু নেই। সুরের জগতে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত যেমন আজীবন থাকবে, তেমনই ক্রীড়াজগতে বিরাজ করবে টেস্ট ক্রিকেট। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে অসাধারণ এক টেস্ট ম্যাচ দেখলাম। পাকিস্তান ও ইংল্যান্ড দু’দলই যেন হারের আগে হারতে নারাজ। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে চতুর্থ দিনের শেষ দু’ঘণ্টায় পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচে তিন উইকেটে জয় ছিনিয়ে নিল ইংল্যান্ড। তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল ১-০।

ইংল্যান্ড-পাক সিরিজ শুরু হওয়ার আগে বিশেষজ্ঞেরা বলেছিলেন, লড়াই হবে ইংল্যান্ড ব্যাটিং বনাম পাকিস্তান বোলিংয়ের। ভুল বলেননি। প্রথম ইনিংসে শান মাসুদ ১৫৬ রানের ইনিংস খেললেও ওর ভঙ্গিতে কিন্তু মুগ্ধ হলাম না। পাক ব্যাটিংয়ের মূল শক্তি বাবর আজ়ম ভাল ব্যাট করলেও ইনিংসকে টানতে পারেনি। তবুও ৩২৬ রান করে ইংল্যান্ডকে চাপে ফেলেছিল পাকিস্তান। তার পর পাক পেসারদের সঙ্গে দুরন্ত পারফরম্যান্স দুই লেগস্পিনার ইয়াসির শাহ ও শাদাব খান চাপে ফেলে দিয়েছিল ইংল্যান্ডকে। একটা সময়ে তো মনেই হচ্ছিল, পাকিস্তানই জিতবে।

পাক ব্যাটিং দ্বিতীয় ইনিংসে এক সেশনে আট উইকেট হারিয়ে বিপদ ডেকে আনল। ২৭৭ রানের লক্ষ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে নড়বড়ে দেখাচ্ছিল দুই ওপেনারকে। রোরি বার্নসকে ফিরিয়ে মহম্মদ আব্বাস ধাক্কাও দিয়েছিল। কিন্তু জো রুটের স্পিন খেলার কৌশল ভোঁতা করে দিয়েছিল ইয়াসিরকে। প্রথম ইনিংস থেকেই যে লেগস্পিনারের বল বড় টার্ন করছে, দ্বিতীয় ইনিংসে তাকে সাবলীল ভাবে খেলল রুট। বলের উপরে গিয়ে স্পিনের মুখে ব্যাট এগিয়ে দিচ্ছিল রুট। যা করতে দেখা যেত সুনীল গাওস্করকে। রুট দেখিয়ে দিল, একজন ভাল লেগস্পিনারকে কী রকম টেকনিক নিয়ে সামলাতে হয়।

আরও পড়ুন: আমি নাইটদের সাপোর্ট করছি, বললেন আইপিএলে সেরা ডেলিভারির সেই নায়িকা

সেই ইয়াসিরই সিবলি ও রুটের জুটি ভেঙে ম্যাচের মোড় ঘোরায়। বেন স্টোকস-সহ দ্রুত চার উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে ইংল্যান্ড। এক ব্যাটসম্যান কম নিয়ে খেলা রুট হয়তো ভাবছিল, ফেরাটা কঠিন। ইস্পাতদৃঢ় মানসিকতা নিয়ে রুখে দাঁড়াল জস বাটলার ও ক্রিস ওক্‌স। এই জুটি অতিরিক্ত সাবধানী ছিল না। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্তই কিন্তু ওদের পক্ষে গেল। দু’জনেরই টেস্ট সেঞ্চুরি আছে। ওক্‌স আট নম্বরে এত দিন ব্যাট করলেও সাত নম্বরেও সাবলীল দেখিয়েছে। আক্রমণ করেছে তরুণ পেসার নাসিম শাহকে। পাঁচ উইকেট হারানোর পরে সাধারণত বিপক্ষের বোলাররা মাথায় চড়ে বসে। বাটলার ও ওক্‌স সেটা করতে দেয়নি। ওদের আগ্রাসী ভঙ্গি পাক শিবিরকে পাল্টা চাপ ফেলে দিল। ১৩৯ রানের জুটি গড়ে অসম্ভব টেস্ট জয়কে সম্ভব করে দেখাল এই দু’জনে।

পাক অধিনায়ক আজ়হার আলির নেতৃত্বও অবাক করল। চা বিরতির পরে ইয়াসির শাহ ও শাদাব খানকে দিয়ে বল করানো উচিত ছিল। দুপুরের দিকে বল বেশি সুইং করছে না। তবুও আব্বাস ও নাসিমকে দায়িত্ব দিল ম্যাচ ঘোরানোর। বাটলার ও ওকস তার ফায়দা তুলে উইকেটে থিতু হয়ে রানের গতি বাড়াতে থাকে। ওকসের মতো বোলিং অলরাউন্ডার প্রত্যেকটি ক্রিকেটীয় শট খেলে অবিশ্বাস্য ৮৪ রানের ইনিংস গড়েছে। ইংল্যান্ড বুঝিয়ে দিল, শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করে কী ভাবে একটা কঠিন ম্যাচ জেতা যায়। পাক পেসারদের মধ্যে নাসিমের গতি মুগ্ধ করলেও লাইন ও লেংথে অনেক উন্নতি করতে হবে।

স্কোরকার্ড

পাকিস্তান ৩২৬ ও ১৬৯

ইংল্যান্ড ২১৯ ও ২৭৭-৭

পাকিস্তান (দ্বিতীয় ইনিংস, আগের দিন ১৩৭-৮ এর পরে)

ইয়াসির শাহ ক বাটলার বো ব্রড ৩৩ • ২৪

মহম্মদ আব্বাস নট আউট ৩ • ৭

নাসিম শাহ বো আর্চার ৪ • ৩

অতিরিক্ত ১৩

মোট ১৬৯ (৪৬.৪)

পতন: ৯-১৫৮ (ইয়াসির, ৪৫.৫), ১০-১৬৯ (নাসিম, ৪৬.৪)।

বোলিং: জেমস অ্যান্ডারসন ৯-২-৩৪-০, স্টুয়ার্ট ব্রড ১০-৩-৩৭-৩, জোফ্রা আর্চার ৬.৪-০-২৭-১, ডম বেস ১২-২-৪০-১, ক্রিস ওক্‌স ৫-১-১১-২, বেন স্টোকস ৪-১-১১-২।

ইংল্যান্ড (দ্বিতীয় ইনিংস)

রোরি বার্নস এলবিডব্লিউ আব্বাস ১০ • ২৮

ডম সিবলি ক শফিক বো ইয়াসির ৩৬ • ১১৪

জো রুট ক বাবর বো নাসিম শাহ ৪২ • ৮৪

বেন স্টোকস ক রিজওয়ান বো ইয়াসির ৯ • ২০

অলি পোপ ক শাদাব বো শাহিন আফ্রদি ৭ • ১৮

জস বাটলার এলবিডব্লিউ ইয়াসির ৭৫ • ১০১

ক্রিস ওক্‌স নট আউট ৮৪ • ১২০

স্টুয়ার্ট ব্রড এলবিডব্লিউ ইয়াসির ৭ • ৯

ডম বেস নট আউট ০ • ৪

অতিরিক্ত ৭

মোট ২৭৭-৭ (৮২.১)

পতন: ১-২২ (বার্নস, ১১.১), ২-৮৬ (সিবলি, ৩৫.৬), ৩-৯৬ (রুট, ৩৮.৪), ৪-১০৬ (্স্টোকস, ৪১.৬), ৫-১১৭ (পোপ, ৪৪.৫), ৬-২৫৬ (বাটলার, ৭৭.৫), ৭-২৭৩ (ব্রড, ৮১.২)।

বোলিং: শাহিন শাহ আফ্রিদি ১৫.১-১-৬১-১, মহম্মদ আব্বাস ১৬-৪-৩৬-১, নাসিম শাহ ১৩-৪-৪৫-১, ইয়াসির শাহ ৩০-২-৯৯-৪, শদাব খান ৮-০-৩৪-০।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy