স্বপ্ন: বাংলার হাতে ট্রফি দেখতে চান দেবু মিত্র। ফাইল চিত্র
আমদাবাদ শহরের বুকে বয়ে যাচ্ছে সবরমতী নদী। বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে হাইওয়ের রাস্তা ধরে রাজকোটের দিকে এগোনর পথে নজরে পড়ল এক ঝাঁক নিরাপত্তারক্ষী। কিন্তু কিসের সাবধানতা? ক্যাব ড্রাইভারের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেল, গুজরাতে সন্ত্রাসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে তাই আমদাবাদ পরিদর্শনে এসেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
আমদাবাদ থেকে রাজকোট যাওয়ার রাস্তা যেন ক্যানভাসে আঁকা কোনও ল্যান্ডস্কেপ। পড়ন্ত বিকেলে সূর্যের আলো এসে পড়ছে ধানক্ষেতে। ফাঁকা মাঠে চলছে ক্রিকেট। কোথাও ফুটবল। আমদাবাদ থেকে রাজকোটের দূরত্ব ২৪০ কিলোমিটার। সড়কপথে সময় লাগে সাড়ে চার ঘণ্টা। বাংলা ও রঞ্জি ট্রফির মাঝে দূরত্ব একটি ম্যাচের। সোমবার সৌরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ১৩ বছর পরে ৩০ বছরের স্বপ্ন ফিরিয়ে আনার লড়াই শুরু হবে অনুষ্টুপ মজুমদার, ঈশান পোড়েলদের।
বাংলা যে রকম দলীয় সংহতিতে বিশ্বাসী, বিপক্ষ সৌরাষ্ট্রেরও ফর্মুলা একই। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেট মানচিত্রে সৌরাষ্ট্রের উত্থান কী ভাবে? কী করেই বা উঠে এলেন চেতেশ্বর পুজারা, জয়দেব উনাদকাট, রবীন্দ্র জাডেজাদের মতো তারকা? নেপথ্যে এক বাঙালির অবদান অনস্বীকার্য। তিনি দেবু মিত্র। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ছোটবেলার কোচ, প্রায় দশ বছর প্রশিক্ষণ দিয়েছেন সৌরাষ্ট্রকে। যেখানে একটি জেলার ম্যাচ খেলেই রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ খেলার সুযোগ পাওয়া যেত। সেখানে এখন রীতিমতো ট্রায়াল ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে বেছে নেওয়া হয় যোগ্য ১৫জনকে। আনন্দবাজারকে সৌরাষ্ট্রকে ভারতীয় ঘরোয়া ক্রিকেটের মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করার কারিগর বলছিলেন, ‘‘আমি যখন এসেছিলাম, তখন ক্রিকেটের পরিকাঠামোই ছিল না। নিরঞ্জন শাহ যদিও আমাকে প্রচণ্ড সাহায্য করেছে। তিন দিনের ম্যাচ আয়োজন করেছি। বাইরের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। ধীরে ধীরে এ ভাবেই তৈরি হয়েছে বড় দলকে হারানোর মানসিকতা।’’
বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটারের হাতেই তৈরি পুজারা, উনাদকাটরা। অনূর্ধ্ব-১৯ প্রতিযোগিতায় একটি ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন ভারতীয় টেস্ট দলের অন্যতম ভরসা। ব্যাটিং দেখে পুজারাকে রঞ্জি দলের নেটে ডেকেছিলেন দেবু। টেকনিক ও ধৈর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনি। সেই প্রসঙ্গ টেনে বলছিলেন, ‘‘পুজারা ও জাডেজা, দু’জনেই অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে উঠেছে। আমরা যখন প্লেট গ্রুপে খেলি, তখন অভিষেক হয়েছিল পুজারার। ২০০৫-’০৬ মরসুমে প্লেট গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে আর ঘুরে তাকাতে হয়নি।’’
২০১৩ থেকে ২০২০-র মধ্যে মোট চার বার রঞ্জির ফাইনালে উঠেছে সৌরাষ্ট্র। প্রথম বার দলকে ফাইনালে তোলার মূল কান্ডারি ছিলেন তিনি। বলছিলেন, ‘‘২০১৩ সালে দলকে ফাইনালে তুলি। কিন্তু মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে হেরে গিয়েছিলাম। ওদের পিছনে পরিশ্রম করার ফল যদিও পেয়েছি।’’
এই পুজারা কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারেন, তা জানে ক্রিকেটবিশ্ব। অসম্ভব ধৈর্য। রান করার কোনও তাড়া নেই। এ ধরনের ব্যাটসম্যানকে কী করে পরাস্ত করবে বাংলা? দেবুর পরামর্শ, ‘‘পুজারাকে আউট করতে হলে শুরু থেকেই আক্রমণ করতে হবে। ওকে দ্রুত ফিরিয়ে দিতে পারলেই বাজিমাত করবে বাংলা।’’ যোগ করেন, ‘‘পুজারার ইনসুইংয়ে সমস্যা আছে। ইদানীং ওর মাথাটা আগেই পড়ে যাচ্ছে। তাই ব্যাট ও পায়ের মধ্যে ফাঁক তৈরি হচ্ছে। তারই ফায়দা তুলেছিল ট্রেন্ট বোল্ট। বাংলার আকাশ দীপ, ঈশান পোড়েলদের এই কাজটাই করতে হবে।’’
এ বার আসা যাক উনাদকাট প্রসঙ্গে। তাঁকেও অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে তুলে এনেছিলেন দেবু। বলছিলেন, ‘‘সুইংই ওর অস্ত্র। ছোটবেলা থেকে দেখছি একটা কোণ থেকে বল করার চেষ্টা করে। একটি বল সুইং করে, একটি করে না। যে বলটি সুইং করে না, সেটাই বেশি ভয়ঙ্কর। এ ভাবেই উইকেট পেয়ে আসছে জয়দেব। তা ছাড়া ওর স্লোয়ারও দারুণ। আঙুলের এমন ব্যবহার করে যাতে ব্যাটসম্যান ধরতে না পারে।’’
সৌরাষ্ট্রের এসসিএ স্টেডিয়ামের উইকেট যদিও প্রয়োজন অনুযায়ী বানানো যায়। দেবুর কথায়, ‘‘সেমিফাইনালে গুজরাতের বিরুদ্ধে গতিময় পিচে খেলেছিল সৌরাষ্ট্র। বাংলার বিরুদ্ধে এই ভুল একেবারেই করবে না। ব্যাটিং পিচেই পরীক্ষা দিতে হবে ঈশানদের। পুজারাকে ফাইনালে পাচ্ছে। সেই ফায়দা তো তুলতেই হবে ওদের।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বাংলা যদি গতিময় পিচ পায়, তা হলে রঞ্জি জয়ের স্বপ্ন আর অধরা থাকবে না।’’
তিনি নিজে কার হাতে কাপ দেখতে চান? দেবুর উত্তর, ‘‘বাংলার হয়ে খেলেছি কোচিংও করিয়েছি। এ দিকে সৌরাষ্ট্রের উত্থানের নেপথ্যেও আমি। কিন্তু যতই পুজারাদের তৈরি করি না কেন, আমার মন পড়ে আছে বাংলাতেই। মরসুমের লড়াই শেষে অভিমন্যুর হাতেই রঞ্জি ট্রফিটা
দেখতে চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy